শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:৩৬

জন্মদিনে একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়

ড. আব্দুস সাত্তার
জন্মদিনে একটি সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়

আজ আমার জন্মদিন ছিলো। এ নিয়ে হৈ-হুল্লোড় করার কিছুই ছিলো না। ছিলো না রেড কার্পেট বিছিয়ে কোনো হোটেল বা রেস্তোরঁায় পার্টি। এমনকি একগুচ্ছ তাজা লাল গোলাপ নিয়েও কেউ দঁাড়িয়ে থাকেনি। তবে ফেসবুক, ইনবক্স টুইটার, মেইল, হোয়টস আপ, ইমো, ভাইবার, স্কাইপ, ফেইস টাইম, ভিডিও কল ও ম্যাসেজে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা পেয়েছি । তাই আমি অনেক আনন্দিত। কিছু কিছু ম্যাসেজ সত্যি অনেক আবেগের, ভালোলাগার। অনেকে সময়ের জন্যে সময় করে উইস করতে পারেনি, তাতে কি! তোমাদের সবার জন্যে শরতের স্নিগ্ধ জোছনার রাত্রি থেকে কুড়িয়ে আনা এক মুঠো ভালোবাসা।

প্রতিদিনের মতো সকালে কাজে চলে যাই। আজ একটু মিছিল মিটিং ছিলো, তাই বাসায় ফিরতে রাত হয়ে গেেেছে। বাসায় ফিরেই দেখি আমার একমাত্র মেয়ে একগুচ্ছ ফুল সুন্দর করে ফুলদানিতে সাজিয়ে রেখেছে আমার বসার রুমে। আর একমাত্র ছেলে হোস্টেলে থাকে, সেখান থেকেই জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে এবং সোনা বউ সুগার ফ্রি খাবার রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে।

জীবনের মধ্যগগনে দঁাড়িয়ে আমি ভাবছি, দেখছি এবং উপলব্ধি করছি জন্মদিনের কথা। এই গগনে আসলে জন্মদিন একটু তেতো হয়ে যায়। মানুষের আগ্রহ ব্যস্তানুপাতে কমে যেতে থাকে। তখন নিজের জন্মদিনে আগ্রহ কমে যায়, নতুন জন্মের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। অনেক দিন ধরেই মনে হচ্ছে নতুন প্রজন্মের জন্যে কী রেখে যাচ্ছি আমরা, কী পাচ্ছে ওরা আমাদের থেকে। ভয় লাগে যখন ওদের দেখা ভবিষ্যতের স্বপ্নগুলোর কথা শুনি। আদৌ কি ওরা পারবে বাস্তবায়ন করতে স্বপ্নগুলো? যেখানে পিতা তার ছেলেকে মিথ্যা বলতে শিক্ষা দেয়, মাতা তার মেয়েকে উগ্রভাবে চলাফেরার জন্যে তাগিদ দেয়, পিতা-মাতা বাচ্চাদের সামনে পরকীয়া করে, পিতা-মাতা দুনীতির দায়ে জেলে যায়, এমনকি পিতা তার মেয়ের সাথে ধর্ষণে লিপ্ত হয়! বিকারগ্রস্ত এই পরিবেশে নতুন প্রজন্ম শিখবে কি! আমি প্রতিদিই ভাবি, এই সমস্যাগুলো সমাধানের কোনো পথ আছে কিনা? সত্যি বলতে গেলে তেমন কোনো কিছু পাই না ভেবে। ফেসবুকে আমি দেখি, একটা হতাশ জনগোষ্ঠী সুযোগ পেলেই নিজের যোগ্যতা দেখায় অন্যের সমালোচনা করে, গালি দিয়ে। আবার যাকে গালি দিচ্ছে সেই বাহবা দিচ্ছে পাবলিক্যলি। এটা কঠিন একটা সংকট মনে হয় আমার। এমন না যে, ভালো চিন্তা বা কাজ করার মানুষ নেই। ভালোও আছে, কিন্তু তা হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। বাধ্য হয়ে একটা বিষয় খারাপ জেনেও মেনে নিতে হচ্ছে ধীরে ধীরে।

আজকাল পার্টি বা দাওয়াতে গেলে সবাই দেশ-বিদেশের নতুন প্রজন্মের হতাশার কথা বলে। কিন্তু কীভাবে এর সমাধান হবে তা নিয়ে কেউ একমত হতে পারে না। সবাই পালিয়ে বঁাচার সিদ্ধান্ত নেয় শেষ পর্যন্ত। খুবই উদ্ভট একটা অবস্থা। এর থেকে আমাদের বের হয়ে আসা খুব দরকার। নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমরা খুব অপরাধী হয়ে থাকবো। আসুন নিজেরা ভালো কিছু করার চেষ্টা করি, সচেতন হই। সুন্দর একটা পৃথিবী আসুক নতুনদের জন্যে, আমাদের জন্যে। আমার জন্মদিনে নতুন প্রজন্মের সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় ।

ড. আব্দুস সাত্তার : কথা সাহিত্যিক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডিসি।

০৯/১৫/২৫

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়