বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:১২

এমন আতঙ্ক দ্রুত নিরসন করা হোক

অনলাইন ডেস্ক
এমন আতঙ্ক দ্রুত নিরসন করা হোক

মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলার সংযোগস্থল ধনাগোদা নদীর ওপর ‘মতলব সেতু’র মাঝখানে ফাটলের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সারাদেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সেতুতে ফাটল দেখা দেয় বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। এই পরিস্থিতিতে সেতুটি পরিদর্শনে প্রকৌশলী পাঠানো হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের পক্ষ থেকে। পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট জমা দেওয়ার পর এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সওজ কর্তৃপক্ষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় ১০ বছর আগে ঢাকা-চাঁদপুর দূরত্ব কমানোর লক্ষ্য নিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এরই মধ্যে সংস্কার না হওয়ার কারণে সেতুর দুই পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক (গোড়ার দিকে) মাটি-বালু সরে গেছে। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে বড়ো বড়ো গর্ত। সেতুর কোথাও কোথাও উঠে গেছে কংক্রিট এবং বেরিয়ে গেছে রড। এরই মধ্যে গত ২১ নভেম্বর ভূমিকম্পের পর সেতুর মাঝখানের একটি জয়েন্টে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। সেতুটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন তারা। মূলত চাঁদপুরসহ আশপাশের জেলা নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল অঞ্চলের মানুষ যাতায়াত সহজ হওয়ার কারণে রাজধানী ঢাকা যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে এই সেতু ব্যবহার করে থাকেন। এ কারণে সেতুটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। সেতুর এ অবস্থার কারণে চালকসহ যাত্রীরা বাধ্য হয়েই যাতায়াত করছে আতঙ্ক নিয়ে। সেতু পারাপার হচ্ছে উৎকণ্ঠা নিয়ে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মাঝখানে জয়েন্টে বড়ো ফাঁকা। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটিতে জোরে জোরে ঝাঁকুনি সৃষ্টি হচ্ছে। সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে বড়ো গর্ত। স্থানীয় বাসিন্দা ও মতলব দক্ষিণ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুক্তার আহমেদ বলেন, গত ২১ নভেম্বর এই অঞ্চলে একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। তারপর থেকেই মতলব সেতুর মধ্যখান দিয়ে ফাটল দেখা দেয়। ভূমিকম্পের আগে এ রকম ছিল না। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি গোলাম নবী খোকন জানান, এই সেতু বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় যাতায়াত পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। সেতুর দুই পাশের সড়ক এবং মাঝখানের ফাটল সংস্কার খুবই জরুরি। মতলব শহরের রয়মনেন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ অরুণ চন্দ্র জানান, জরুরি সেবা, শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সসহ জনসাধারণ ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে প্রতিদিন। গাড়িচালক চালক আশরাফ আলী জানান, ‘এত অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিজটি ফাইটা গেছে। ব্রিজের উঠার রাস্তাও অনেক খারাপ। মেরামত করা জরুরি।’ মতলব উত্তর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আহমেদ বুলবুল বলেন, সেতুর অবস্থা খুবই নাজুক। আমরা জানি না, কখন কী ঘটে। তারপরও আতঙ্ক নিয়ে প্রতিদিন আমাদের এই সেতু পারাপার হতে হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলার ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশিদ বলেন, এই মতলব সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঁদপুরসহ আশপাশের কয়েকটি জেলার মানুষ এই সেতুটি ব্যবহার করে। সেতুর দু পাশের রাস্তার বেহাল দশা। সেতুর মাঝখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত সংস্কার করার জন্যে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। স্কুল শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, প্রতিদিন আমি এই সেতু দিয়ে আসা যাওয়া করি। কোনো ভারী গাড়ি পারাপার হলে সেতুটি কাঁপতে থাকে। ঝুঁকি নিয়েই এই সেতু দিয়ে চলছে লাখো মানুষ।মতলব দক্ষিণ উপজেলা প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, এটা সেতুর ফাটল না। সেতুর এক্সপানশান জয়েন্ট টেম্পারেচারের কারণে ফাঁকা হয়ে গেছে। অতি দ্রুত সংস্কার করা হবে। আর সংযোগ রাস্তায় গর্ত মেরামত কাজ দ্রুতই সম্পন্ন হবে। চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহ. আলিউল হোসেন সোমবার (১ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে বলেন, মতলব সেতু ফাটলের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে প্রকৌশলী পাঠানো হয়েছে। তারা পরিদর্শন শেষে যে রিপোর্ট দিবে, সেটার ওপর ভিত্তি করেই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, মতলব উত্তর ও দক্ষিণের সরাসরি যোগাযোগ এবং চাঁদপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এই সেতু নির্মাণ করে। সেতুতে ১০ দশমিক ২৫ মিটার প্রস্থের ৭টি স্প্যান রয়েছে এবং দু পাশের অ্যাপ্রোচ সড়কটি ১ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। ২০১৮ সালে সেতুটি জনসাধারণের চলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করা হয়।

৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু যান ও জনচলাচলের জন্যে উন্মুক্ত করে দেয়ার ১০ বছর পূর্ণ হবার আগেই সেটি নিয়ে আতঙ্ক কেবল ভূমিকম্পের কারণে নয়, ঠিকাদারের মানহীন কাজ, উদ্বোধন-পরবর্তী সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব কিংবা অতি জরুরি সংস্কার কাজ যথাসময়ে না করার কারণে যে হয়নি-সেটা হলফ করে কেউ বলতে পারবে না। মতলবের উপজেলা প্রকৌশলীর আওতাধীন বিষয় না হলেও তিনি সেতুটির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর পর্যবেক্ষণের আলোকে যা বলেছেন, সেটি আতঙ্ক নিরসনের জন্যে সহায়ক বক্তব্য। তাঁর বক্তব্য শেষ পর্যন্ত সঠিক হোক আমরা তেমনটিই প্রত্যাশা করি। সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর পক্ষ থেকে প্রেরিত প্রকৌশলীর পরিদর্শন রিপোর্টের আলোকে মতলব উত্তর-দক্ষিণের সংযোগ সেতুটিতে দ্রুত প্রয়োজনীয় মেরামত বা সংস্কার কাজ শুরু হোক-এটাই এ সেতুটি ব্যবহারকারী প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব সময়ের এক ফোঁড়ের পরিবর্তে দশ ফোঁড় তথা বাড়তি ব্যয়ের দিকে কাজটিকে নিয়ে যাবে এবং আতঙ্ক ও ঝুঁকি দুটোই ক্রমশ বাড়াবে বলে আমরা মনে করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়