প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৭
আইন প্রয়োগকারীর দৃঢ়তা!
'হাজীগঞ্জে ইউনিয়ন যুবদল সেক্রেটারীর ৭ দিনের কারাদণ্ড' শিরোনাম দেখলেই যে কোনো পাঠকের বিস্মিত হওয়া স্বাভাবিক। কারণ, চলমান সময়ে এমনটি হবার কথা নয়। বিস্ময়ের ঘোর কাটাতে পুরো সংবাদটির পুনর্পাঠ অনিবার্য। তাই সংবাদটি তুলে ধরছি। সংবাদটিতে কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, হাজীগঞ্জ উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানকে ৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু-মাটি উত্তোলন করার অপরাধে এ কারাদণ্ড দেয়া হয়। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর ২০২৪) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান ইউনিয়নের নাসিরকোট এলাকায় এই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। জানা যায়, প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কৃষি জমি থেকে বালু-মাটি উত্তোলন এবং অপর একটি জমি ভরাট করছেন এমন অভিযোগ প্রমাণিত হয়। সেই সূত্র ধরে গত শুক্রবার বিকেলে ইউনিয়নের নাসিরকোট বিল (কৃষি মাঠ) সরজমিন পরিদর্শন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিফাত জাহান। এ সময় অভিযুক্ত মো. কামরুজ্জামান বিষয়টি স্বীকার করায় তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। হাজীগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে মো. কামরুজ্জামানকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। পরে পুলিশ তাৎক্ষণিক তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে এবং জেলহাজতে প্রেরণ করে।
কামরুজ্জামান দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়ন যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। যে কমিটি এখনো দায়িত্ব পালন করছে বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করছেন বলে দাবি করেন। কিন্তু তার এই দাবির সপক্ষে তিনি কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। যার ফলে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে তাকে সাতদিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
একটি উপজেলার প্রশাসনিক প্রধান হচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তাঁর নাম ভাঙ্গিয়ে যতো বড়ো প্রভাবশালীই হোক না কেনো, কোনো অনিয়ম বা অবৈধ কাজ করা মোটেও সঙ্গত নয়। হাজীগঞ্জে ইউনিয়ন যুবদল নেতা সে কাজটি করেছেন এবং সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, সেজন্যে তিনি শাস্তি এড়াতে পারেন নি। তারপরও কথা উঠেছে, তার দল ক্ষমতায় থাকলে কিংবা উপরের পর্যায়ের কেউ ফোন করলে কি ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক কারাদণ্ড প্রদানে এতোটা দৃঢ়তার পরিচয় দিতেন? বড়ো জোর সামান্য জরিমানা করে তাকে ছেড়ে দিতেন। সে যা-ই হোক, বিচারক আইন সবার জন্যে সমান নীতিতে যে দৃঢ়তা প্রদর্শন করেছেন, সেটা যেমন দৃষ্টান্ত, তেমনি অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণকারীদের জন্যে সতর্ক বার্তা। আমরা সবসময় আইন প্রয়োগে বিচারকের এমন দৃঢ়তাই চাই।