সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৪৭

ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যে সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করা অন্যায় নয় কি?

মিজানুর রহমান রানা
ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যে সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করা অন্যায় নয় কি?

একটি জাতীয় দৈনিকে ‘ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য সরকারি বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিধান’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, কতিপয় লোকজন নিয়মবহির্ভূতভাবে ইচ্ছামতো বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যে সরকারি বিদ্যুৎ ব্যবহারের বিধান কতোটা যুক্তিসঙ্গত তা’ আমাদের বোধগম্য নয়। এটা একেবারেই নীতি লঙ্ঘনের কারণ না হয়।

বিদ্যুৎ চুরি হলো বৈদ্যুতিক শক্তি চুরি করার অপরাধমূলক অনুশীলন। বিদ্যুৎ চুরির দণ্ড বিধান হিসেবে আমরা জানি, (১) কোনো ব্যক্তি বাসগৃহ বা কোনো স্থানে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করিলে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড অথবা চুরিকৃত বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। (২) কোনো ব্যক্তি শিল্প ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে বিদ্যুৎ চুরি করিলে অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ড অথবা চুরিকৃত বিদ্যুতের মূল্যের দ্বিগুণ অথবা ৫ (পঁাচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন।

বিদ্যুৎ জাতীয় সম্পদ। মেইন লাইন থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া বিদ্যুৎ চুরি করার শামিল। আর ব্যক্তিগত সম্পদের মতো জাতীয় সম্পদ চুরি করাও হারাম। বরং জাতীয় সম্পদ চুরি করা ব্যক্তিগত সম্পদ চুরি করার চেয়ে বেশি জঘন্য। কারণ, ব্যক্তিগত সম্পদের মালিক ব্যক্তি হলেও জাতীয় সম্পদের মালিক দেশের কোটি কোটি মানুষ। একজনের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার তুলনায় কোটি কোটি মানুষের হক নষ্ট করা অনেক বেশি জঘন্য।

আমরা জানি, আমাদের শীতের মৌসুমে পাড়া-মহল্লায় ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই এসব ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজনে রাস্তার মেইন লাইন বা সরকারি লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে হাই ভোল্টেজের লাইট জ্বালানো হয়। যথাযথ প্রক্রিয়ায় ক্রয় করা ছাড়া এভাবে সরকারি বিদ্যুৎ নেয়া অবশ্যই অন্যায়। বলা চলে, এটা চুরির মতোই গর্হিত গুনাহ ও অপরাধ। ব্যক্তিগত সম্পদ চুরি করা যেমন হারাম, জাতীয় বা সরকারি সম্পদ চুরি করাও হারাম। আবার মেইন লাইন থেকে সরকারি বিদ্যুৎ নেয়ার জন্যে বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো কর্মকর্তার মৌখিক অনুমতি যথেষ্ট নয়। কারণ তারা যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারেন, কাউকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। অতএব, আমরা বলতেই পারি যে, ব্যাডমিন্টন খেলার জন্যে সরকারি বিদ্যুৎ চুরি করা অন্যায়!

সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) এলাকায় অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের মহোৎসব চলছে। শীত আগমনের আগ থেকে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার নামে বিদ্যুতের তারে (লাইনে) আংটা লাগিয়ে দেড় শতাধিক স্থানে অবৈধভাবে এই বিদ্যুৎ ব্যবহার চলছে।

শীত আসার সাথে সাথেই এভাবেই জাতীয় সম্পদের চুরি বা অপচয়ের মহড়া শুরু হয়ে যায়। আবার বিদ্যুৎ বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশে অবৈধ পন্থায় এভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সরকারকে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হচ্ছে। কিছু দলের নেতা থেকে শুরু করে সমাজের উঁচু পর্যায়ের ব্যক্তিরাও ‘ফাও’ বিদ্যুৎ ব্যবহারে সহযোগিতা করে বা করার চেষ্টা করে থাকেন। শীত মৌসুমের শুরু থেকে রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার আয়োজন করা হয়। অন্ধকারে আলো সরবরাহের জন্যে এসব খেলার মাঠে বিদ্যুৎ লাইন থেকে মিটার ছাড়া সংযোগ নেয়া হয়; যা’ অত্যন্ত দুঃসাহসেরই বিষয়। আমাদের ধারণা, প্রতি খেলার মাঠে ৫০০ ওয়াট বা তারও বেশি ক্ষমতার ছয়টি কিংবা আটটি বাল্ব লাগিয়ে খেলার মাঠকে আলোকিত করা হয়। এতে ৫০০ ওয়াটের ছয়টি বাল্ব জ্বালালে প্রতি ঘণ্টায় তিন ইউনিট করে বিদ্যুৎ ব্যয় হয়। প্রতিটি খেলার মাঠ আলোকিত করার জন্যে ৫০০ ওয়াটের ৬-৮টি বাল্ব ব্যবহার করা হচ্ছে। এতে প্রতি রাতে ব্যাডমিন্টন খেলার নামে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে সারাদেশে।

এছাড়া শহরের বাইরেও একইভাবে অবৈধ পন্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ফলে প্রতি রাতে কয়েক হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যাচ্ছে। লোকসান হচ্ছে সরকারের লাখ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের দক্ষ লোক বা বিদ্যুৎ লাইনম্যান ছাড়া সংযোগ দেওয়ার সাহস কারো নেই। এ কাজে অবশ্যই বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্টরা জড়িত থাকতে পারে বলে আমরা মনে করি। আবার রাতে ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টের নামে রাজনৈতিক দলের নেতা ও সমাজপতিরা এসব খেলায় লাখ লাখ টাকার যোগান দিলেও বিদ্যুৎ বিল প্রদানে কোনো বরাদ্দ রাখা হয় না। ফলে বেসামাল অবস্থায় চলছে বিদ্যুৎ ব্যবহারের প্রতিযোগিতা।

আমাদের বুঝতে হবে যে, এ বিদ্যুৎ সরকারের, আর সরকার অর্থ দেশের জনগণ। খেলার নামে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা এদেশের ১৬ কোটি মানুষের সম্পদ নষ্ট করছে। অতএব, ফাও বিদ্যুৎ ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়