রবিবার, ২৫ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৫, ০৮:৩৯

মিশরের হাসপাতাল থেকে ৭ মাস পর মুক্তি পেলো অগ্নিদগ্ধ দুই প্রবাসী

মারা গেলেন চাঁদপুরের ফাইজুল

আফছার হোসাইন, মিশর থেকে
মিশরের হাসপাতাল থেকে ৭ মাস পর মুক্তি পেলো অগ্নিদগ্ধ দুই প্রবাসী

মিশরে বাংলাদেশ দূতাবাস আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে ১৫ লাখ টাকা মওকুফ করিয়ে ছাড়িয়ে আনলো অগ্নিদগ্ধ দুই বাংলাদেশি প্রবাসীকে। ভাগ্যের পরিবর্তন আর পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে মিশর এসেছিলেন চাঁদপুরের ফাইজুল ইসলাম (৩৫), কিশোরগঞ্জের মো. হান্নান মিয়া(৪২) ও ফরিদপুরের লুৎফর রহমান (২৬)।

জানা যায়, গত সেপ্টেম্বর মাসে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এয়াহিয়া তানভির এই তিন বাংলাদেশিকে মিশরে ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যকের নিকট থেকে চার লাখ টাকা নিয়ে অকে-টু-বোর্ড অন-এরাইভ্যাল ভিসায় নিয়ে আসেন মিশরে। কায়রো বিমান বন্দরে নামার পর এদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় ইসমাইলিয়া শহরে। সেখানকার কান্তা এলাকায় একটি ছোট পোশাক কারখানায় শিক্ষানবিশ হিসেবে মাত্র ১০০ ডলার বেতনে চাকরি দেয় এয়াহিয়া। তিনজন মিলে এক রুমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দিন কাটছিল তাদের।

অক্টোবরে প্রথম সপ্তাহে একদিন কাজ থেকে বাসায় ফিরে রাতের খাবার রান্না করতে গিয়ে সিলিন্ডার গ্যাস বিস্ফোরিত হয়ে মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয় তিনজন। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সহায়তায় প্রথমে তাদেরকে ইসমায়েলিয়া আবু-খালিফা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও ফাইজুল ইসলামের অবস্থা অবনতি হওয়ায় মিশরের পুলিশ তাকে উন্নত চিকিৎসা দিতে নিয়ে যায় জাগজিগ হাসপাতালে। সেখানে তিনদিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফাইজুল। পরিবারের ইচ্ছায় কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ফাইজুলের লাশ কফিন বন্দি করে পাঠায় দেশে।

এদিকে কিশোরগঞ্জের মো. হান্নান মিয়া ও ফরিদপুরের লুৎফর রহমান একমাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করতে চাইলে চিকিৎসার বিল পরিশোধ না করায় হাসপাতালেই আটকিয়ে রাখা হয় তাদের।

খবর পেয়ে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মিস সামিনা নাজের নির্দেশে আবু খালিফা হাসপাতালে ছুটে যান দূতাবাসের কাউন্সিলর (শ্রম) মো. ইসমাইল হোসেন। তিনি গিয়ে জানতে পারেন, দুজনের হাসপাতালের বিল এসেছে ১১হাজার ইউএস ডলার। হান্নান ও লুৎফর জানায়, তাদের কাছে কোনো টাকা-পয়সা এমনকি পাসপোর্ট ও জামা কাপড় কিছুই নেই। সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দু পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও বিশাল অংকের এই বিল দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে বলে জানান দূতাবাসের কাউন্সিলর।

এ নিয়ে দূতাবাস, হাসপাতাল, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে চিঠি চালাচালি করেও সমস্যার সমাধান না করতে পেরে আবু খালিফা হাসপাতালকে বিল মওকুফ করার জন্যে অনুরোধপত্র পাঠায় দূতাবাস। এরই মধ্যে হাসপাতাল থেকে জানানো হয় যে, এই দুই বাংলাদেশীর থাকা- খাওয়া সহ বিল এসেছে প্রায় ১৪ হাজার ডলার অর্থাৎ ১৭লাখ ৫০ হাজার টাকা।

হাসপাতাল ও দূতাবাসের মধ্যে দীর্ঘ ছয়মাস দর কষাকষির পর অবশেষে ২ হাজার ডলার (২লাখ ৫০হাজার টাকা) পরিশোধ শেষে ২২ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মো. ইসমাইল হোসেন তাদেরকে মুক্ত করে আনেন।

কাজের প্রলোভন আর মিথ্যা আশ্বাসে ওকে-টু-বোর্ড অন-এরাইভ্যাল ভিসায় মিশরে লোক আনার কারিগর এয়াহিয়া তানভির ঘটনার পরপরই গা ঢাকা দেয়। তাকে বহুবার ফোন করে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দীর্ঘ ৭ মাস হাসপাতালের বন্দিদশা থেকে বেরিয়ে হান্নান ও লুৎফর জানান, ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মিশরে এসেছিলাম।

আসার আগে আমাদেরকে বলা হয়েছিল মিশরে থাকা খাওয়া সহ ভাল বেতনের চাকরি দিবে। আসার পর দেখলাম সবই ছিলো মিথ্যা আশ্বাস। দুর্ঘটনার পরপরই বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর স্যার আমাদের দেখতে আসেন ও কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন। আমাদের চিকিৎসা বিল নিয়ে হাসপাতালের সাথে কথা বলতে বেশ কয়েকবার তিনি এখানে এসেছেন। যেহেতু আমাদেরকে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে আনা হয়নি সেহেতু দূতাবাস কারো বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে পারে নি। তারা আরো বলেন, তানভিরের মতো দালালদের মিষ্টি কথার প্রলোভনে পড়ে অবৈধভাবে প্রতারিত হয়ে আর কেউ যেন এদেশে এসে এমন অবস্থায় না পড়ে। আজ দীর্ঘ ৮মাস পর মিশরের মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছি। দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ম্যাডাম সামিনা নাজ ও কাউন্সিলর ইসমাইল স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে হাসপাতালের এই বিশাল অংকের চিকিৎসা বিল না দেওয়ার কারণে আমাদেরকে জেলে যেতে হতো। আশা করি আমাদের পুড়ে যাওয়া পাসপোর্টি রি- ইস্যু করতে দূতাবাস সাহায্য করবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়