প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৫, ০৯:৩৮
হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট যেন দুরারোগ্য ব্যাধি!

হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসন, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। শনিবার (৮ মার্চ ২০২৫) দুপুরে হাজীগঞ্জ বাজার এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন। সাম্প্রতিক সময়ে যানজটে নাকাল হাজীগঞ্জবাসী। এর মধ্যে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে যানজটের তীব্রতা আরো বেড়েছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ বাজারস্থ সেতুর পূর্বপাড়ে টোরাগড় এলাকায় ট্রাক থেকে তরমুজ লোড ও আনলোড করার কারণে তীব্র যানজটে পড়তে হয় যাত্রী ও পথচারীদের। তাই নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পবিত্র মাহে রমজানের প্রথমদিন থেকেই হাজীগঞ্জ বাজারে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান। সর্বশেষ শনিবার (৮ মার্চ ২০২৫) হাজীগঞ্জ বাজারে যানজট নিরসন, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত করতে অভিযান চালিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। অভিযান চলাকালে তিনি তরমুজ ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেন এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ে তরমুজ লোড ও আনলোডের নির্দেশনা দেন। এদিকে অভিযান পরিচালনাকালীন অর্থাৎ যতক্ষণ ইউএনও ও এসিল্যান্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাজারে থাকছেন ততক্ষণ বাজার যানজট মুক্ত, ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত থাকছে। কর্মকর্তারা চলে গেলে আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে ফুটপাতের হকাররা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেন বলেন, যানজট নিরসনে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট দুরারোগ্য ব্যাধির মতো। এ পর্যন্ত পুলিশ সুপার, মেয়র ও ইউএনও পর্যায়ের অনেকে এই যানজট নিরসনের বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছেন, কিন্তু কোনো উদ্যোগের ফলাফলই টেকসই হয়নি। বর্তমান ইউএনও যানজট নিরসনের প্রয়াস চালাচ্ছেন, যেটা কিছু না হওয়ার চেয়ে কিছু হওয়ার মতোই আশাপ্রদ বিষয়। দেখা যাক, তিনি কতোটুকু সফল হন।
উল্লেখ করা দরকার যে, হাজীগঞ্জ বাজার চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের দুপাশে গড়ে ওঠা চাঁদপুর জেলার সর্ববৃহৎ বাজার। এই বাজারে শুধু কি হাজীগঞ্জ উপজেলার লোকজনই যাতায়াত করে? মোটেও না। হাজীগঞ্জের চারপাশের চাঁদপুর সদর, মতলব দক্ষিণ, কচুয়া, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার লোকজনও যাতায়াত করে। এছাড়া ঐতিহাসিক বড় মসজিদের আকর্ষণে এই বাজারে উপরোল্লিখিত সাতটি উপজেলা ছাড়াও আরো কতো স্থানের মুসল্লি যে আসে, তার ইয়ত্তা নেই। একসময় শুক্রবার ও সোমবার এ দুটি হাটবারে হাজীগঞ্জ বাজারে উপচেপড়া ভিড় হতো। এখন সপ্তাহের প্রতিদিনই অনুরূপ ভিড় হয়। এই ভিড়কে পুঁজি করে এই বাজারে সড়ক দখল করে ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ফুটপাত দখল করে হকারদের রমরমা ব্যবসা চলছে বহু পূর্ব থেকেই। বিভিন্ন ধরনের সুবিধার বিনিময়ে এদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি ও গোষ্ঠী। গোয়েন্দা সংস্থার পর্যবেক্ষণ ও তথ্যের আলোকে এই ব্যক্তি/গোষ্ঠীদের চিহ্নিত করে সতর্ক ও শায়েস্তা ব্যতীত, ফুটপাত ও সড়ক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ ব্যতীত, নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডের বাইরে পুরো বাজারের যে কোনো স্থান থেকে বাসে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ ব্যতীত, ছোট ছোট যানবাহনের অনির্ধারিত স্ট্যান্ড উচ্ছেদ ব্যতীত, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অন্তত ১৪ ঘণ্টা সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় জনবল নিয়োগ ব্যতীত, সর্বোপরি বাইপাস সড়ক নির্মাণ ব্যতীত হাজীগঞ্জ বাজারের যানজটের টেকসই নিরসন হবে বলে আমরা মনে করি না।
আশির দশকে চাঁদপুর-কুমিল্লা রূটে বোগদাদ সার্ভিস শুরু হলে মাত্র দেড় ঘণ্টায় এই রূটের বাস যাত্রীরা চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা কিংবা কুমিল্লা থেকে চাঁদপুর যেতে/আসতে পারতো। সড়কে সিএনজি অটোরিকশা, ব্যাটারীচালিত অটোবাইক ও রিকশার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এই রূটে বোগদাদ কেনো, সকল বাসসহ বড়ো যানবাহনের গতি ক্রমশ হ্রাস পেয়েছে এবং দুর্ঘটনা বেড়েছে। এই রূটে বাবুরহাট, হাজীগঞ্জ ও মুদাফরগঞ্জ বাজারে এতো যানজট থাকে যে, এই দুটি বাজার পেরুতে যে কোনো যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী বড়ো ট্রাক/কাভার্ড ভ্যানের ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা, কখনো কখনো তারচে’ বেশি সময় লাগে। সেজন্যে এই রূটটি একবার অতিক্রমে বড়ো যানবাহনের কমপক্ষে আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক দিনের পর দিন এতোবেশি যানবাহনের চাপে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছে যে, এটিকে চার লেনে উন্নীত না করলে কিংবা প্রশস্ত না করলে বাবুরহাট, হাজীগঞ্জ ও মুদাফরগঞ্জ ছাড়াও এই রূটে অবস্থিত ছোট-বড় প্রতিটি বাজারই সার্বক্ষণিক যানজটে অচলাবস্থা সৃষ্টি করতে পারে। উপরোল্লিখিত সকল বিষয় নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বিআরটিএ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সড়কের সকল যানবাহনের মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সমন্বয়ে সভা ডেকে মতামত গ্রহণ করে কার্যকর ব্যবস্থাগ্রহণের সিদ্ধান্তে পৌঁছা দরকার। এমনটিতেই টেকসই ফল আসবে, অন্য কিছুতে নয়-এটি আমাদের মতো সচেতন অনেকেরই পর্যবেক্ষণ-নির্ভর অভিমত।