প্রকাশ : ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯:৩০
একটি গ্রামীণ সংগঠনের বদান্যতা
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় 'অসহায় পরিবারের পাশে পরানপুর সমাজ উন্নয়ন সংঘ' শিরোনামের সংবাদটিতে মোহাম্মদ মহিউদ্দিন লিখেছেন, মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন কচুয়া উপজেলার পরানপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (আবু সামা), যার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৩৬ বছর। তার অকাল মৃত্যুতে স্ত্রী-সন্তানসহ পুরো পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে পরানপুর সমাজ উন্নয়ন সংগঠন। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি ২০২৫) বিকেলে মৃত আবু সামার পরিবারের হাতে নগদ ৫০ হাজার টাকা তুলে দেয় সংগঠনটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন হোসেন, সহ-সভাপতি বিল্লাল হোসেন ও কোষাধ্যক্ষ আলাউদ্দিন খলিফাসহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
আমাদের দেশে শহুরে সংগঠনগুলো লাখ লাখ, এমনকি কোটি টাকা সংগ্রহ করে ক্রীড়া, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বড়ো বাজেটের অনেক কাজই করে। কিন্তু গ্রামীণ সংগঠনের জন্যে লাখ টাকা জোগাড় করাও কঠিন হয়ে যায়। ফলে বড়ো বাজেটের কোনো কাজ করা তাদের জন্যে কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। প্রধানত প্রবাসীদের অনুদাননির্ভর অধিকাংশ গ্রামীণ সংগঠন। শহুরে সংগঠনগুলোর আবেদনে বা আহ্বানে সাড়া দিয়ে বড়ো বড়ো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট হাউজগুলো কিংবা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা স্পন্সর হয়ে/ নিঃশর্ত দান করে যেভাবে হাত বাড়িয়ে দেয়, সেটা গ্রামীণ কোনো সংগঠনের জন্যে করে না। এমন বাস্তবতায় কচুয়ার পরানপুর সমাজ উন্নয়ন সংগঠন অকাল প্রয়াত আবু সামার অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবিক দায়িত্ব পালনের তাগিদে। তারা পরিবারটিকে পঞ্চাশ হাজার টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছে। এটা অনেক বড়ো অনুদান নয়, গ্রামীণ একটি সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বড়ো মনের পরিচয়ে সময়োচিত কাজ বলে সুধীজন মনে করছেন। বলা যায়, পরানপুরের এ সংগঠনটির এই কাজটি অনেকের পরান ছুঁয়েছে।
আমাদের দেশে বেসরকারি সংগঠনের প্রাচুর্য রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে অনেকেই সমাজসেবা, সমবায়, এনজিও ব্যুরোসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে এক বা একাধিক নিবন্ধন নিয়ে আয়বর্ধক নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, সরকারি অনুদান ও বিদেশি অনুদান সংগ্রহ করে প্রচারসর্বস্ব বহু কাজই করে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করে ক'টি সংগঠন--সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠে বারবার। যেটা করে সেটা নিতান্তই গতানুগতিক। এই গতানুগতিকতার বাইরে এসে কিছু করে নগণ্য সংখ্যক সংগঠন। আপাতত এমন নগণ্য সংখ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা যায় কচুয়ার পরানপুর সমাজ উন্নয়ন সংগঠনকে। তারা অকাল প্রয়াত এক ব্যক্তির পরিবারের প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়ে থেমে গেলে চলবে না। তাদেরকে নিতে হবে আরো ব্যতিক্রম কিছু উদ্যাগ। যদি তারা সেটা নেয়, ধারাবাহিকতা রক্ষা করে, তাহলে তারা হতে পারবে আলোচিত সংগঠন। একদিন এমন সংগঠনে পরিণত হতে পারলে তাদের প্রতি আমাদের আজকের প্রশংসামূলক অভিব্যক্তি যথার্থতায় পর্যবসিত হবে, অন্যথায় নয়।