শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ৩৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে কচুক্ষেত থেকে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪০

ইসলামে নারীর ভূমিকা ও আধুনিক যুগে তাদের করণীয়

মো. ইউসুফ হোসাইন
ইসলামে নারীর ভূমিকা ও আধুনিক যুগে তাদের করণীয়

ইসলাম এমন এক ব্যবস্থা, যা নারীকে প্রকৃত মর্যাদা ও নিরাপত্তা দিয়েছে। কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, নারী-পুরুষ উভয়ই আল্লাহর বান্দা, উভয়ের দায়িত্ব আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। নারীকে কখনোই হীন বা দুর্বল সত্তা হিসেবে গণ্য করা হয়নি; বরং মা, কন্যা ও স্ত্রী— প্রতিটি অবস্থানে ইসলাম তাদের অনন্য সম্মান প্রদান করেছে।

মা হিসেবে নারীর মর্যাদা সর্বোচ্চ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘জান্নাত মায়ের পদতলে।’ অর্থাৎ, মায়ের সেবা ও সন্তুষ্টির মাধ্যমেই জান্নাতের রাস্তা খুলে যায়। কন্যা হিসেবে ইসলাম নারীর জন্য দয়া, রহমত ও কল্যাণের ঘোষণা দিয়েছে। আর স্ত্রী হিসেবে নারীকে পরিবারের প্রশান্তি, ভালোবাসা ও সহমর্মিতার উৎস হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোরআনে বলা হয়েছে: ‘আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে একটি হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও।”

শিক্ষা ও জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রেও ইসলাম নারীদের সমান অধিকার দিয়েছে। নবী (সা.) এর অসংখ্য মহিলা সাহাবিয়া হাদিস, ফিকহ, চিকিৎসা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। আজকের দিনে যখন শিক্ষার নামে অনেক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে, তখন মুসলিম নারীর উচিত ইসলাম প্রদত্ত জ্ঞান ও আধুনিক কল্যাণমূলক বিদ্যা উভয়ই অর্জন করা, যাতে সে পরিবার ও সমাজকে আলো দিতে পারে।

নারীর প্রধান ভূমিকা পরিবারকে ইসলামী আদর্শে গড়ে তোলা। সন্তানদের সঠিক লালন-পালন, নৈতিকতা শেখানো এবং ঈমানী পরিবেশ সৃষ্টি করা নারীর প্রথম দায়িত্ব। তবে ইসলাম নারীদের কেবল ঘরের চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ রাখেনি। চিকিৎসা, শিক্ষা, সমাজসেবা ও কল্যাণমূলক কাজে তারা অংশগ্রহণ করতে পারে, যদি তা ইসলামী শালীনতা ও পর্দার মধ্যে হয়। এভাবেই নারী সমাজে কল্যাণ ছড়িয়ে দিতে পারে।

আধুনিক যুগে নারীর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আজকের বিশ্বে অনেক নারী অন্ধভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি অনুসরণ করে নিজেদের মর্যাদা হারাচ্ছে। অথচ ইসলাম নারীকে প্রকৃত সম্মান দিয়েছে, তাকে ভোগ্যপণ্য বানায়নি। তাই আধুনিক যুগের নারীর উচিত—ইসলামের আলোকে নিজেদের গড়ে তোলা, চরিত্র ও ব্যক্তিত্বকে দৃঢ় করা এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হওয়া। সামাজিক মাধ্যমে কিংবা জনজীবনে নারীরা যদি ইসলামের পরিচ্ছন্ন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে, তবে আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে আনা সম্ভব হবে।

সত্যিকার অর্থে নারী হলো সমাজের অর্ধেক, আর অপর অর্ধেক তার হাতে লালিত হয়। তাই একজন নারীর চরিত্র মানেই একটি জাতির চরিত্র। ইসলাম নারীকে যে সম্মান দিয়েছে, তা পৃথিবীর আর কোনো ব্যবস্থা দিতে পারেনি। সুতরাং আজকের যুগের নারীদের উচিত নিজের ঈমান ও আমলকে মজবুত করা, জ্ঞানার্জনে অগ্রসর হওয়া, সমাজে সৎকর্মের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টিকে জীবনের মূল লক্ষ্য বানানো।

মোঃ ইউসুফ হোসাইন, আল-আজহার ইউনিভার্সিটি, কায়রো, মিশর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়