প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১২
নিরীহ রেল স্টাফরা একের পর এক মারধরের শিকার হবে কেন?

চাঁদপুরে মামলা চলমান অবস্থায় রেলওয়ের জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণে বাধা প্রদান করায় স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন দুর্বৃত্তের হামলায় আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে চাঁদপুর শহরের কয়লাঘাট এলাকার মেঘনা ডিপোর বিপরীত পাশে এ ঘটনাটি ঘটে। হামলার অভিযোগে ভাই ভাই ট্রেডার্সের ম্যানেজার পাভেলকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে আসে। জানা যায়, চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন চাঁদপুর মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার বিএস ৩৪নং খতিয়ানভুক্ত বিএস ১০৪০৯নং দাগের ২.৩৪৩৭ একর ভূমিসহ মোট ৫.০১৯২ একর ভূমির মালিকানা স্বত্ব নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও পাটকল কর্পোরেশন, চাঁদপুর-এর মধ্যে মামলা চলমান রয়েছে। তা সত্ত্বেও উক্ত বিএস দাগের ২.৩৪৩৭ একর রেলভূমির অন্তর্গত ৬৩৩ বর্গফুট জায়গায় (১) মো. মোশারফ হোসেন, পিতা হাজী আবদুল হাকিম মুফতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স, সাং ৪১ ইস্কাটন গার্ডেন, পুরাতন এলিফ্যান্ট রোড, রমনা, ঢাকা; (২) দেলোয়ার হোসেন, মোবাইল : ০১৭৩৭৭৬২৮১০, লিগ্যাল অ্যাডভাইজার, মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স, ৩৫ নং ঘাট, সদর, চাঁদপুর এবং (৩) পাভেল রহমান, পিতা মিন্টু শেখ, ম্যানেজার, মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স, ৩৫ নং স্ট্যান্ড রোড, সদর, চাঁদপুর মামলা চলমান থাকাবস্থায় পাকা স্থাপনা নির্মাণের জন্যে মাটি কেটে লে-আউট প্রস্তুত করছিলেন। এমন সংবাদে বৃহস্পতিবার দুপুরে চাঁদপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে জিআরপি, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইডব্লিউ প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ না করতে নিষেধ করেন। এ সময় স্টেশন মাস্টার মারুফের ওপর হামলা করা হয়। পরে বিষয়টি চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করলে এসআই আল-আমিন ঘটনাস্থল থেকে ম্যানেজার পাভেলকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। স্টেশন মাস্টার মারুফ হোসেন আহত অবস্থায় চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের পশ্চিমে রেলওয়ে কি. মি. ১৭৯/৫-৬-এর মাঝে ৫নং ঘাট এলাকায় রেললাইনের দক্ষিণ পাশে জনৈক মো. মোশাররফ হোসেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে রেলভূমিতে পাকা ঘর নির্মাণ করেন। স্টেশন মাস্টার, এসআই ও আএনবি নির্মাণকাজে বাধা প্রদান করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর হামলা করা হয়। এ বিষয়ে লাকসামের রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শহিদুল্লাহ জিআরপি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। স্টেশন মাস্টার মো. মারুফ হোসেন জানান, আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় রেলওয়ের ভূমিতে কাজ করা হচ্ছে এমন সংবাদে ঘটনাস্থলে যাই। মামলা নিষ্পত্তি ছাড়া কাজ না করতে বললে ভাই ভাই ট্রেডার্সের ম্যানেজার পাভেলের নেতৃত্বে হামলা করা হয়। চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মিন্টু দত্ত বলেন, রেলওয়ের সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা যায়। আইনানুগ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।
চাঁদপুরে রেলওয়ের সকল কিছুর শীর্ষ কর্তাব্যক্তি হিসেবে চাঁদপুর (বড়) স্টেশন মাস্টারকেই বর্তমানে মনে করা হয়, যেহেতু তাঁর চেয়ে ঊর্ধ্বতন পদমর্যাদার কেউ এখানে কর্মরত নেই। সে কারণে শুধু চাঁদপুর শহর এলাকা নয়, লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথের পার্শ্ববর্তী রেলওয়ের সকল কিছুর দেখভালের দায়িত্বও তাঁর উপরেই বর্তায়। সেজন্যে রেলওয়ের স্বার্থে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। ব্যক্তিগতভাবে কোনো স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে নয়। তারপরও তাকে আক্রান্ত হতে হয়। কিছুদিন পূর্বে চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের মেহের স্টেশনেও কর্মরত মাস্টার রেল পুলিশের উপস্থিতিতে রেলওেয়ের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে মার খেয়েছেন। দুটি ঘটনাতেই আক্রমণকারীরা আটক হয়েছেন। কথা সেখানে নয়। কথা হলো, রেলওেয়ের স্বার্থে তদন্ত, উচ্ছেদ, সম্পদ রক্ষায় কোনো বাধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হয় না। দুর্বল ফোর্স সহকারে রেল স্টাফদের পাঠানো হয়, যে কারণে স্টাফরা আক্রমণের শিকার হন। এমনটি বারবার হবে কেন? রেলওয়ে কি দেশের অগুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান? অবশ্যই নয়। রেলওয়ে হচ্ছে অন্যতম বৃহৎ পাবলিক ইউটিলিটি ডিপার্টমেন্ট। এ ডিপার্টমেন্টের কোনো স্টাফ বা কর্মকর্তা যখনতখন মার খাবার সংবাদ দুঃখজনক। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন রেল কর্তৃপক্ষের অনেক বেশি আগাম সতর্কতা ও সচেতনতা অতি আবশ্যক বলে আমরা মনে করি।



