প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:১২
কবি নজরুলের চূড়ান্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির অপেক্ষার অবসান হোক
গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠ সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে 'কাজী নজরুলকে জাতীয় কবি ঘোষণার গেজেট প্রকাশের অনুমোদন' শিরোনামের সংবাদটি পড়ে স্বৈরশাসক এরশাদ ও ফ্যাসিবাদী হাসিনার প্রতি পাঠকমাত্রেরই বিরক্তি ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ও ঘটবে বললে অতিশয়োক্তি হবে না। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, অবশেষে প্রেম ও দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ হচ্ছে। তাকে জাতীয় কবি হিসেবে ভূষিত করে গেজেট প্রকাশের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৪) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাবটি এনেছে। তবে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়নি উপদেষ্টা পরিষদ।এ বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের রুটিন দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত সচিব মো. আতাউর রহমান বলেন, সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়নি। কারণ সংবিধান সংশোধন করতে হলে সংসদ লাগে। এখন তো সে অবস্থা নেই। যখন সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি আসবে তখন এটি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
১৯৮৭ সাল থেকে কাজী নজরুল ইসলামকে দেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হলেও এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো স্বীকৃতি নেই। শুধুমাত্র কবি কাজী নজরুল ইনস্টিটিউট আইনে জাতীয় কবি হিসেবে কাজী নজরুল ইসলামের নাম লেখা আছে।
কাজী নজরুল ইসলাম বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সম্পাদক। তার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনাহীন। সাহিত্যের নানান শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি।
১৮৯৯ সালের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। তার উল্লেখযোগ্য রচনাবলি-রণ সংগীত : চল্ চল্ চল্। ছোট গল্প : ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, শিউলি মালা। উপন্যাস : বঁাধন হারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা। কবিতা : প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, বিদ্রোহী, কামাল পাশা, খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খঁাদু-দাদু, আনোয়ার, রণভেরী, কোরবানী ও মোহররম।
কাজী নজরুল ইসলাম জগত্তারিণী স্বর্ণপদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, পদ্মভূষণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধি পেয়েছেন।
১৯৪২ সালে কাজী নজরুল মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিক তার সব সক্রিয়তার অবসান হয়। মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। সে বছরই ২৯ আগস্ট (১২ ভাদ্র, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন তিনি। সূত্র : জাগো নিউজ।
কাজী নজরুল ইসলামকে নাগরিকত্ব দেয়ার ১১ বছর পর ১৯৮৭ সালে তঁাকে এরশাদ সরকার জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছে এবং নজরুল ইনস্টিটিউট আইনে জাতীয় কবি লিখার ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু গেজেট প্রকাশ করে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়াটা কি তাদের জন্যে খুব কঠিন কাজ ছিলো? তারপরের সরকারগুলোও এ ব্যাপারে কিছু করেনি। সর্বশেষ ১৫ বছরের অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা তার পিতা কর্তৃক কবি নজরুলকে ১৯৭২ সালে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানে গেজেট প্রকাশ ও কবির নাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি করা অতি আবশ্যক ছিলো। কিন্তু তিনি নিশ্চয়ই কোনো অদৃশ্য সুতার টানে সেটি করেন নি। এটা দুঃখজনক। অবশেষে সেটার অবসান ঘটাতে বর্তমান সংস্কারপন্থী অন্তর্বর্তী সরকার নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করতে গেজেট প্রকাশের যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি অবশ্যই যুগান্তকারী । ইতিহাসে একদিন এটি মর্যাদার সাথে স্থান পাবে। এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা রক্ষায় পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার জাতীয় সংসদে আলোচনা করে নজরুলকে জাতীয় কবি হিসেবে দেশের পবিত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্তিতে আন্তরিক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশাবাদী। সেই আশা পূরণের মধ্য দিয়ে নজরুলভক্ত পুরো দেশবাসীর প্রায় অর্ধ শতাব্দীর অপেক্ষার অবসান হোক--নিরন্তর আমরা সেটাই প্রত্যাশা করি।