প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০১
বৃদ্ধ বয়সে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতন

বৃদ্ধ বয়স এমন এক পর্ব, যখন মানুষ জীবনের অভিজ্ঞতা, ক্লান্তি ও একাকীত্বের ভার একসাথে বয়ে নিয়ে চলে। সাধারণভাবে সমাজে প্রবীণ নারীর প্রতি নির্যাতনের কথা বেশি শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবে অনেক প্রবীণ পুরুষও নীরবে নির্যাতনের শিকার হনÑনিজের স্ত্রী বা জীবনসঙ্গীর কাছেই। এই নির্যাতন নিয়ে সমাজে প্রায় কোনো আলোচনা হয় না, কারণ পুরুষের কান্না, কষ্ট বা অপমান প্রকাশকে সমাজ ‘দুর্বলতা’ বলে মনে করে। অথচ এ এক গভীর মানবিক সমস্যা।
প্রবীণ পুরুষের প্রতি স্ত্রীর নির্যাতন নানা রূপে দেখা যায়। প্রথমত, মানসিক নির্যাতন সবচেয়ে সাধারণ। স্ত্রীর ক্রমাগত তিরস্কার, অপমান, তুচ্ছ কারণে রাগারাগি, কিংবা অতীতের ভুল বারবার মনে করিয়ে দেওয়া প্রবীণ পুরুষকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে দেয়। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের পরও যদি স্বামীকে অযথা সন্দেহ করা হয়, কিংবা সন্তানদের সামনে ছোট করা হয়, তা তাঁর আত্মমর্যাদায় আঘাত হানে।
দ্বিতীয়ত, আর্থিক নির্যাতনও এক বাস্তবতা। অনেক সময় স্ত্রী নিজের বা সন্তানের স্বার্থে প্রবীণ স্বামীকে আর্থিকভাবে ব্যবহার করেন। তাঁর পেনশন, ব্যাংক জমা বা সম্পত্তির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন; কখনও গোপনে অর্থ আত্মসাৎ করেন বা সিদ্ধান্ত নিতে বাধা দেন। এতে প্রবীণ পুরুষ নিজেকে অক্ষম, অবহেলিত ও পরিত্যক্ত মনে করেন।
তৃতীয়ত, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মানসিক নিঃসঙ্গতাও এক ধরনের নির্যাতন। অনেক স্ত্রী স্বামীকে বন্ধু বা আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে দেন না, তাঁর মতামত উপেক্ষা করেন, এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও সীমিত করে দেন। এই অবহেলা ধীরে ধীরে প্রবীণ পুরুষকে নীরব বিষণ্ণতায় ডুবিয়ে ফেলে।
শারীরিক নির্যাতন পুরুষের ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম হলেও একেবারে অনুপস্থিত নয়। বিশেষ করে যেখানে স্ত্রী রাগপ্রবণ বা কর্তৃত্বপরায়ণ, সেখানে গালাগালি, ধাক্কাধাক্কি, এমনকি লাঠি বা গৃহস্থালির জিনিস দিয়ে আঘাতের ঘটনাও ঘটে। কিন্তু অধিকাংশ পুরুষ এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলেন নাÑলজ্জা ও সামাজিক কলঙ্কের ভয়েই চুপ থাকেন।
এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্যে করণীয় হলোÑপ্রথমে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি করা যে, নির্যাতন লিঙ্গভেদে নয়, মানবতার লঙ্ঘন। প্রবীণ পুরুষের কষ্টকেও গুরুত্ব দিতে হবে। পারিবারিক পরামর্শক বা কাউন্সেলিং সেবা বৃদ্ধ বয়সেও জরুরি, যাতে দাম্পত্য সম্পর্কের সংকট মীমাংসা করা যায়। সন্তানদেরও উচিত বাবা-মায়ের সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করা ও যে কোনো অবমাননাকর আচরণের প্রতিবাদ করা।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, স্বামী-স্ত্রী দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা বজায় রাখা। বৃদ্ধ বয়সে ভালোবাসা ও যত্নই হতে পারে জীবনের শেষ অধ্যায়কে সুন্দর করে তোলার একমাত্র পথ। নির্যাতন নয়Ñএকটু বোঝাপড়া, একটু স্নেহই পারে প্রবীণ জীবনের দিনগুলোকে শান্তি ও মর্যাদায় ভরিয়ে তুলতে।