প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১৪
প্রকল্পটি নিয়ে সামগ্রিকভাবে ভাবুন

কোনো প্রকল্প টেকসই হলে সেটাকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভাগের মর্যাদা দেয়া হয়। চাঁদপুর জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-এর আওতায় মতলব উত্তরের মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প চালুর পর প্রায় চার দশক পেরিয়ে গেলেও এটিকে এখনও সফল হিসেবে আখ্যায়িত করছে না সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা, টেকসই প্রকল্প বলা তো দূরের কথা। আমলাদের প্রভাবে এ প্রকল্পটির কাজ শুরুর আগে সঠিকভাবে পরিবেশ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া যাচাই ( ইআইএ ও এসআইএ) করা হয় নি। যে কারণে এই প্রকল্প নিয়ে কতো ধরনের প্রতিক্রিয়া ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, সমস্যা এবং প্রকল্পটি রক্ষায় কতো ধরনের চ্যালেঞ্জ যে মোকাবেলা করতে হচ্ছে, সেটা গণমাধ্যমে চোখ রাখলে কারোই বুঝতে অসুবিধা হয় না। গতকাল রোববার এ প্রকল্পটি নিয়ে মতলব উত্তরের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব আলম লাভলু লিখেছেন নূতন এক উদ্বেগ সঞ্চারের সংবাদ। সংবাদটিতে তিনি লিখেছেন, মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নের খাগুরিয়া, হাপানিয়া ও নবীপুরে ধনাগোদা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করছে। এমন ভাঙ্গনে মেঘনা-ধনগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি হুমকির মুখে রয়েছে। ধনাগোদা নদীর পাড়ের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে। নদী ভাঙ্গন রোধে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) উপজেলা বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মনজুর আমিন স্বপনের নেতৃত্বে স্থানীয় বাসিন্দারা ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন। তাদের দাবি, দ্রুত নদী ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা না নিলে জমিসহ ভিটেমাটি ছাড়া হতে হবে। ভাঙ্গনের শিকার হবে মেঘনা-ধনগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি।
জানা গেছে, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের কারণে মতলব উত্তরে দিন দিন নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করছে। ভাঙ্গনে কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা, নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধটি নদী দ্বারা বেষ্টিত। নদী ভাঙ্গনের কারণে বেড়িবাঁধ এখন হুমকির মুখে। সরেজমিনে জানা যায়, বাগানবাড়ি ইউনিয়নের খাগুরিয়া, হাপানিয়া ও নবীপুর গ্রামে গত এক সপ্তাহে অসময়ের ভাঙ্গনে নদীরপাড়স্থ বাড়ি-ঘর, সংলগ্ন রাস্তা, সরকারি ঘাটলা সহ ফসলি জমি ভেঙ্গে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে কয়েক শতাধিক পরিবার। আতঙ্কে রয়েছে তিনটি গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ । উপজেলা বিএনপি'র সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়া মনজুর আমিন স্বপন বলেন, গত সপ্তাহ থেকে আবারো নতুন করে নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অনেকে ইতোমধ্যে জমি হারিয়ে পথে বসেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে কোনো দৃষ্টি নেই। কখন যে নদীতে ভেঙ্গে আমাদের ঘরবাড়ি ফসলি জমিসহ বিলীন হয়ে যায় সে আশঙ্কায় আছি। এমনকি মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধটি ঝুঁকিতে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। ইউপি সদস্য চাঁন মিয়া বলেন, নদীর পানি কমেছে, বেড়েছে নদীর স্রোত। কয়েকদিনে অনেক জায়গা ভেঙ্গেছে। ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ইটভাটা, মসজিদ, হাট-বাজার ও রাস্তাঘাট।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের দায়িত্বে নিয়োজিত পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সেলিম শাহেদ বলেন, আমি নতুন এসেছি। ভাঙ্গনের বিষয়টি আমি জানতাম না। এখন জানলাম। বিষয়টি দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরাও চাই তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আর সাথে সাথে এই প্রকল্পটি নিয়ে সামগ্রিকভাবে ভেবে দেখতে পাউবোসহ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমাদের পর্যবেক্ষণে এই প্রকল্পটির অবস্থা হচ্ছে ‘সর্বাঙ্গে ব্যথা, ঔষধ দেবো কোথা’। ভেতরে ও বাইরের সমস্যা নিয়ে একটি প্রকল্প বিপন্নতায় ভোগা ছাড়া আর কোন্ দিকে ধাবিত হতে পারে? মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প সবকিছুর ঊর্ধ্বে টেকসই হোক-এমন মানসিকতায় সংশ্লিষ্ট সকলের কাজ করা উচিত বলে আমরা মনে করি। এই প্রকল্প নিয়ে গোঁজামিল দিয়ে কাজ করে অর্থ অপচয় না করে বিশেষজ্ঞ ও পর্যবেক্ষকদের মতামত নিয়ে কার্যকর ও বাস্তবসম্মত কিছু করার উদ্যোগ নেয়া ছাড়া অন্য কিছু করা নিতান্তই লোকদেখানো হতে পারে বলে আমরা মনে করি।