প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সপ্রাবি)-এর পরিচালনা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ বা মনিটরিংয়ের জন্যে উপজেলা শিক্ষা অফিসের আওতায় ক্লাস্টার অনুযায়ী সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার (এইউইও, বহুল পরিচিত সাবেক পদবী এটিইও) রয়েছে। যেমনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে নেই। যার ফলে উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সামগ্রিক পরিচালনা কার্যক্রম মনিটরিং হয় না বা সম্ভব হয় না। ম্যানেজিং কমিটি ভালো হলে কিংবা প্রধান শিক্ষক চৌকষ হলে সেল্ফ মনিটরিং ভালো হয়। অন্যথায় মনিটরিংয়ের অভাবে কোনো কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্রমশ রসাতলে যায়। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার সপ্রাবিগুলোতে সাধারণত যথাযথ মনিটরিং হয় না। সেজন্যে দেখা যায়, প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকগণের কেউ কেউ নিজের খেয়াল খুশিমত স্কুলে আসে এবং যায়। এদের কেউ যদি শিক্ষক সংগঠনের নেতা হয়ে থাকেন, তাহলে তো কথাই নেই। তার জন্যে প্রতিদিন স্কুলে আসার বাধ্যবাধকতা সাংগঠনিক শক্তির জোরে শিথিল হয়ে যায়। তাকে প্রধান শিক্ষক ‘এইউইও’ কিছু বলা তো দূরের কথা, উপজেলা শিক্ষা অফিসার কিছু বলতে বিব্রত বোধ করেন। তিনি নিজের ইচ্ছেমত ক’দিন পর পর স্কুলে আসেন এবং হাজিরা খাতায় বকেয়া ও নগদ স্বাক্ষর তো করেনই, এমনকি অগ্রিম স্বাক্ষরও করেন। গড়ে সব শিক্ষক নেতার চরিত্র এমন, সেটা বলার সুযোগ নেই। তবে কেউ কেউ বা অনেকে সাধারণত এমন চরিত্রের অধিকারী-সেটা বলার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় ‘এইউইও’দের কেউ কেউ টুপাইস পেয়ে কিছু প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের অনিয়মগুলো চেপে যান।
তুলনামূলকভাবে পর্যাপ্ত মনিটরিং কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের গর হাজির ও অনিয়মে কিছু সপ্রাবির চিত্র যখন করুণ হয়ে যায়, তখন খুব কম উপজেলা শিক্ষা অফিসারকেই আকস্মিক পরিদর্শন বা সারপ্রাইজ ভিজিটে যেতে দেখা যায়। হ্যাঁ তারা তখন যান, যখন কোনো সপ্রাবির বার্ষিক ক্রীড়া বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করে উপহৃত করার নিশ্চয়তা দেয়া হয়। এটা সারাদেশে সপ্রাবিকেন্দ্রিক উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের একেবারে সাধারণ আচরণ হিসেবে দৃশ্যমান। অসাধারণ আচরণের উপজেলা শিক্ষা অফিসার একেবারে বিরলদৃষ্ট।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারগণ কিংবা তাদের সহকর্মীরা তাদের আওতাধীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাইস্কুল এন্ড কলেজ ও মাদ্রাসা পরিদর্শনে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ইউইও, সাবেক বহুল পরিচিতি পদবী টিইও)দের চেয়ে ব্যতিক্রম আচরণ সাধারণত করেন না। সোজা কথা, কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি করা হলে কিংবা হাত ধোয়ার মতো কিছু কাজ থাকলে স্কুল-মাদ্রাসায় যান, অন্যথায় কোনো অনিয়ম ও অভিযোগের তদন্ত করার প্রয়োজনে যান। এর বাইরে আকস্মিক পরিদর্শনের ঘটনা দেখা যায় না বললেই চলে।
গত শুক্রবার (১৮ মার্চ ২০২২) চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, হাজীগঞ্জ উপজেলার ১০নং গন্ধর্ব্যপুর ইউনিয়নে অবস্থিত দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থা চলছে একাধারে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতির কারণে। এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেছেন, স্কুলটির বিষয়ে আমি জেনেছি, বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলার শিক্ষা ও আইসিটি বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেছেন, এমন কিছু হয়ে থাকলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সত্যি কথা বলতে কি, শুধু দেশগাঁও জয়নাল আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয় নয়, এমন চিত্র অন্য অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয়-মাদ্রাসায় বিদ্যমান। দেখার জন্যে কেউ কেউ থাকলেও তারা তা সঠিকভাবে দেখেন না। নিশ্চয়ই তারা যানবাহন সঙ্কটসহ আরো কিছু অজুহাত দাঁড় করাতে মোটেও কসুর করেন না। এক্ষেত্রে সরকারি যানবাহন প্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার কিংবা তার সহকর্মীরা সপ্তাহে একদিন সারপ্রাইজ ভিজিট করে যে কিছু স্কুল-মাদ্রাসার সামগ্রিক গতিশীলতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবেন, সেটিও খুব একটা দেখা যায় না। কারণ, তাদের অনেকেরই অতিরিক্ত একটি হাত আছে, সেটি হচ্ছে অজুহাত। এই হাতটি অপসারণে তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কাউকেও ভূমিকা রাখতে দেখা যায় না, সত্যিই যেটি অনেক দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক।