প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২১, ০০:০০
পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে বাস শ্রমিকরা তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি সুসংগঠিত। এরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মালিকদের স্বার্থরক্ষায় যে কোনো কর্মসূচির হুঙ্কার দিলে সরকারের টনক নড়ে। আবার এরা নিজেদের দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কর্মসূচি দিলে মালিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এ শ্রমিকরা কোনো কারণে খেপে গেলে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া, ভাংচুর করা সহ ধ্বংসাত্মক কাজ করতে খুব একটা ভাবে না। অথচ বাস চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এই শ্রমিকরা করোনাকালীন গত ১৫ মাসে তাদের দুঃখ-দুর্দশায় কাছে পায়নি মালিক সমিতিকে, এমনকি মালিকদের হিসেবের খাতায় বিশেষ স্থানে থাকা শ্রমিক নেতাদেরকেও পাশে পায়নি। কিছু বাস মালিক ব্যতিক্রমী আচরণে শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশায় কম-বেশি এগিয়ে আসলেও সেটি উল্লেখ করার মতো নয়।
গত বুধবার চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে চাল দেয়া হয় চাঁদপুরের বাস শ্রমিকদের। সেখানে উপস্থিত চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ক’জন শ্রমিকের। তারা জানালেন তাদের কষ্টের কথা। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, এই দুঃসময়ে আমাদের পাশে মালিক পক্ষের কেউ নেই। বাস মালিক সমিতির সভাপতি কিংবা সেক্রেটারী কেউ আমাদেরকে সহযোগিতা করা দূরের কথা, খবরও নেননি। তারা জানান, বাস শ্রমিকদের সহায়তার জন্যে শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড নামে একটা ফান্ড আছে, সেখান থেকেও তাদেরকে কোনো সহায়তা এ পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আর শ্রমিক নেতারা তো আছেন অনেকটা আত্ম গোপনে।
প্রথমে এক বা একাধিক বাস কিনে একজন মালিক লাভের মুখ দেখেন প্রধানত ভালো শ্রমিকের কারণেই এবং তারপর তিনি পরিবহন ব্যবসায় বাসের সংখ্যা বাড়ান। আবার খারাপ শ্রমিকের কারণে কোনো কোনো বাস মালিক তার ব্যবসাই গুটিয়ে ফেলেন। তবে এমন মালিকের সংখ্যা খুব একটা বেশি নয়। পরিবহন ব্যবসা মানেই শ্রমিক নির্ভর ব্যবসা। সেজন্যে শ্রমিকরা এই ব্যবসার ক্ষেত্রে মুখ্য একটা বিষয়। বাস চালাতে গিয়ে ঘাটে ঘাটে যে চাঁদা দিতে হয়, তাতে মালিক সমিতির বিভিন্ন খাতের চাঁদা, পুলিশকে ম্যানেজ করার চাঁদাসহ শ্রমিকদের সংগঠন ও কল্যাণ ফান্ডের চাঁদাই থাকে মুখ্য। এসব চাঁদা তোলা ও জমা দেয়ার ক্ষেত্রে শ্রমিকরাই প্রধান সহায়ক। কথিত আছে, নির্দিষ্ট সময় পর পর এসব চাঁদার বৃহদাংশের ভাগ পর্যায়ক্রমে পায় একেকজন মালিক। তারা এ চাঁদা তাদের ভোগ-বিলাসে ব্যয় করেন। অথচ শ্রমিকরা এই চাঁদার ভাগ মালিকদের ন্যায় পাওয়া তো দূরের কথা, তাদের কেউ দুর্ঘটনা কবলিত হলেও যথাযথভাবে পায় না। মাঝে মাঝে শ্রমিকদের ক’জনকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে কল্যাণ ফান্ড থেকে যে সহায়তা করা হয়, তাতে শোডাউনই থাকে মুখ্য।
পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে গত ১৫ মাসের করোনাকালে বাস শ্রমিকরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কর্মহীন হয়ে সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে কেটেছে তাদের জীবন। কেউ কেউ রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি চালিয়েছে কিংবা দিনমজুরের কাজও করেছে। এমতাবস্থায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উদ্যোগ নিয়ে সংগঠনের তহবিল, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড ও মালিকদের থেকে সংগৃহীত অর্থ দিয়ে কর্মহীন বাস শ্রমিকদের পাশে কম-বেশি সহায়তা প্রদানে এগিয়ে আসা উচিত ছিলো। এতে তাদের নেতৃত্বের ইতিবাচকতা ও কল্যাণকর দিকটি প্রকাশ পেতো। কিন্তু সেটি তারা করেনি বললেই চলে, যেটা অনেক কষ্ট ও ক্ষোভের বিষয়। মনে রাখতে হবে, করোনা মহামারী দীর্ঘকাল থাকবে না, তবে এই কষ্ট ও ক্ষোভ অধিকাংশ শ্রমিকের হৃদয়ে যে কালো দাগ সৃষ্টি করেছে, সেটা কিন্তু সহজে মুছবে না।