প্রকাশ : ০৮ জুন ২০২৫, ১৩:৪৮
হাজীগঞ্জে শত বছর ধরে সচ্ছলদের মাংস পৌঁছে যাচ্ছে সবার ঘরে

গ্রামে যারা কোরবানি দেয় তাদের কোরবানির মাংস সম বন্টন করে পোঁছে দেয়া হয় গ্রামের প্রতিটি ঘরে। যা থেকে একটি পরিবারও বাদ যায় না। শত বছর ধরে সামাজিক এ কাজটি করছে স্থানীয় একটি সামাজিক সংগঠন, গ্রামের মুরুব্বী ও যুব সমাজ। হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার টোরাগড় গ্রামে এ প্রথা চলে আসছে বৃটিশ শাসনামল থেকে।
|আরো খবর
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, টোরাগড় সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে গ্রামে যারা কোরবানি দিচ্ছেন, তারা কোরবানি পশুর তিন ভাগের এক ভাগ মাংসসহ নগদ ১ হাজার ১শ' টাকা সমাজ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। এই সমাজ ব্যবস্থাপনার নেতৃবৃন্দ তাদের লোকজনের মাধ্যমে মাংস ও হাড়গুলো কেটে টুকরো টুকরো করে সম ভাগ করছেন। এর পরে সমাজের আওতাধীন বাড়িগুলোর মধ্যে যারা কোরবানি দেয় নি, তাদের একটি তালিকা করা হয়। এরপরে তালিকা অনুযায়ী ভাগ করে সেই ভাগ ঘরে ঘরে পোঁছে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে পশু প্রতি যে ১ হাজার ১শ' টাকা গ্রহণ করা হয়, ওই টাকা দিয়ে পশু জবাই, চামড়া ছড়ানো, মাংস কাটা শ্রমিকের সম্মানি ও বিবিধ খরচ পরিশোধ করা হয়।
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, বৃটিশ আমল থেকে হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৭নং ওয়ার্ড টোরাগড় গ্রামে দুটি সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোরবানির মাংস বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়। পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে গ্রামের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে তিনটি সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। টোরাগড় আদর্শ কোরবানি সমাজ ব্যবস্থাপনা দুরূহ এ কাজটি করে আসছেন। এছাড়া যারা সমাজ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত নয়, তারা ব্যক্তিগত, পারিবারিক কিংবা নিজ বাড়ির লোকজনের উদ্যোগে কোরবানির মাংস মানুষের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী সময়ে বৃটিশ শাসনামলে লোপ্তে আলী মিজির নেতৃত্বে আব্দুল হক মৃধা, আলী উল্যাহ মৃধা, সুলতান সর্দার, নূর খাঁ ও ইদ্রিস মজুমদারসহ অন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ এই সমাজ ব্যবস্থা চালু করেন। কোনো ধরনের সমালোচনা ছাড়াই শতবর্ষ পর্যন্ত চলমান রয়েছে এ কার্যক্রম। যারা এই সমাজ ব্যবস্থার নেতৃত্ব দেন বা দিচ্ছেন, তারা বিনা পারিশ্রমিকে কাজটি করে থাকেন।
সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম সদস্য ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম খাঁন জানান, তিনি আশির দশক থেকে এ সমাজ ব্যবস্থার সাথে জড়িত। তখনকার সময় ১২টি গরু দিয়ে শুরু। লোক সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখন এই সমাজ ব্যবস্থা তিন ভাগ হয়েছে এবং প্রতিটি সমাজেই সমবণ্টনের মাধ্যমে মাংস বিতরণ করে থাকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কোরবানির মাংস দাতা বলেন, কোরবানি পশুর মাংস বিতরণের উত্তম পন্থা হচ্ছে একটি পশুর তিনভাগের একভাগ অসহায়, একভাগ আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করা একং একভাগ নিজেদের জন্য রাখা। আমরা আমাদের কোরবানির পশুর তিনভাগের একভাগ মাংস সমাজের (টোরাগড় আদর্শ কোরবানি সমাজ ব্যবস্থাপনা) কাছে পৌঁছে দেই।
বয়োবৃদ্ধ একজন মাংস গ্রহিতা জানান, এই সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে ঈদের দিন বিকালেই তিনি মাংস পেয়েছেন। তিনি বলেন, পরিবারের যতজন সদস্য বিবাহিত, তারা সবাই আলাদা আলাদা নামে মাংস পেয়ে থাকেন। অর্থাৎ যাদের পরিবার আছে, এমন সবাই পৃথকভাবে মাংস পেয়ে থাকেন।