প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত মাদক সংক্রান্ত দুটি সংবাদে পাঠকরা বিস্মিত হয়েছে। একটির শিরোনাম হয়েছে ‘মাদক সেবনকালে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতিসহ আটক ৩’ এবং অপরটির শিরোনাম হয়েছে ‘মাদক মামলার আসামী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক’। ক্ষমতাসীন বা শাসক দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃত্ব পর্যায়ের কারো এমন মাদক সংশ্লিষ্টতায় নানা প্রশ্নের উদ্রেক হওয়া স্বাভাবিক।
প্রথম সংবাদে লিখা হয়েছে, ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৭ নম্বর সহ-সভাপতি মাঈনুদ্দিন আরিফ সুমনসহ ৩জনকে আটক করেছে পুলিশ। গত ২৮ জানুয়ারি শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় চাঁদপুর শহরের নাজিরপাড়া ছৈয়াল বাড়ি রোডস্থ ট্যাগ ব্যাগ এজেন্সি থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ইয়াবা সেবনরত অবস্থায় সরঞ্জামাদিসহ চাঁদপুর সদর মডেল থানার এক এসআই তাদেরকে আটক করেন। এদের মধ্যে মাঈনুদ্দিন আরিফ সুমনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে রাজনৈতিক পরিচয়ে অনেকে তদবির করেন। কিন্তু পুলিশ এ তদবিরে সাড়া না দিয়ে শনিবার তাদেরকে আদালতে প্রেরণ করে। এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হেলাল হোসাইন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে আমরা জিরো টলারেন্সে। আমাদের সংগঠনের কারো যদি মাদকের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ৩০ জুলাই চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যে কমিটিকে কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন দেয়, তাতেই মোঃ মাঈনুদ্দিন আরিফ সুমন ৭নং সহ-সভাপতি হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন। অথচ এ কমিটির মেয়াদ ছয় মাস যেতে না যেতেই তার মাদক সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় কমিটিতে তার অন্তর্ভুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
‘মাদক মামলার আসামী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক!’ শীর্ষক অপর সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন আলীগঞ্জ বাজারস্থ মজুমদার বালুরঘাট এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ অভিযানে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দক্ষিণ পাশের পাকা রাস্তায় একটি প্রাইভেট কার তল্লাশি করে ৪৮ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। এ সময় প্রাইভেট কার চালক আলমগীর হোসেনকে আটক এবং মাদক সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। অভিযান চলাকালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে হাবিবুর রহমান হিটু ও মেয়েদী হাছান জুয়েল নামে দুজন পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে হাবিবুর রহমান হিটু (৪০) হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নের সুহিলপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির মোঃ নোয়াব আলী হাওলাদারের ছেলে। যাকে থানায় দায়েরকৃত মামলায় দ্বিতীয় আসামী করা হয়েছে। মাদকের সাথে হাজীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত একজন সাবেক নেতার সংশ্লিষ্টতায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের স্বীকৃত ৭টি সহযোগী সংগঠনের অন্যতম হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। আর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হচ্ছে ছাত্রলীগ। চাঁদপুর ও হাজীগঞ্জে এ দুটি সংগঠনের বর্তমান ও সাবেক দু নেতার মাদক সংশ্লিষ্টতায় আটক হওয়া কিংবা মামলার আসামী হওয়া নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। আমরা মনে করি, এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থার পাশাপাশি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়াও জরুরি। অন্যথায় ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার বিষয়টি এড়ানো যাবে না।