বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:১১

বেসরকারি সংগঠনের টেকসই অস্তিত্ব!

অনলাইন ডেস্ক
বেসরকারি সংগঠনের টেকসই অস্তিত্ব!

আমাদের দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর, বিভিন্ন দুর্ঘটনার পর ত্রাণ তৎপরতায় কতো না সংগঠনের নাম জানা যায়। বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল আয়োজনে, পূজা উদযাপনে কতো না সুন্দর সংগঠনের নাম খুঁজে পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কতোটি সংগঠন স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও আদর্শের ভিত্তিতে ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তার হিসেব নিলে নগণ্যসংখ্যকই খুঁজে পাওয়া যায়। অধিকাংশ সংগঠন প্রদর্শনেচ্ছায় ভোগে। সেজন্যে ফটোসেশন, ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও গণমাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত থাকে। কেউ কেউ তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়, আলোচনা-সমালোচনার তুঙ্গে উঠে যায়। কিন্তু কিছুদিন, কয়েক মাস, একবছর কিংবা কয়েক বছর পর অনেক সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। নাম থাকলেও কাম থাকে না। নেতা থাকলেও কর্মী খুঁজে পাওয়া যায় না। এক কমিটি দিয়েই চলে বছরের পর বছর। ভুঁইফোড় সংগঠন মাত্রেরই গঠনতন্ত্র থাকে না, আবার গঠনতন্ত্র থাকলেও মানা হয় না, সংশোধনী এনে গঠনতন্ত্র হালনাগাদ বা আপডেট করা হয় না। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় কমিটি পরিবর্তন হয় না। স্বেচ্ছাচারিতা ও অস্বচ্ছতায় আকীর্ণ থাকে অধিকাংশ বেসরকারি সংগঠন। শিশু, কিশোর, যুবক, মধ্যবয়সী, প্রবীণ বয়সী যাদেরকে নিয়েই সংগঠন করা হোক না কেন, সেটা ধর্ম, সমাজসেবা ও সমবায় সহ বহুমাত্রিক যে রূপেই গড়ে তোলা হোক না কেন, সেটা যদি নিবেদিতপ্রাণ, সৎ, দক্ষ, ত্যাগী নেতৃত্বে ও কোনো গ্রহণযোগ্য আদর্শের অনুকূলে না চলে তাহলে সেটা মুখ থুবড়ে পড়েই। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মানুষ একসময় পাওয়া গেলেও এখন খুব কম পাওয়া যায়। সেজন্যে অনেক সংগঠন টেকসই হয় না। অকালেই হারিয়ে যায়।

ঘরবাড়ি না থাকলে, আশ্রয় না থাকলে, পরিবার না থাকলে যে কোনো মানুষ ভাসমান হয়ে যায়, ভবঘুরে হয়ে যায়। তার থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তেমনি কোনো সংগঠনের স্থায়ী কোনো ঠিকানা না থাকলে, ধারাবাহিক কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলে, দৃশ্যমান কোনো কিছু না থাকলে, নিয়মিত সাংগঠনিক সভা, কমিটি গঠন ও পুনর্গঠন না হলে সে সংগঠনের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী হয়, অচলাবস্থায় আক্রান্ত হয়, স্থবিরতায় ঝিমিয়ে পড়ার উপক্রম হয়। এর ফলে যে আদর্শের ধ্বজাধারী হোক না কেনো, স্লোগান বা প্রতিপাদ্য যতো সুন্দর হোক না কেনো, সে রকম সংগঠন টেকসই হয় না এবং সমাজের জন্যে দৃষ্টান্তমূলক কিছু করতে পারে না। সাধারণ্যে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে না। এর বিপরীতে যে সকল সংগঠন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে, সাংগঠনিক সভাসহ নিয়মতান্ত্রিকতা বজায় রাখে, সদস্যসহ উপকারভোগীদের কাছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বজায় রাখে, স্থায়ী ঠিকানা নির্মাণ করে, সৃষ্টিশীলতায় আবর্তিত হয়, তারা টেকসই অস্তিত্ব সহ উন্নয়ন ও অগ্রগতির সামগ্রিকতার দিকে ধাবিত হয়। দেশে এ রকম কিছু সংগঠন আছে। এর মধ্যে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরস্থ সূর্যমুখী কচি-কাঁচার মেলা অন্যতম। গত বুধবার এ সংগঠনটির ৫৭ বছর পূর্তি হয়েছে। ১৯৬৮ সালের ৫ নভেম্বর জন্ম নেয়া এ সংগঠনটির ৬০ বছরপূর্তি তথা হীরকজয়ন্তীর মাইলফলক অর্জিত হবে ২০২৮ সালের ৫ নভেম্বর। এ সংগঠনটি বৃহত্তর মতলবের শিক্ষার উন্নয়ন, গুণগত শিক্ষার প্রসার, সর্বোপরি শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ, মেধার বিকাশে যা কিছু বিগত ৫৭ বছরে করেছে তার বিবরণ অনেক দীর্ঘ। মতলবের সকল দলমতের মানুষ এ সংগঠনটিকে নিয়ে গর্ব করে। এর প্রতিষ্ঠাতা ও বর্তমান সভাপতি মো. মাকসুদুল হক বাবলু অশীতিপর হবার আগেই হবে সংগঠনের হীরকজয়ন্তী। তিনি ততোদিন সুস্থ থাকুন, শতায়ু হন এবং সংগঠনটির শেকড় এতোটা গভীরে প্রোথিত হোক, যাতে ঝড়-ঝঞ্ঝা সহ কোনো প্রতিকূলতাই নাড়াতে না পারে বটবৃক্ষসম সংগঠনটিকে-এটাই দূরের ও কাছের কল্যাণবুদ্ধ প্রতিটি মানুষের এবং বৃহত্তর মতলববাসীর প্রত্যাশা। আমরাও সেই প্রত্যাশাই পোষণ করি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়