প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:১০
পরিচর্যার অভাবে স্বরূপ হারাতে বসেছে ওনুআ স্মৃতি ভাস্কর্য
ফরিদগঞ্জের তিন কৃতি সন্তানের স্মরণে নির্মিত ওনুআ স্মৃতি ভাস্কর্যটি যেন হারাতে বসেছে আপন রূপ৷ সঠিক পর্যবেক্ষনের অভাবে ভাস্কর্যের চারপাশের আগাছা উদ্ভিদে ভরে গেছে। প্রকৃতির পালাবদলে রোদ-বৃষ্টি ঝড়ে যেন ক্রমাগত ভাবে গ্রাস করছে এই অঞ্চলের তিন কৃতি সন্তানের ম্যুরাল সম্বলিত এই স্মৃতি ভাস্কর্যটি।
|আরো খবর
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সৈনিক ও একাত্তেরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালী উল্লাহ নওজোয়ান, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সৈনিক, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী নুরেজ্জামান ভুঁইয়া ও ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষক আইউব আলী খান এই তিন কৃতি সন্তানের স্মরণে ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে নির্মিত হয় এই ভাস্কর্যটি। তাঁদের নামের প্রথম অক্ষর নিয়েই ভাস্কর্যটির নামকরণ করা হয় ওনুআ। ভাস্কর্যটি এই তিনজন ব্যক্তির মুখমণ্ডলের আকৃতি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যেহেতু এই তিনজনই হচ্ছেন অবক্ষিত ও অবনতিশীল সমাজকে উত্তরণের পথিকৃৎ। তাই তাদের চেহারার সাথে মিলিয়ে তিনজনেরই মুখমণ্ডলের আকৃতি দিয়ে ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছিলো।
চাঁদপুর লক্ষ্মীপুর মহাসড়কের পাশেই ফরিদগঞ্জ বাজারের দক্ষিণমুখী প্রবেশ পথে টিএন্ডটির সামনে অবস্থান দৃষ্টিনন্দন ভাস্কর্যটির। হাইওয়ে রোডের পাশে অবস্থিত হওয়ায় দূর পাল্লার যানবাহনগুলো যাতায়াত করে ভাস্কর্যটির পাশ দিয়েই ৷ যাতে অন্য অঞ্চলের মানুষের চোখে পড়ে এই ভাস্কর্যটি। সঠিক পরিচর্যার আভাবে দৃষ্টি নন্দন এই স্থাপত্য শৈলিটি ক্রমেই বিকৃত রূপ ধারণ করছে।
এর আগে ২০০৮ সালে ভাস্কর্যটি প্রতিষ্ঠার পর ভাস্কর্যটির গায়ের টেরাকোটায় খচিত কারুকাজে বেশ কিছু বানান ভুল ছিলো। ভাষা আন্দোলনের পটভূমির দৃশ্যে মিছিলের আম জনতার হাতের প্ল্যাকার্ডে 'রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই' লেখার স্থলে লেখা আছে 'রাস্ট ভাষা বাংলা ছাই'। নির্মানের পর একাধিকবার ভাস্কর্যটির সংস্কার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টেরাকোটার ভুল লেখা সংশোধনের জন্য কোন ব্যাবস্থা গ্রহন করেননি।
ফরিদগঞ্জের প্রাচীন ইতিহাস ও কীর্তিমানদের নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রয়াসে ২০০৮ সালে গঠিত হয় ওনুআ স্মৃতি সংসদ। বীর মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন দুলালের অক্লান্ত পরিশ্রমে, গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম, ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন সাংবাদক ও সুশীল সমাজের প্রচেষ্টায় আবু তাহের পাঠান সড়কের মোড়ে নির্মিত হয় এই ভাস্কর্যটি। ফরিদগঞ্জ উপজেলার তৎকালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বর্তমান ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলিম আখ্তার খানের আন্তরিকতায় ও তৎকালীন পৌর মেয়র মঞ্জিল হোসেনের আংশিক অর্থ সহায়তায় নির্মিত হয় ওনুআ স্মৃতি ভাস্কর্য।
ভাস্কর্যটির নকশাকারী ছিলেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান ভাস্কর শিল্পী অখিল পাল। যিনি বাংলা একাডেমি চত্তরের মোদের গরব ভাস্কর্যটিরও স্থপতি।
সাম্প্রতি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিষয়টি নিয়ে অনেকেই পোস্ট করেছেন। ভাস্কর্যের আশপাশের আগাছা দমন করে সঠিক রক্ষনাবেক্ষনের মাধ্যমে স্মৃতিস্তম্ভটির স্বরূপ ফিরিয়ে আনতে জোর দাবি জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
এ বিষয়ে ওনুআ স্মৃতি সংসদের সভাপতি আলমগীর হোসেন দুলাল বলেন, আমি দীর্ঘদিন ফরিদগঞ্জ না থাকায় এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। অসুস্থতার জন্য বাসা থেকে বের হচ্ছি না, কোথাও যাওয়াও হচ্ছে না । তবে যেহেতু বিষয়টি সম্পর্কে আমি চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে অবগত হয়েছি, তাই ফরিদগঞ্জের সংশ্লিষ্ট যারা দায়িত্বে আছেন মুঠোফোনে তাদেরকে জানাবো প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করার জন্য।
কালক্রমে ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অনেক কৃতিসন্তান জন্ম নিলেও তাদের মধ্যে স্মৃতিস্তম্ভে ঠাঁই পাওয়া এই তিনজন সবচেয়ে ব্যাতিক্রমী। তৎকালীন অবক্ষিত ও অবনতিশীল সমাজকে উত্তরণের জন্য শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। তৎকালীন অবক্ষয়ী সমাজের ক্রমঅবনীতিশীল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে মানুষের মাঝে নৈতিক জাগরণ ও দায়বোধ সুষ্টির প্রয়াসে ফরিদগঞ্জের কিংবদন্তি মহান তিন ব্যক্তির নামে নির্মিত মিনারটি অযত্ন অবহেলায় পড়ে না থেকে সরূপ ফিরে আসুক এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।