শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৫৩

মাহে রমযানে আমলের রুটিন

মুহম্মদ শফিক আল-মোজাদ্দেদী
মাহে রমযানে আমলের রুটিন

রমাদ্বান মাস মানে আমলের বাম্পার মৌসুম। দুনিয়াবি কোনো কাজে সফলতা পেতে আমরা রুটিন বা পরিকল্পনা করে থাকি। বলা হয় পরিকল্পনা সফলতার অর্ধেক।

তাহলে যে মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, তাতে সফলকাম হতে গাফিলতি করবো কেনো! রমযান যখন আসন্ন, সে জন্য আমাদের প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা নয় কেনো?

যারা নিজের আত্মা পরিশুদ্ধ করতে চাই, রমযান তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ সুযোগ। রমযান আত্মাকে পবিত্র ও শুদ্ধিকরণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

রোযার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হলো তাকওয়া, পরহেজগারি তথা আল্লাহভীরুতা অর্জন। আর আল্লাহ ভীরুতা মানুষের চরিত্র ও কর্মকে সুন্দর করার জন্য মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে। আল্লাহ পাক বলেন: ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো বা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা বাক্বারা, ১৮৩)।

রমযান আগমন করলে বিতাড়িত শয়তানকে শিকল আবদ্ধ করা হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় আর জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়।

রহমত মাগফেরাত নাজাতের এই মাসের একটি মুহূর্তও যেনো অপচয় না হয়। তাই আসুন, সবাই যার যার মতো একটা আমলের রুটিন করি ও পরিকল্পিতভাবে ইবাদতে মনোনিবেশ করি:-

১। তাহাজ্জুদের নামাজ দিয়ে শুরু হোক প্রতিটি দিন। সে জন্য সাহরির অন্তত ১৫/২০ মিনিট আগে উঠে ৪/৬/৮ রাকআত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবো।

২। সাহরি শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসে ৭ বার আস্তাগফিরুল্লাহ, ৩ বার সূরা ফাতেহা, ১০ বার সূরা এখলাস ও ১১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করে সওয়াব রেছানী ও দোয়া করবো। অজিফা বা তাসবীহ আদায় ও মাসনুন দোয়া পড়ে সূর্য উঠার আগ পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াত বা হাদিস শরীফ পাঠ করবো। সূর্য উদয়ের ১৫-২০ মিনিট পর সালাতুল ইশরাকের ২/৪ রাকআত নফল নামাজ আদায় করবো। হাদিস মোতাবেক সালাতুল ইশরাক আদায়কারী একটি হজ্ব ও একটি ওমরার সওয়াব পাবেন। অতঃপর কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়া।

৩। চাশতের ২-১২ রাকআত নামাজ সকাল ১০টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিটের মধ্যে আদায় করা। তিরমিজি শরীফের হাদিসে এ নামাজের বিশেষ তাগাদা ও মর্তবা আছে।

৪। আউয়াল ওয়াক্তে যোহরের নামাজ আদায় করতঃ ২/৪ রাকআত নফল নামাজ আদায় ও কমপক্ষে ১০০ বার দূরুদ শরীফ পাঠ করা।

৫। আসরের নামাজ আদায় করে তিন তাসবীহ আদায় করা। আসরের ফরজের আগে ৪ রাকআত সুন্নাত আদায় করে নেবো।

৬। ইফতারের পূর্বে ইস্তেগফার, দরূদ শরীফ পাঠ ও মুনাজাত। মাগরিবের ফরজ ও সুন্নাত শেষে ২/৪ রাকআত নফল নামাজ আদায় করে জায়নামাজে বসে ৭ বার আস্তাগফিরুল্লাহ, ৩ বার সূরা ফাতেহা, ১০ বার সূরা এখলাস ও ১১ বার দরুদ শরীফ পাঠ করে সওয়াব রেছানী ও দোয়া করা। অতঃপর ৬ রাকআত আওয়াবীনের নামাজ আদায় করা।

৭। এশার নামাজ এবং ২০ রাকআত সালাতুহ তারাবীহ আদায় করা।

** আমলী সূরাগুলো যেমনঃ মূলক, ওয়াকিয়াহ, মুজাম্মিল, ইয়াসিন, আর-রহমান তেলাওয়াত করা। (বাদ ফজর ও বাদ তারাবীহ)

** সময় সুযোগ করে বিগত জীবনের কাযা নামাজগুলো আদায় করা। ( প্রতি ওয়াক্তের সাথে সাথে আদায় করে নেয়া যেতে পারে)।

** সপ্তাহে ১ দিন সালাতুত তাসবীহ আদায়ের চেষ্টা করা। জুম্মারাত বা যে কোনো দিন।

** নিজ নিজ অজিফা সময়মতো অবশ্যই পালন করবো।

** ছোট বড় সমস্ত গুনাহের কাজ পরিত্যাগ করা। আল্লাহর কাছে পূর্বের গুনাহের জন্য বেশি বেশি তওবা এস্তেগফার করা।

যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ তাকওয়ার সাথে গোনাহ মাফের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে, আল্লাহ তার পূর্বের সকল গোনাহ মাফ করে দেন।

** সারাদিন সাধ্যমতো নফল নামাজ আদায় করা ও দরূদ শরীফ পাঠ করায় রত থাকা। প্রতিবার দরূদ শরীফ পাঠে ১০টি গুনাহ মাফ, ১০টি সওয়াব ও ১০টি মর্যাদা বৃদ্ধি হয়।

** প্রতিদিন অন্তত ১ ঘণ্টা কুরআনুল কারীম তেলাওয়াতে সময় দেয়া। সম্ভব হলে অর্থসহ বুঝে বুঝে পড়া। আর আমরা যারা এখনো কুরআন পাক পড়তে শিখিনি, এই রমযানে শেখার দৃঢ় সংকল্প করি।

*** সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, ফরজ ও নির্ধারিত আমলগুলোর পর বাকী আমলগুলোর জন্য সময় নির্ধারণ করে নেয়া। এটাই হবে মূলত রুটিনের অংশ। আমরা কমবেশি সবাই রুটি রুজির জন্য কর্মব্যস্ত থাকি। দৈনন্দিন এই কাজ ও ব্যস্ততার মাঝে আখিরাতের চিরস্থায়ী কল্যাণের জন্য একটু ত্যাগ, একটু সময়, একটু মেহনত যদি না করতে পারি তবে কাল কীসের বিনিময় চাইবো রাব্বুল আলামীনের দরবারে।

★ আরও একটি বিশেষ আমল স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তা হলো- সাধ্যমতো দান খয়রাত করা। সেই সাথে দরিদ্র ও নিকট আত্মীয় স্বজনদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ। যার যার অবস্থান ও সামর্থ্য অনুয়ায়ী দিবেন।

=> কতিপয় দরুদ শরীফ =>

# আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদীন ওয়াসিলাতি ইলাইকা ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

# আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদ ওয়া আ'লা আলিহি ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।

# আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদ ওয়া আ'লা আলে মুহাম্মাদ ওয়া বারিক ওয়া সাল্লিম।

# আল্লাহুম্মা সাল্লি আ'লা সায়্যিদিনা মুহাম্মাদীন রাহমাতুল্লিল আলামীন ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লিম।

# সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম।

আল্লাহ তায়ালা সবাইকে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

বি: দ্র: এটি একটি নমুনা। সবাই যার যার সুযোগ সুবিধামত সাজিয়ে নিতে পারেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়