প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৩
ছোট্ট বিষয় হলেও ভেবে দেখার মতো

‘মতলব দক্ষিণে বোনের জমির ভুট্টা গাছ কেটে ফেললো ভাইয়েরা’-শিরোনাম দেখে সংবাদটিকে ছোট বিষয়ই মনে হয়। কিন্তু পুরো সংবাদটি পড়লে বিষয়টিকে ভেবে দেখার মতো মনে হয়। সংবাদটির বিবরণ তাই হুবহু তুলে ধরছি। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সৎ বোনের ১২ শতাংশ জমির ভুট্টা গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) মতলব দক্ষিণ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম। সরজমিনে জানা যায়, উপজেলার ৩নং খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ভানুরপাড় গ্রামের মৃত তৈয়ব আলী প্রধানের প্রথম সংসারের মেয়ে সুফিয়া বেগম তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ১২ শতাংশ জমিতে ফসল আবাদ করে আসছেন। সুফিয়া বেগমের সৎ ভাই গিয়াসউদ্দিন, হাসান, হোসেন, বোরহান, শাকিল, ফরহাদসহ আরও কয়েকজন দীর্ঘদিন ধরে জমি দখলের চেষ্টা করে আসছেন। তারা সুফিয়াকে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকিও দিয়ে আসছিলো। জমি সংক্রান্ত এই বিরোধের জেরে গত বুধবার দুপুরে গিয়াসউদ্দিনসহ অন্য ভাইয়েরা ঢাকা থেকে এসে সুফিয়া বেগমের আবাদ করা ১২ শতাংশ জমির ভুট্টা গাছ কেটে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শী এলাকার আবুল বাশারের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, আমি ঘাস কাটছিলাম। এমন সময় আমার হাত থেকে জোর করে কাঁচি নিয়ে ভূট্টা গাছগুলো কেটে ফেলে তারা। অপর প্রত্যক্ষদর্শী খাদিজা বেগম বলেন, আমি তাদেরকে বাধা দিলে তারা বলেন, আমাকে খালের পানিতে ফেলে দেবে। মো. আলফাজ উদ্দিন নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমিও তাদেরকে ভূট্টা গাছ কাটতে নিষেধ করেছি। বলেছি ফসল উঠে গেলে বসে সমাধান করা হবে। তারা আমার কথা না শুনে ভুট্টা গাছগুলো কেটে চলে যায়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম বলেন, আমার আব্বা মারা যাওয়ার পর থেকে সৎ ভাইয়েরা আমার দখলে থাকা জমি জোরপূর্বক দখল করতে চাইছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার ভুট্টা গাছ কেটে তারা পালিয়ে যায়। আমি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও মেম্বার-চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। এ ঘটনায় মতলব দক্ষিণ থানায় একটি অভিযোগ করেছি। আমি প্রশাসনের কাছে সঠিক বিচার চাই। এ বিষয়ে অভিযুক্ত গিয়াসউদ্দিনের মোবাইলে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সালেহ্ আহাম্মদ বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ সংবাদটি পড়ে অনেক পাঠক হয়তো বলতে পারেন, সুফিয়া বেগমের সৎ ভাইয়েরা তার পিতৃ প্রদত্ত ১২ শতাংশ জমির ভুট্টা গাছ কেটে ফেলে নিশ্চয়ই কোনো ক্ষোভ বা বঞ্চনায় অসন্তোষের উৎকট বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে; মূল্যবান বড়ো বড়ো গাছ তো কাটেনি কিংবা হামলা করে তো কাউকে শারীরিকভাবে আহত/নিহত করে নি। অতএব, এটা আর তেমন কী অপরাধ? আমরা বলবো, আপন বোন আর সৎ বোন যে-ই হোক না কেনো, তাকে যদি পিতা কম/বেশি জমি দিয়ে থাকেন, তাহলে সংক্ষুব্ধ ভাইয়েরা আইন/আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু আইন হাতে তুলে নিয়ে সন্ত্রাসী আচরণ করা বা করানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা মব জাস্টিসের আওতায় পড়ে। মতলবে গিয়াসউদ্দিনের মতো লোভী বা সংক্ষুব্ধ ভাই সৎ বোন সুফিয়ার জমির ফলবান ভুট্টা গাছগুলো কেটে যে হিংস্রতা ও নৃশংস মানসিকতা প্রদর্শন করেছে, সেটা আইনের দৃষ্টিতে অনেক বড়ো অপরাধ। এ ব্যাপারে পুলিশ তার পাশে পুরোপুরি দাঁড়াক, কাউকে কোনো ছাড় না দিক-এটাই আমরা চাই।