মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৫, ১০:৪৯

মসজিদ অঙ্গনেও যখন শিশুরা নিরাপদ থাকে না-

অনলাইন ডেস্ক
মসজিদ অঙ্গনেও যখন শিশুরা নিরাপদ থাকে না-

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত মো. নূরুজ্জামান (৫৭) উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মিস্ত্রি বাড়ির বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ ২০২৫) সন্ধ্যার দিকে বিষয়টি জানাজানি হয়। এর আগে ৪ মার্চ মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার চাপরাশিরহাট ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। শিশুটি স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিশুটি তার বাসার পাশের মসজিদে প্রায় নামাজ পড়তে যায়। প্রতিদিনের ন্যায় মঙ্গলবার বিকেলে শিশুটি আসরের নামাজ পড়তে যায়। নামাজ শেষে মুসল্লিরা সবাই চলে যায়। ওই সময় নূরুজ্জামান প্রস্রাব করার কথা বলে শিশুটিকে কৌশলে মসজিদের শৌচাগারে ডেকে নেয়। এরপর সেখানে তাকে বলাৎকার করে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিশুটি তার প্রতিবেশী এক মামাকে জানায় নূরুজ্জামান তাকে খুব ব্যথা দিয়েছে। তিনি যেনো আমার সাথে এ রকম আর না করে। এভাবে বিষয়টি জানাজানি হয়। এক পর্যায়ে গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে স্থানীয় মাতব্বররা অভিযুক্ত নূরুজ্জামানকে চড়-থাপ্পড় দিয়ে বিষয়টি সমাধান করে দেয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে একাধিক শিশু বলাৎকারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কবিরহাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মঞ্জুর আহমেদ বলেন, বিষয়টি জানাজানি হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগী পরিবার মামলা না করায় তাকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল আদালতে সোপর্দ করা হয়।

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে একটি মসজিদে ইমামের কক্ষে ৫ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ-চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। ৯৯৯ নম্বরে ও স্থানীয়ভাবে ফোন কলের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত ইমাম নজির আহমেদ (৫০)কে আটক করে। তবে ঘটনার শিকার শিশুটির পরিবারের কেউ থানায় অভিযোগ না দেওয়াতে অভিযুক্তকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করেছে পুুলিশ। গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের ধানুয়া গ্রামে বুধবার (১২ মার্চ ২০২৫) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় একটি প্রভাবশালী চক্র ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও শনিবার (১৫ মার্চ ২০২৫) ভুক্তভোগী শিশুটির ওই ঘটনার কথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ধানুয়া গ্রামের একটি মসজিদে ইমামতি করেন নজির আহমেদ। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় শিশুটি তার অন্যান্য সহপাঠীর সাথে খেলা করছিলো। শিশুটিকে টাকার লোভ দেখিয়ে অভিযুক্ত ওই ইমাম তার নিজ কক্ষে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি স্থানীয়রা টের পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে এবং পুলিশের কাছে ফোন কলের প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ইমাম নজির আহমেদকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। শিশুটির পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য দিতে রাজি না হওয়াতে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শেখ বলেন, স্থানীয়রা অভিযুক্ত ইমামকে নিয়ে একটি সালিসি বৈঠকে বসেছিলো। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ এসে অভিযুক্তকে নিয়ে যায়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহআলম জানান, খবর পেয়ে আমরা সাথে সাথে ঘটনাস্থল থেকে নজির আহমেদ নামে ওই ইমামকে থানা হেফাজতে নিয়ে এসেছি। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ না পাওয়াতে তাকে ৫৪ ধারায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

নোয়াখালী ও চাঁদপুরের দুটি ঘটনাতেই মসজিদ অঙ্গনকে বেছে নেয় যথাক্রমে মসজিদের মুসল্লি ও ইমাম। এতে শিশুদের মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়া এবং মসজিদ অঙ্গনে খেলাধুলা করতে যাওয়াটাও যে কোথাও কোথাও নিরাপদ নয় সেটাই যেন মনে করিয়ে দেয় অভিভাবকদের। নগণ্য সংখ্যক এমন মুসল্লি ও ইমাম যে মুসলিম সমাজের জন্যে কলঙ্কজনক এবং শতকরা প্রায় নিরানব্বই ভাগ ভালো ইমাম-মোয়াজ্জিনের জন্যে অপমানজনক সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। মসজিদে ফজর নামাজের পর কিংবা আসর নামাজের পর মক্তব্যে পড়তে গিয়েও কোথাও কোথাও শিশুরা যৌন হয়রানির শিকার হয়। বেশ কিছুদিন আগে মতলব উত্তরে তো মক্তব্যে পড়তে যাওয়া এক কন্যাশিশু মসজিদের ইমাম কর্তৃক অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে এবং বেশ ক’বছর আগে খোদ চাঁদপুর শহরে এক মসজিদের মক্তব্যে পড়তে যাওয়া আরেক কন্যাশিশু মোয়াজ্জিন কর্তৃক ধর্ষণ-চেষ্টার শিকার হয়েছে। কিন্তু ইমাম-মোয়াজ্জিন ও মসজিদের বদনাম হবে ভেবে নিজ সন্তান বা পোষ্য যৌন নির্যাতনের শিকার হবার পরও থানায় অভিযোগ করতে চায় না অভিভাবক। যেমনটি উপরোল্লিখিত দুটি ঘটনাতেই দেখা গেলো। আমরা মসজিদ অঙ্গন যাতে দুশ্চরিত্রবান নগণ্য সংখ্যক ইমাম-মোয়াজ্জিন-মুসল্লি দ্বারা আর কলুষিত হতে না পারে সেজন্যে মসজিদ কমিটি, মুসল্লিসহ আশেপাশের সকলকে সতর্ক হবার অনুরোধ জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়