প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০১
নৌপুলিশের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপে এক লঞ্চযাত্রীর বেঁচে যাওয়া
চাঁদপুর-ঢাকা নৌ রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি ঈগল-৩ থেকে মাসুমা আক্তার (৪২) নামে এক যাত্রী মেঘনা নদীতে পড়ে যান। তিনি বাতাসে উড়ে যাওয়া টাকা ধরতে গিয়ে পা পিছলে নদীতে পড়ে যান। এই দৃশ্য স্থানীয়রা দেখে নৌ পুলিশের সহায়তায় ওই নারীকে নদী থেকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। সোমবার (৯ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএমএস ইকবাল। উদ্ধার হওয়া নারী ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাচনমেঘ গ্রামের মো. বারাকাত উল্লাহর স্ত্রী।
পুলিশ জানায়, সকাল সোয়া ৯টায় চাঁদপুর লঞ্চঘাট থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এমভি ঈগল-৩। ওই লঞ্চেই ছিলেন যাত্রী মাসুমা আক্তার (৪০)। লঞ্চটি সদর উপজেলার তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকা অতিক্রম করার সময় মাসুমা আক্তার তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করলে ওই টাকা বাতাসে উড়ে যায়। তখন তিনি টাকা ধরতে গিয়ে পা পিছলে লঞ্চ থেকে মেঘনা নদীতে পড়ে যান। ঘটনার সময় স্থানীয়রা এই দৃশ্য দেখে নৌ পুলিশকে খবর দেন। নৌ পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় ওই নারীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে থানায় নিয়ে যায়। চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএমএস ইকবাল বলেন, উদ্ধার হওয়া ওই নারীকে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়া হয়। তিনি স্বাভাবিক হলে তার স্বামীর মোবাইল নম্বরে বিষয়টি জানানো হয়। পরে ওই নারীর স্বামী বারাকাত উল্লাহ থানায় উপস্থিত হলে তার জিম্মায় তার স্ত্রীকে সুস্থ অবস্থায় বুঝিয়ে দেয়া হয়।
মেঘনা বাংলাদেশের বৃহত্তম, প্রশস্ত ও খরস্রোতা নদী। এই নদীতে কেউ পড়ে গেলে তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতা না চালালে সাধারণত তাকে বাঁচানো যায় না। সাঁতার জানা লোকও কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর দুর্বল হয়ে পড়ে যখন কিছুটা তলিয়ে যায়, তখন স্রোতের ঘূর্ণাবর্তে পড়ে নদীর গভীর তলদেশে হারিয়ে যায় এবং লাশ পাওয়া যায় ভাটি অঞ্চলের কোনো চরে কিংবা দূরবর্তী কোনো স্থানে। এই বাস্তবতার বিপরীতে চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহতলী এলাকার এক ব্যবসায়ী লঞ্চ থেকে মেঘনায় পড়ে গিয়ে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সাঁতার কেটে বালু কাটার জাহাজের শ্রমিকদের নজরে পড়ে উদ্ধারপ্রাপ্ত হন এবং চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাশেষে সুস্থ হন। এটা ব্যতিক্রম ঘটনা, যাকে বলা যায় 'রাখে আল্লাহ মারে কে?'
ফরিদগঞ্জের সাচনমেঘ গ্রামের গৃহবধূ মাসুমা আক্তার লঞ্চ থেকে পড়ার পর যদি নদী তীরবর্তী লোকজন ও জেলেদের নজরে না আসতেন এবং তাদের মাধ্যমে নৌপুলিশের তাৎক্ষণিক সহযোগিতা না পেতেন, তাহলে তাকে নদীতে তলিয়ে মৃত্যুদূতের নিশ্চিত সাক্ষাৎ পেতে হতো। কথা হলো, লঞ্চ থেকে যাত্রীদের নদীতে পড়ে যাওয়ার ঘটনা নূতন নয়। প্রায়শই এমনটি ঘটে। কিন্তু লঞ্চের কর্মচারীদের দ্বারা নদীতে পড়ে যাওয়া যাত্রী উদ্ধারে ন্যূনতম মানবিক প্রয়াস দেখা যায় না। লঞ্চে থাকে না স্পীড বোট/ছোট নৌকা কিংবা উদ্ধারের কোনো উপকরণ (যেমন বয়া বাঁধা লম্বা শক্ত দড়ি)। ভাবটা এমন, যাত্রী পড়েছে নিজের দোষে, আমরা উদ্ধার করবো কিসে? এই ভাব নিয়ে চলা লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যে যাত্রীবান্ধব নয়--সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়। এ বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএকে ভেবে দেখে করণীয় নির্ধারণ করা এবং লঞ্চগুলো চলাচলের অনুমোদন দেয়া দরকার।