প্রকাশ : ০৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০৮
অভাবের তাড়নায় আত্মহনন মেনে নেয়া যায় না

অভাবের তাড়নায় কোনো মা/বাবার সন্তান বিক্রি যেমন মেনে নেয়া যায় না, তেমনি অভাবের তাড়নায় কোনো যুবকের আত্মহননও মেনে নেয়া যায় না। অথচ তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা রাজারগাঁয়ে। চাঁদপুর কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিনিধি আলমগীর কবির এ ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠে লিখেছেন, হাজীগঞ্জের রাজারগাঁও ইউনিয়নে অভাবের তাড়নায় মো. শামসুদ্দীন খান (৪০) নামে এক অসুস্থ দিনমজুর যুবক আত্মহত্যা করেছেন। অসুস্থতায় ওষুধ কেনাসহ পারিবারিক নানা চাহিদা মেটাতে না পারায় শুক্রবার (৭ মার্চ ২০২৫) দুপুরে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ঘর থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
শামসুদ্দীন খান উপজেলার ১নং রাজারগাঁও ইউনিয়নের রাজারগাঁও বাজারস্থ খান বাড়ির মো. আবারিন খানের ছেলে। অসুস্থতায় চিকিৎসা ও সাংসারিক খরচ ব্যয়সহ পারিবারিক নানা চাহিদা মেটাতে না পেরে তিনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শামসুদ্দীন খান পেশায় একজন দিনমজুর। যখন যে কাজ পেতেন, সেই কাজ করতেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। কাজ করে চলতো তার চিকিৎসা ও সংসারের ব্যয়। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তিনি ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় অভাব ছিলো তার নিত্যদিনের সঙ্গী। যার কারণে তিনি ঠিকমতো নিজের চিকিৎসা করাতে পারেননি। অপরদিকে সাংসারিক ও পারিবারিক খরচ মিটাতে হিমশিম খেতেন। অভাবের কষ্ট সইতে না পেরে অভিমানে শুক্রবার দুপুরে নিজ বসতঘরের আড়ার সঙ্গে গালায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। নিহতের স্ত্রী জানান, তিনি ভেবেছিলেন তার স্বামী (শামসুদ্দীন খান) জুমআর নামাজ আদায় করতে মসজিদে গিয়েছেন। তিনি পুকুর থেকে ঘরে এসে চেয়ার দেখতে পাননি। এ সময় চেয়ার খুঁজতে গিয়ে দেখেন তার স্বামী ঘরের আড়ার সাথে ঝুলে আছেন। নিহতের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
রাজারগাঁওয়ের দিনমজুর যুবক শামসুদ্দিন খানের প্রকট অভাবের কথা তার ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যান যদি জানতেন, তাহলে তার পাশে দাঁড়াতে পারতেন। চরম অভাবগ্রস্ত ও অসুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো সামর্থ্য আমাদের দেশের সরকারের সমাজসেবা বিভাগ, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ আনো কিছু সংস্থার আছে। কিন্তু শামসুদ্দিন খানের কল্যাণে এই সামর্থ্য কী জন্যে, কার ব্যর্থতার জন্যে কাজে লাগানো গেলো না সেটা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ আছে। আমাদের সমাজে এমন বিত্তবান চিত্তবান ব্যক্তি আছেন, যাঁরা একজন অভাবগ্রস্ত অসুস্থ মানুষ নয়, অনেকের পাশেই দাঁড়াতে পারেন। কষ্ট লাগে এখানেই যে, পবিত্র রমজান মাসে দান-সদকা-জাকাত নিয়ে যখন মুসলমানের হাত খোলা থাকে, তখন একজন শামসুদ্দিন খান অভাবের তাড়নায় আত্মহনন করলেন। আসলে শামসুদ্দিন খানের মতো অনেকেই লজ্জায় নিজের অভাব-অনটনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। অথচ তাদের বুক ফেটে যায়। সমাজে এমন অভাবগ্রস্ত লোকজনকে খুঁজে বের করার পারঙ্গমতা সাধারণত সরকারের লোকজন প্রদর্শন করতে পারে না। তবে কিছু প্রকৃত সমাজকর্মী সেটা পারেন এবং নীরবে লোকচক্ষুর অন্তরালে অভাবগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এমন একজন সমাজকর্মী রাজারগাঁওয়ে নেই, যে কিনা শামসুদ্দিন খানের মতো অভাবগ্রস্ত যুবককে খুঁজে বের করে তার পাশে দাঁড়াতে পারতেন। জীবদ্দশায় শামসুদ্দিন খানের পাশে দাঁড়ানো যায় নি বলে কি মরণোত্তর তার অসহায় স্ত্রী ও সন্তানের পাশে দাঁড়ানো যায় না? নিশ্চয়ই যায়। আমরা চাই, অভাবের তাড়নায় আত্মহননকারী রাজারগাঁওয়ের শামসুদ্দিন খানের অসহায় স্ত্রী-সন্তানদের পাশে সরকারি/বেসরকারি কেউ না কেউ দাঁড়াক।