প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯:১৫
ভাসানী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংঘের আয়োজন
চাঁদপুরের গর্ব, চলচ্চিত্রের কমেডি কিং অভিনেতা দিলদার স্মরণে পথনাটক

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি কমেডি কিং ও চাঁদপুরের কৃতী সন্তান দিলদার হোসেনের ২২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে চাঁদপুরে আয়োজন করা হলো স্মরণসভা ও একাধিক পথনাটক। ২৬ জুলাই ২০২৫ (শুক্রবার) বিকেলে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মোলহেড এলাকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ‘রক্তধারা’ প্রাঙ্গণে ভাসানী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংঘ, চাঁদপুর-এর আয়োজনে এই অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠে স্মৃতি, শ্রদ্ধা আর প্রজন্মের কাছে কিংবদন্তিকে নতুন করে তুলে ধরার এক মিলনমেলায়।
আয়োজনে দিলদারের অভিনয়ের ওপর কয়েকটি খণ্ড খণ্ড পথনাটক উপস্থাপন করা হয়, যেখানে তার হাস্যরসাত্মক চরিত্র এবং অভিনয়ের বিশেষ মুহূর্তগুলো জীবন্ত হয়ে উঠে। এই নাটকীয় দৃশ্যগুলো দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় বাংলা চলচ্চিত্রে দিলদারের অমর অবদান ও তাঁর অভিনয়ের অসাধারণ গুণাবলি।
জানা যায়, ১৯৪৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চাঁদপুরের মাটিতে জন্ম নেওয়া দিলদার হোসেন বাংলা সিনেমায় নিজের অসামান্য অভিনয় দক্ষতা দিয়ে হয়ে উঠেছিলেন দর্শকদের হৃদয়ের মানুষ। ১৯৭২ সালে চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করে প্রায় দু শতাধিক ছবিতে কাজ করেছেন। শুধু কমেডিয়ান নয়, দুর্বল গল্পের সিনেমাকেও নিজের প্রাণবন্ত অভিনয়ে জীবন্ত করে তুলেছিলেন তিনি। ১৯৯১ সালে ‘তুমি শুধু আমার’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্যে পান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
দিলদারকে স্মরণে আয়োজন করা হয় বিশেষ পথনাটক, যেখানে তুলে ধরা হয় তাঁর জীবনের নানা দিক, তাঁর চলচ্চিত্রের হাসির দৃশ্য। পর্দার ভেতর ও বাইরের মানুষ দিলদার কীভাবে একাই দর্শকদের ভালোবাসা কুড়িয়ে নিয়েছিলেন সেটাও তুলে ধরা হয়। পথনাটকগুলো দর্শকদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে একজন মানুষ শুধু অভিনয় নয়, তার স্বতঃস্ফূর্ততা আর সহজাত হাসির মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে পারেন।
ভাসানী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়, আজকের তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানে না দিলদার হোসেন ছিলেন চাঁদপুরের সন্তান। তাই এই আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো কিংবদন্তিকে নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করা। একই সঙ্গে দাবি তোলা হয় চাঁদপুর শহরে দিলদারের নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতে পারে বাংলা চলচ্চিত্রের এই অনন্য তারকার কথা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক সাইফুল খান রাজীব, সদস্য সচিব নাজমুল ইসলাম সজীব, সাংগঠনিক সম্পাদক কাউছার আহমেদ এবং সদস্য কাওসার আহমেদ, জাহিদ হোসেন, মুনমুন আক্তার, সেলাগ খান ও রাহিম খান।
সংগঠনের সদস্যরা বলেন, দিলদার শুধু সিনেমায় নয়, মানুষ হিসেবেও ছিলেন সবার প্রিয়। তার হাসির মধ্যে লুকিয়ে ছিলো মানবিকতা, সরলতা আর বাঙালির প্রাণের স্পর্শ। তাই তাঁকে স্মরণ করা মানেই শুধু এক ব্যক্তিকে নয়, এক যুগ, এক সংস্কৃতি, এক উজ্জ্বল অধ্যায়কে স্মরণ করা।
দর্শক ও অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এই আয়োজন যেন একদিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, বরং নিয়মিতভাবে চাঁদপুরের অন্যান্য গুণীজনকেও এভাবে স্মরণ করা হয়।
চলচ্চিত্রপ্রেমী, সংস্কৃতিকর্মী আর শহরবাসীর উপস্থিতিতে শেষ হয় স্মৃতিমাখা এই আয়োজন। বাংলা সিনেমায় হাসির যাদুকর দিলদার হোসেন তাঁর কাজের মধ্য দিয়েই থেকে যাবেন চিরকাল-- চাঁদপুরের ইতিহাসে ও বাঙালির ভালোবাসায় হবেন অমর।