সোমবার, ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৩৮

চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে দু দশকের উজ্জ্বল নৃত্যের আলো ছড়াচ্ছে ‘নৃত্যধারা’

সংস্কৃতি অঙ্গন প্রতিবেদক
চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে দু দশকের উজ্জ্বল নৃত্যের আলো ছড়াচ্ছে ‘নৃত্যধারা’

চাঁদপুর জেলার সংস্কৃতি অঙ্গনে ‘নৃত্যধারা চাঁদপুর’ একটি সুপরিচিত নৃত্য সংগঠন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংগঠনটি সুনামের সাথে নৃত্যচর্চা ও পরিবেশনার মাধ্যমে জেলার সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। নৃত্যকলা ও সংস্কৃতিকে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার মহান লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ সালের ৪ ডিসেম্বর ‘নৃত্যধারা চাঁদপুর’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে অধ্যক্ষের দায়িত্বে রয়েছেন প্রতিভাবান নৃত্য শিল্পী সোমা দত্ত।

‘নৃত্যধারা চাঁদপুর’ শুরু থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে তাদের শৈল্পিক নৃত্য পরিবেশনা করে দর্শক মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাদের পরিবেশনার তালিকা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সংগঠনের সদস্যরা জাতীয় ও স্থানীয় অনেক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এর মধ্যে চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা মঞ্চ, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের ইলিশ উৎসব-এর মতো প্রধান উৎসবে নিয়মিত অংশগ্রহণ করে।

এছাড়া বিভিন্ন জাতীয় দিবসসহ সরকারি সকল অনুষ্ঠানে এই সংগঠন নৃত্য পরিবেশন করে থাকে এবং করে আসছে। তারা বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং নটরাজ নৃত্যাঙ্গন কুমিল্লা নজরুল ইনস্টিটিউট মঞ্চে নিজেদের পরিবেশনা তুলে ধরেছে। শুধু তাই নয়, দেশের প্রধান টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভিশনেও নৃত্যধারা চাঁদপুরের পরিবেশনা প্রচারিত হয়েছে।

কেবল জেলা সদর নয়, চাঁদপুরের প্রায় সব উপজেলার মঞ্চে সংগঠনের শিল্পীরা পারফর্ম করেছে, যা স্থানীয় সংস্কৃতি প্রসারে তাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ বহন করে।

দীর্ঘ দু দশকের পথচলায় নৃত্যধারা চাঁদপুরের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা ও প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে জাতীয় ও বিভাগীয় পর্যায়ে। জাতীয় পর্যায়ে যারা পুরস্কারপ্রাপ্ত তারা হলেন : সংগঠনের নৃত্যশিল্পী পূজাশী সাহা মুনা, আফসানা আক্তার, অর্পিতা দাস, আরিফুল ইসলাম, সুরঞ্জনা দত্ত কুহু এবং অনিন্দিতা দত্ত।

এছাড়া বিভাগীয় পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করেছে ফাতেমা জান্নাত রিদিতা, পিপল দাস, মৃত্তিকা অধিকারী, তিন্নি পাল, শ্রেয়সীয়া সরকার এবং বিদ্যানীলা সরকার।

তারা ২০২২ সালে জেলা শিল্পকলার সম্মাননা লাভ করেছে। ২০২১ সালে অর্জন করে গোল্লাছুট পদক।

এই সংগঠনের স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা হলেন সুমন দত্ত। প্রতিষ্ঠার প্রথমদিকে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সংগঠনের তৎকালীন উপদেষ্টা প্রয়াত শীতল ঘোষাল ও মুখলেসুর রহমান মুকুল। সে সময় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. শবে বরাত। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে যারা সংগঠনের ভিত্তি মজবুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন : ইতু চক্রবর্তী, আক্রাম খান, গোবিন্দ মণ্ডল, নির্মল পাল, পরিমল দাস নূপুর, দেবব্রত সরকার বিজয়, সুনন্দা পাল এবং খুকী বেগম।

বর্তমানে সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে একটি অভিজ্ঞ ও গতিশীল কমিটির মাধ্যমে। এতে সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ইতু চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সোমা দত্ত, সাংগঠনিক সম্পাদক ফৌজিয়া হোসেন পুতুলসহ আরো অনেকে। বর্তমানে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থী নৃত্যধারা চাঁদপুরে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। নতুন নেতৃত্বের হাতে নৃত্যধারা চাঁদপুর নতুন লক্ষ্য, নতুন স্বপ্ন ও বিস্তৃত সাংস্কৃতিক দিগন্ত ছুঁতে এগিয়ে যাচ্ছে।

দু দশকেরও বেশি সময় ধরে নৃত্যধারা শুধু নৃত্যশিল্প চর্চা নয়, শিশু-কিশোরদের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছড়িয়ে দেয়া, চাঁদপুরের স্থানীয় সংস্কৃতিকে জাতীয় অঙ্গনে পরিচিত করা এবং সমৃদ্ধ নৃত্যশৈলী গড়ে তুলতে অসামান্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে নৃত্যধারা চাঁদপুর তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নৃত্যকলা ও দেশীয় সংস্কৃতি চর্চার এক উজ্জ্বল কেন্দ্র, যেটি জেলার সাংস্কৃতিক পরিচয়কে সমৃদ্ধ করে চলেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়