প্রকাশ : ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
যথার্থভাবে স্মরণ করা হোক মিজানুর রহমান চৌধুরীকে
চাঁদপুরের ষোড়শ (১৬তম) জেলা প্রশাসক প্রিয়তোষ সাহা সম্পাদিত ‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ নামের গ্রন্থের ষোড়শ অধ্যায়ে লিখা হয়েছে চাঁদপুরের স্মরণীয় এবং কৃতী ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে। এ অধ্যায়ের ভূমিকায় লিখা হয়েছে, প্রত্যেক দেশে, প্রত্যেক অঞ্চলে এবং প্রত্যেক শতাব্দীতে কিছু মানুষ পাওয়া যায় যাঁরা মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। চাঁদপুর জনপদের শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোর মাঝেও বিভিন্ন সময়ে অনেক ব্যক্তিই আবির্ভূত হয়েছেন, যাঁরা নিজ এলাকার, নিজ সম্প্রদায়ের, নিজ সমাজের, নিজ জাতির বা সামগ্রিকভাবে দেশের উন্নয়ন, সংস্কার ও জনকল্যাণ কাজকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ..........এমন ভূমিকা সম্বলিত অধ্যায়ের প্রথমে যে স্মরণীয় ও কৃতী ব্যক্তিকে নিয়ে লিখা হয়েছে, তিনি হচ্ছেন মিজানুর রহমান চৌধুরী। যাঁর সহজ পরিচয় হচ্ছে, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
|আরো খবর
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে মিজানুর রহমান চৌধুরী ছিলেন সপ্তম। তাঁর পূর্বে তাজউদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মোঃ মনসুর আলী, মশিউর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান ও আতাউর রহমান খান প্রধানমন্ত্রী পদে বিভিন্ন মেয়াদে দায়িত্বপালন করেন। মিজানুর রহমান চৌধুরীর পরবর্তীতে উক্ত পদে মওদুদ আহমেদ ও কাজী জাফর আহমেদের স্বল্পকালীন দায়িত্বপালনের পর খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পান। মিজানুর রহমান চৌধুরী এরশাদের জাতীয় পার্টির শাসনামলে ১৯৮৬ সালের ৯ জুলাই থেকে ১৯৮৮ সালের ২৭ মার্চ পর্যন্ত ১ বছর ৮ মাস ১৮ দিন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ গ্রন্থে মিজানুর রহমান চৌধুরী সম্পর্কে সবচে’ বেশি লিখা হয়েছে। এর সূচনাটি এমন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মরহুম মিজানুর রহমান চৌধুরী ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব। আকর্ষণীয়, রসাত্মক অথচ জ্ঞানগর্ভ বাগ্মিতা ও অপূর্ব সাংগঠনিক দক্ষতা তাঁকে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ব্রিটিশ ভারতে তাঁর রাজনীতি শুরু। পাকিস্তান আমলে তিনি ছিলেন একজন প্রতিবাদী রাজনীতিক। আর স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন জনপ্রিয় জননেতা ও দেশগড়ার সুদক্ষ কারিগর রূপে। রাজনীতির তিন কালে তিনি কখনো কর্মী, কখনো সংগঠক, কখনো নেতৃত্বে, আবার কখনো ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছেন। অর্ধ শতকের অধিককালের বৈচিত্র্যময় ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী এ কীর্তিমান রাজনীতিকের স্মৃতির ভা-ার পরিপূর্ণ ছিলো মূল্যবান অভিজ্ঞতায়। তিনি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পর্টির দুর্দিনে কা-ারীর ভূমিকা পালন করায় তাঁকে রাজনৈতিক বোদ্ধারা ‘ক্রাইসিস লিডার’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
মিজানুর রহমান চৌধুরী আটবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, যেটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বিরল ঘটনা। তিনি ১৯২৮ সালের ১৯ অক্টোবর চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার এলাকার পূর্ব শ্রীরামদী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পারিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৭৭ বছর ৩ মাস ১৩ দিন বয়সে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন। তাঁকে তাঁর ইচ্ছানুযায়ী বাবা-মা’র কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।
আজ মিজানুর রহমান চৌধুরীর ষোড়শ মৃত্যুবার্ষিকী। এ মৃত্যুবার্ষিকী পালনে তাঁর পরিবার ও মিজান চৌধুরী স্মৃতি সংসদ সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করলেও দলীয়ভাবে গ্রহণ করা হয়নি তেমন কর্মসূচি। বস্তুত এমনটি রাজনীতির কালজয়ী ব্যক্তিত্বদের স্মরণে যথাযথ আচরণ নয়। বর্তমান প্রজন্মকে বিশেষ করে উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে মিজানুর রহমান চৌধুরীর মতো বিশাল ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা দিতে দলীয়ভাবে কাক্সিক্ষত কর্মসূচি প্রয়োজন। কিন্তু এমন কর্মসূচি প্রণয়নে কারো না কারো মানসিক দৈন্যতা সক্রিয় এবং উদারতার অভাব প্রকট। এ অভাব দূর করা বাঞ্ছনীয়।
বলা দরকার, মিজানুর রহমান চৌধুরীর পূর্ব পুরুষদের কারো কারো নামে এবং তাঁর বাবা-মা’র নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। তাঁর নামে চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি মোড় থেকে চৌধুরী জামে মসজিদ পর্যন্ত সড়কটিকে মিজানুর রহমান চৌধুরী সড়ক করা হয়েছে। এছাড়া তাঁর স্মৃতি রক্ষার্থে কোনো স্থাপনা বা স্মারক স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়নি কেউ। এটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। আমরা এ ব্যাপারে কাউকে না কাউকে উদ্যোগ নেয়ার জন্যে জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।