সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২১, ০০:০০

ভয়াবহ সমস্যা সহজ সমাধান

মাহবুব আনোয়ার বাবলু

অনলাইন ডেস্ক
ভয়াবহ সমস্যা সহজ সমাধান

বড় বড় লেখকদের অসংখ্য ভক্ত থাকে। তারা যদি কিছুদিন লেখালেখি না করেন তাহলে তাদের ভক্তরা ফোন করে বলে, ‘স্যার লিখছেন না কেন?’ পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হয়, অমুক লেখক দীর্ঘদিন যাবৎ লিখছেন না। পাঠকরা বঞ্চিত হচ্ছে, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি বড় লেখক না। মফস্বলের চুনোপুঁটি। তবে মফস্বলের পত্রিকায় আংসাং কিছু লেখা লিখতাম। আমার অখাদ্য লেখা দিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের ভেতরের পাতা অনেক নষ্ট করেছি। কিন্তু গত ১ বছর ধরে আমি কিছু লিখছি না। লিখছি না মানে লিখতে পারছি না। রাতে মাথায় কিছু থিম আসে, সকালে কাগজ কলম নিয়ে বসি, কিন্তু দেখি কিছুই মাথায় নেই। মাথা ভর্তি নিরমা সাবানের ফেনা ছাড়া কিছুই নেই। আমার মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। আমি না লিখলে বিশ্বসংসার রসাতলে যাবে না, তা জানি। তবে বেশ ক’দিন ধরে লক্ষ্য করছি আমার লেখারও দু-চারজন ভক্ত আছে। কেউ বলছে, ‘কি বাবলু ভাই, লিখছেন না কেন?’ কেউ বলছেন, ‘কি বাবলু পত্রিকায় তোমার লেখা-টেখা দেখছি না কেন?’ তাদেরকে আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না।

প্রিয় পাঠক, আসলে আমি লিখবো কিভাবে, লিখতে পারছি না। আমার প্রিয়দর্শিনী স্ত্রী আমার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে বরাবরই সন্দিহান। এখন আমি নিজেও সন্দিহান। এবার আষাঢ়ের প্রথম দিন থেকেই অনবরত বৃষ্টি হচ্ছে। তো প্রতিদিনই ছাতা নিয়ে বের হই, বৃষ্টি হোক বা না হোক। এরই মধ্যে এক সন্ধ্যায় কালীবাড়ি গেলাম। দু-তিন জায়গায় বসে আড্ডা মারলাম। রাত ৯টায় অটো চেপে বসলাম। মিশন রোডের পূর্ব মাথায় নামতেই ঝুপ ঝুপ করে বৃষ্টি শুরু হলো। এখান থেকে চল্লিশ স্টেপ হেঁটে আমার বাসায় যেতে হবে। লক্ষ্য করলাম আমার হাতে ছাতা নেই। হায় এখন কী করি। কোথায় রেখে এসেছি ছাতা। কাক ভেজা হয়ে বাসায় যেতে পারি, কিন্তু আমার স্ত্রী হামলে পড়বে আমার ওপর-‘ছাতা কোথায় রেখে এসেছো?’। অগত্যা লম্ফ ঝম্ফ দিয়ে কালীবাড়ির দিকের একটা অটোতে উঠলাম, যে তিন জায়গায় বসেছি সেখানে যাবো। বৃষ্টি তখন থেমে গেছে। প্রথমেই গেলাম রেলওয়ে বুকস্টলে। এখানে বসেছিলাম। কবি জসিম মেহেদীর দোকান। তাকে জিজ্ঞেস করলাম ‘মামা! আমার ছাতাটা কি রেখে গেছি?’ জসিম মেহেদী দার্শনিকসুলভ ভঙ্গিতে উদাস কণ্ঠে বললো, ‘ছাতা হারিয়েছেন?’ বললাম ‘হ্যাঁ’। ‘মামা! টাকা, নারী আর বর্ষাকালে ছাতা হারালে আর পাওয়া যায় না। সোজা বাসায় চলে যান।’ তার এই উচ্চ মার্গীয় দর্শন উপেক্ষা করতে পারলাম না আমি। আর কোথাও খুঁজলাম না ছাতা। অটোতে করে বাসায় ফিরলাম। মিশন রোডের মাথায় নেমে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরছি। ঝুপ ঝুপ আবার বৃষ্টি। কাক ভেজা হয়ে বাসায় ফিরলাম। আমার সুন্দরী স্ত্রী রুদ্রমূর্তি ধারণ করে বললো, ‘ভিজেছো কেন এখন তো জ্বর উঠবে।’ বললাম, ‘আমার ছাতাটা হারিয়ে ফেলেছি।’ ঠিক তখনই আমার কিশোর ছেলে কুন্তল হাসি মুখে আমার ছাতাটা হাতে নিয়ে এসে বললো, ‘ছাতা হারায়নি, আজ বেরুবার সময় ছাতা নাওনি।’ বুঝুন অবস্থা।

আরেকটা ছোট নমুনা দিচ্ছি। ঘর থেকে বেরুবো, আতিপাতি করে আমার চশমাটা খুঁজছি। আমার ছেলে কুন্তল বললো, ‘কী খুঁজছো, বাবা?’ বললাম, ‘আমার চশমাটা’। সে হেসে বলল, ‘চোখে হাত দাও।’ আমি চোখে হাত দিয়ে দেখি চশমা চোখেই আছে। আরেকদিনের ভয়াবহ ঘটনা। আমি বরাবরই বাথরুমে দিগম্বর হয়ে গোসল করি। সেদিনও করলাম। তারপর তোয়ালে দিয়ে গা মুছে, লুঙ্গি না পরেই বাথরুমের দরজা খুলে ফেললাম এবং জন্মদিনের পোশাকে এক পা বেরিয়ে গেল। ঠিক তখনই আমি সম্বিৎ ফিরে পেলাম। ঘরভর্তি মেহমান। মুহূর্তে বাথরুমে ঢুকলাম। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি। কিন্তু আমার বহুদূর সম্পর্কের ভাতিজা, বয়স ৮/৯ বছর, সে বললো, ‘চাচু আমি দেখে ফেলেছি। কিন্তু কাউকে এখনো বলিনি’। তার মানে নিকট ভবিষ্যতে বলবে। আমি তাকে দোকানে নিয়ে চকোবার খাওয়ালাম। বললাম ‘কাউকে বলবে না-তো?’ সে বললো, ‘একটা চিপস কিনে দাও পনের টাকা দামের।’ চিপস দিলাম। মনে মনে বললাম, ‘হারামজাদা একটা’।

এই হলো আমার মানসিক অবস্থা। মস্তিষ্কের অবস্থা। মাথাটা আউলা হয়ে গেছে। আমার ভাগ্নির কাছে ফোন করলাম। মিস কল দিয়েছি। আমার স্মার্ট ফোন নেই। নাম্বারেই কল দিয়েছি। সে ব্যাক করবে। কথা বলার মতো অত টাকা আমার মোবাইলে নেই। সে থাকে নিউইয়র্কে। সেখানে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাবনরমাল সাইকোলজি পড়ায়। আমার ফোন পেয়ে আনন্দে চিৎকার চেঁচামেচি। ‘কেমন আছো মামা? আমাদের এখানে এখন কোভিড নেই, তোমাদের অবস্থা কী?’ ইত্যকার প্রশ্ন। বললাম ‘ওসব বাদ দে। আমার অবস্থা খারাপ।’ ‘কী হয়েছে তোমার মামা?’ বললাম ‘আমি লিখতে পারছি না।’ পাল্টা প্রশ্ন, ‘লিখতে পারছো না বলতে কি বোঝাচ্ছো? আঙ্গুলে ব্যথা? কালান্তর ব্যাধি?’ বললাম, ‘আরে না।’ মাথায় থীম আসে, লিখতে বসলে ভুলে যাই, কিছুই লিখতে পারছি না।’ আমার বিস্মরণ, বিভ্রম, ভুলে যাওয়া, মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং মাঝে মাঝে গভীর ডিপ্রেশনে ভোগা-সবই বললাম। সে গম্ভীর হয়ে প্রশ্ন করলো, ‘রাস্তায় হাঁটার সময় তোমার কি মনে হয় কেউ তোমাকে পেছন থেকে আক্রমণ করবে?’ বললাম, ‘না, মনে হয় না।’ ভাগ্নি বললো, তোমার হেলুসিনেশন হয়?’ বললাম, ‘না।’ ‘আচ্ছা অবশেসন হয়?’ বললাম, ‘হ্যাঁ হয়।’ প্রায়শই ঘোরের মধ্যে থাকি।’ আমার এই জবাবে সে মনে হয় খুব খুশি হলো। যেন কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কার করার আনন্দ। ভাবখানা এমন, যেন আমার রোগ সে ধরে ফেলেছে। প্রশ্ন করলো, ‘ঘুম কেমন হয়?’ বললাম আমার ইনসমনিয়া আছে। ২টা ডিসোপেন টু খেয়ে ঘুমালেও ৪ ঘণ্টা ঘুম হয়। তারপর বিছানায় এপাশ-ওপাশ। বললো, ‘ডরমিকম খেয়েছো কখনো? বললাম, ‘ডরমিকম ৭.৫ দুটা করে খেয়েছি। কোনো লাভ হয়নি।’ এবার সে মোক্ষম কথাটা বললো, ‘মামা তোমার সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ, তুমি রাতে ১টা করে লারগ্যাকটিল ১০০ মি. গ্রা. খাও। আর সকালে পারকিনিল ট্যাবলেট ১টা করে খাও।’ আর পারলাম না। চিৎকার করে উঠলাম, ‘আমার সিজোফ্রেনিয়া? আমি লারগ্যাকটিল খাবো। তুই কি ভেবেছিস আমি পাগল হয়ে গেছি। আমি পাগল? আমি? তোত্ তোত্ তোর ফরটিন জেনারেশনের সিজোফ্রেনিয়া, তারা সব সব পা পা পাগল।’ মেজাজ তীব্র খারাপ হলে মানুষ তোতলায়, আমিও তোতলালাম। সম্ভবত আমিও মানুষ। ফোন কেটে দিলাম।

আমি কোনো সাইকিয়ার্ট্রিস্টের কাছে যাবো না। ভিজিট ৬শ’ টাকা। অত টাকা আমার কাছে নেই। ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলাম। একজন বিদগ্ধ, ঋদ্ধ মানুষের কাছে যাবো। তাকে সমস্যাটা বলবো। একদিন পরই পেয়ে গেলাম আমার প্রিয় শ্রদ্ধেয় একজন বিদগ্ধজনকে। চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাই। বিকেল ও সন্ধ্যার মাঝামাঝি সময়ে দেখলাম জোড় পুকুর পাড়, সাহিত্য একাডেমির কাছে খোলা জায়গায় শাহাদাত ভাই ৭/৮ জন ভয়াবহ সুন্দরী রমণী দ্বারা পরিবেষ্টিত। তিনি মাঝখানে, রমণীকূল চক্রাকারে ঘিরে আছে। রমণীদের মাস্ক আছে, তবে তা মুখে না চিবুকের নিচে ঝুলছে। লিরিক বিউটি, ক্ল্যাসিক বিউটি, ইনোসেন্ট বিউটি, আরবান বিউটি, সাবলাইম বিউটি, প্যারাগন বিউটি-সকল ফর্মের বিউটিই এখানে আছে। কাজী শাহাদাত ভাই তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে অমিতাভ বচ্চনের মত হাত-পা নেড়ে হাসি মুখে কথা বলছেন। প্রিয় পাঠক, নাহ, খারাপ কিছু ভাবার কারণ নেই। তারা নিশ্চয়ই সাংবাদিকতা, শিল্প, সাহিত্য বিষয়ক আলোচনা করছেন। সেলিব্রেটিদের এই এক সমস্যা। একা পেলেই পুরুষ, রমণী সবাই ঘিরে ধরে। খ্যাতির বিড়ম্বনা আর কী। আমি দশ বারো হাত দূর থেকে জোরে কাশতে কাশতে এগুচ্ছি সেদিকে। এই কাশ শুনলে সবারই মনে হবে আমার করোনা, ডেল্টা ভেরিয়েন্ট, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও আছে। আমার মাস্কও চিবুকের নিচে নামিয়ে ফেলেছি। কাছাকাছি যেতেই রমণীকূল কেটে পড়তে শুরু করলো। করোনা বলে কথা। কাজী শাহাদাত ভাই একা। তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। সালাম দিলাম। তিনি বললেন, কী খবর বাবলু ভাই? আমি কোনো প্রকার ভূমিকা না করেই বললাম, ‘ভাই আমি লিখতে পারছি না।’ তিনি জলদ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘লিখতে না পারলে লিখবেন না। এ সমস্যার একটাই সমাধান।’ মুহূর্তে ভেবে দেখলাম, তাইতো লিখতে না পারলে লিখবো না। এটাইতো শক্তিশালী লজিক। কঠিন সমস্যার সহজ সমাধান পেয়ে গেলাম। কাজী শাহাদাত ভাইকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে এলাম। তাই আজ লিখলাম না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়