বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   সৌদি প্রবাসীদের অনলাইন প্রতারণা থেকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস
  •   বরিশালে কৃষক দলের হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মসূচি পণ্ড
  •   শ্রীনগরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
  •   গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
  •   চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তা

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪৫

বৈষম্যমূলক সমাজে কাঙ্ক্ষিত সমাজরাষ্ট্র গঠনে রাজনীতি

অধ্যাপক হাছান আলী সিকদার
বৈষম্যমূলক সমাজে কাঙ্ক্ষিত সমাজরাষ্ট্র গঠনে রাজনীতি

’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মানুষ যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, দেশ, জাতি, মানুষ, মাটি আর মানচিত্র নিয়ে মানুষের চোখেমুখে নতুন দিনের স্বপ্ন। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা থেকেই সৃষ্টি হয় দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম এবং ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রায় ৯ মাস যুদ্ধের পর বিজয় পেলেও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা আদৌ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নাই। যার ফলে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের রাষ্ট্র, রাজনীতি ও সমাজে ইতিবাচক কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের প্রত্যাশা সবার। আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে সব মানুষের বাংলাদেশ। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সুশাসন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে সবার জন্যে। তা কি আদৌ প্রতিষ্ঠার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে?

যে বাংলাদেশের জন্যে ত্রিশ লক্ষ লোক প্রাণ দিলো ও দু লক্ষ মা-বোন ইজ্জত দিলো এবং এমনকি যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, সে দলটি ক্ষমতায় পায় দু’ দশক থেকেও স্বাধীনতার চেতনা বাস্তবায়িত করতে পারলো না, বরং ফ্যাসিস্ট ট্যাগ লাগিয়ে পলায়নপর হলো। সেই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী জমানা বাংলাদেশে মানুষ আর চায় না। মানুষের প্রত্যাশা জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে রাজনৈতিক দলগুলোতেও।

মানুষের চিন্তাভাবনা এবং বিশ্বাসের দরজায় কড়া নাড়ছে ন্যায়ভিত্তিক, বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতি। একই চেতনা বা স্পিরিট ছিলো ৭ মার্চ, মুক্তিযুদ্ধ, ৭ নভেম্বর, '৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আদৌ পূরণ হবে কি?

জাতীয় ষড়যন্ত্র, ভূরাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এই তিন চক্রান্তের ফলে বাংলাদেশ বারবার তার পথ হারিয়েছে। কিন্তু জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। জাতিকে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে। তবে বর্তমান সরকারও কি পূর্বকার সরকারগুলোর মত ব্যর্থ হবে?

দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে আধিপত্যবাদী ভারত অনেকটা একঘরে হয়ে যাচ্ছে। নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানকে ভারতের রাডারের অধীন করার অসৎ উদ্দেশ্যে জোর-জবরদস্তি করায় দেশগুলো প্রচণ্ড ভারতবিরোধী হয়ে উঠেছে। এখন বাংলাদেশেও তাই হচ্ছে না জোর করে বলা যাবে না। পতিত-পলায়নপর সরকার বাংলাদেশ থেকে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকার নির্বাসনে পাঠায়। দিল্লির কর্তৃত্বাধীনে বাংলাদেশকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীন জীবন ও নৈতিক মূল্যবোধের অনেকটা অবক্ষয় ঘটায়। জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিয়ে হতাশা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে এমন জটিল পরিস্থিতি কখনো দেখা যায়নি।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনের শাসন, নৈতিক-মূল্যবোধ চর্চা ও নিরপেক্ষ ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণ রাজনৈতিক দলে নেতৃত্বের উৎকর্ষতা পরিমাপ করে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন আইনের শাসন, শান্তিপূর্ণ-সহাবস্থান, নিরপেক্ষ ভোটাধিকার, পারস্পরিক সুসম্পর্ক, সুস্থধারার রাজনীতি চর্চা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত। অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে সততা, ন্যায়নীতি এবং নৈতিক মূল্যবোধ গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার ফলে রাজনীতিতে এমন বিভিন্ন ফ্যান্টাসি, ধর্মের অপব্যবহার, অর্থশক্তি এবং পেশীশক্তির উন্মত্ততা বেড়েছে। আদর্শ ও নৈতিকতার সংকটে রাজনৈতিক দলের শৃঙ্খলা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং রাজনীতিতে জনগণের আস্থা কমছে। রাজনৈতিক কর্মীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, মূল্যবোধ, চরিত্র গঠন, দক্ষতা অর্জন, পরিশ্রম করে জনপ্রিয়তা অর্জন এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান অপরিহার্য। কিন্তু বিশেষ করে ১/১১ থেকে প্রায় দুদশকের আওয়ামী শাসন বাংলাদেশের রাজনীতিকে কঠিন সংকটে ফেলে গেছে। যা দেশের ভবিষ্যৎকেও বিপদসংকুল করে তুলেছে। এ ভয়াবহ পুঁজিবাদী মোড়কে ভোগবাদী রাজনীতি থেকে বের হয়ে সুষ্ঠু ও কাঙ্ক্ষিত ধারার রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি এবং গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের নিঃশর্ত কমিটমেন্ট বেশি প্রাসঙ্গিক।

সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সব ধরনের অনাচার-অবিচার-শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে মানুষ ঐক্যবদ্ধ। আর এটাই কাম্য। ভাগ্যাহত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব ধরনের বৈষম্য থেকে দেশ-জাতি মুক্তি চায়। বৈষম্যহীন সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের রাজনীতি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার এখনই সময়। তবে কি এ সরকার কিংবা পরবর্তী সরকার পারবে ? যদি সফল হতে হয় তবে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্যে এমন রাজনীতি প্রয়োজন, যে রাজনীতি শোষণ-বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে মুক্তির কথা বলবে। যা '৭১-এর চেতনা ও জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সেন্টিমেন্ট ধারণ করে এবং গণমানুষের রাজনীতিই হোক সব রাজনৈতিক দলগুলোর একমাত্র প্রতিশ্রুতি।

রচনাকাল : ৯ ডিসেম্বর ২০২৪।

অধ্যাপক হাছান আলী সিকদার : সভাপতি, চাঁদপুর জেলা জাসদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা; চাঁদপুর জেলা শিক্ষক নেতা। সমাজ ও রাজনীতিবিশ্লেষক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়