বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫১

শরীরে মননে স্বাস্থ্য-১

হাসপাতাল সেবাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে

অমৃত ফরহাদ
হাসপাতাল সেবাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে

স্বাস্থ্যসেবা মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। সেই অধিকারকে শতভাগ বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি এনজিও, এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ে কাজ হচ্ছে বহু আগে থেকেই। প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার কল্যাণে উন্নত স্বাস্থ্য সেবা বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে চলে আসছে। লাখ লাখ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা একটিমাত্র সরকারি হাসপাতাল দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয়। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উপজেলাবাসী আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে ভালো সেবা পাচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, বেসরকারি যেসব হাসপাতাল রয়েছে, সেগুলো কি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নাকি সেবমূলক প্রতিষ্ঠান?

খুচরা বিক্রয়, ব্যাংক, বীমা, হোটেল, রিয়েল এস্টেট, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক কর্মকাণ্ড, কম্পিউটার সেবা, বিনোদন, প্রচার মাধ্যম, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি সরবরাহ ইত্যাদি কাজ সেবা খাতের অন্তর্ভুক্ত। সেবাখাত অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বাংলাদেশের জিডিপিতে সেবা খাতের অবদান সবচেয়ে বেশি। হাসপাতালের কথা যদি বলি তাহলে বলবো, এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান।

বলা হয়ে থাকে ‘সুস্থতা কতোটা নেয়ামত তা বোঝা যায় অসুস্থ হলে।’ বা ‘স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল’। একটা সময় মোটামুটি উন্নত চিকিৎসার জন্যে উপজেলাবাসীকে জেলা সদরে যেতে হতো। আরো উন্নত চিকিৎসার জন্যে যেতে হতো ঢাকাতে। কেউ কেউতো ভারতে গিয়েও চিকিৎসা করান। আশার কথা হলো, এখন মানুষের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। ঢাকা শহর যাদের কাছে অচেনা অথবা সহযোগিতার জন্যে আত্মীয় স্বজন নেই, তাদের আর অচেনা শহরে যাওয়া লাগবে না। আপনার উপজেলা শহরেই রাজধানীর মতো চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার কথাই যদি ধরি, এখানে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে, যেখানে উন্নত মানের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। বিশেষ করে লাইফ জেনারেল হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, আল মদিনা হাসপাতাল, ফরিদগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও ইসলামিয়া হাসপাতাল। এই হাসপাতালগুলো যে শুধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই তা কিন্তু নয়। ব্যবসার পাশাপাশি তারা সেবাও দিচ্ছে। যদিও দেশের দুর্দশাগ্রস্ত খাতগুলোর অন্যতম খাত হলো স্বাস্থ্য খাত। সে বিষয়ে দ্বিতীয় কিস্তিতে অন্য একদিন লিখবো।

সকল এন্টিবায়োটিকের যেমন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, সকল ক্রিয়ার যেমন প্রতিক্রিয়া আছে, তেমনি করে সকল সুন্দর উদ্যোগ বা ভালো কাজের ভেতর কিছু অসুন্দরও প্রবেশ করবে। এটা প্রকৃতির নিয়ম। ‘দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে, আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি।’ বিষয়টি অনেকটা এরকম। এক কথায় বলতে গেলে পৃথিবীর কোনো কিছুই পারফেক্ট নয়। সবকিছুর মধ্যে কোনো না কোনো ত্রুটি থাকে। এই সত্য, এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে।

চোখ বন্ধ করে ৩০/৪০ বছর আগে চলে যান। দেখেনতো সে সময় আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন ছিলো; আমরা অসুস্থ হলে কোথায় যেতাম অথবা কী ধরনের চিকিৎসা নিতাম; আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা কেমন ছিলো। যারা ঐ সময়টা পার করেছেন, নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থার সাথে তৎকালীন চিকিৎসা ব্যবস্থার পার্থক্য। নিশ্চয়ই অনেক উন্নতি হয়েছে। যদিও মানুষের চাহিদার শেষ থাকে না। তবে এটাও ঠিক, যারা ব্যবসায়ী তারা চিন্তা করেন তাদের বিনিয়োগ উঠে আসবে কিনা। এই ধরনের ফরিদগঞ্জে ব্যয়বহুল একটি হাসপাতাল হয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানটি শুধু আকারেই বিশাল নয় কার্যক্রম এবং সেবার দিক থেকেও বিশাল। সাধারণত চালাক (যিনি শুধুমাত্র লাভের চিন্তা করেন) কোনো ব্যবসায়ী ফরিদগঞ্জ উপজেলায় এমন একটি হাসপাতাল দিবেন না। কারণ ফরিদগঞ্জ কোনো ব্যবসায়িক জোন নয় অথবা বড় শহরও নয়। বলছি ফরিদগঞ্জ লাইফ জেনারেল হাসপাতালের কথা। ৭ তলা বিশিষ্ট হাসপাতালটি নির্মাণ করতে খরচ করতে হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। হাসপাতাল সাজাতে এবং মেশিনপত্র কিনতে আরো সাড়ে পাঁচ কোটি। যন্ত্রপাতির মানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি আপোষহীন ছিলেন। জানা গেছে, এখানে উন্নতমানের কিটও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরীক্ষা নিরীক্ষায় দক্ষ এবং শিক্ষিত টেকনেশিয়ানও নিয়োগ দেওয়া আছে। এদের মধ্যে ২জন বিএসসি, ১জন ডিপ্লোমা। ২০২০ সালের ১২ আগস্ট থেকে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত চলমান রয়েছে। কখনো মুনাফার মুখ দেখেন আবার কখনো লসের গ্লানি কাঁধে বয়ে বেড়াচ্ছেন। পরিচালক, ডাক্তার, নার্স, টেকনেশিয়ান, ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সহ হাসপাতালের নিয়মিত স্টাফ ৫৮ জন। গরমকালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৫ জনে। এদের বেতন আসে মাসে প্রায় ৮/৯ লাখ টাকা। অন্যান্য খরচ আছে আরো ১০ লাখ টাকা। ২০ শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে প্রতিদিন ৪ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, ১৮ জন গেস্ট ডাক্তার থাকেন। এছাড়া হাসপাতালে ৮জন ডিপ্লোমা নার্স সহ মোট নার্স রয়েছে ১৪ জন। হাসপাতালটি ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়ে থাকে। বহু মানুষের কর্মসংস্থানে হাসপাতালটির ভূমিকা রয়েছে। এক্ষেত্রে বলবো, লাইফ জেনারেল হাসপাতাল শুধুমাত্র ব্যবসায়িকই নয়, একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানও।

ফরিদগঞ্জের ডায়াবেটিক হাসপাতালটির সুখ্যাতি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে আছে উপজেলা জুড়ে। এখানে একজন মানবিক ডাক্তার আছেন, যার কারণে হাসপাতালের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী (উপজেলায়)। বলছি ডা. সাদেকুর রহমানের কথা। কী কারণে তিনি ফরিদগঞ্জে এতো জনপ্রিয় তা এখানে লিখছি না। কারণ এই লেখার কারণে হয়তো তিনি খ্যাতির বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। তবে এক কথায় এতোটুকু বলতে পারি, ডা. সাদেকুর রহমান একজন ভালো মানুষ, একজন মানবিক ডাক্তার।

তাই আসুন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং ডাক্তারদের শুধুমাত্র শ্যেন দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবিক সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে তাদের পাশে দাঁড়াই। তারাও সমাজের সুশীল থেকে শুরু করে সাধারণকে দূরে না রেখে কাছে টেনে নিয়ে হাসপাতাল সেবাকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাক। ডাক্তারগণের দেহসত্তা হোক মানবিক এবং হৃদয়সত্তা হোক দেবত্বের। কারণ একজন ডাক্তারের হৃদয় যদি দেবত্বের আসনে না বসতে পারে, তাহলে রোগীকে যথার্থ চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। মানুষ অসহায় হয়েই চিকিৎসকের কাছে যায়। সেখানে ব্যর্থ হলে সৃষ্টিকর্তার কাছে চলে যায়।

লেখক পরিচিতি : সাধারণ সম্পাদক ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাব; প্রতিষ্ঠাতা, ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়