প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫
উদ্যোগটি একেবারে যথাসময়ের-
অসহায় গরিব শীতার্ত মানুষদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন 'বিজয়ী' নারী উন্নয়ন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা তানিয়া ইশতিয়াক খান। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর ২০২৪) চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজারস্থ ৩নং ওয়ার্ডের দাসপাড়া, পালপাড়া ও জাফরাবাদ এলাকায় নারী উদ্যোক্তাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বিজয়ী’র পক্ষ থেকে এই কম্বল বিতরণ করা হয়। বৃদ্ধ পুরুষ-নারী ও প্রতিবন্ধীদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয় এবং তার পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়। শিক্ষক বেবিন্টন দাস কিরণের পরিচালনায় ও তানিয়া ইশতিয়াক খানের সভাপ্রধানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যবসায়ী নেপাল সাহা। আরো উপস্থিত ছিলেন অনেকে।
'বিজয়ী'র কম্বল বিতরণের সংবাদটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়। এতে কতোটি কম্বল করা হয়েছে সেটি উল্লেখ নেই। তবে এবারের শীতের শুরুতে অন্য সকল সরকারি-বেসরকারি সংস্থার মধ্যে 'বিজয়ী' যে চাঁদপুরে সবার আগে কম্বল বিতরণ করেছে, সেটি সম্পর্কে ধারণা করা যায়। কেননা 'বিজয়ী'র কম্বল বিতরণের সংবাদই চাঁদপুর কণ্ঠে এবারের শীত মৌসুমে প্রথম কোনো কম্বল বিতরণের সংবাদ। তাই উদ্যোগটি কতো বড়ো সেটি বিবেচ্য নয়, বরং উদ্যোগটি যথাসময়ের কিনা সেটিই বিবেচ্য বিষয়। নিশ্চয়ই উদ্যোগটি যথাসময়ের। এই উদ্যোগটির সংবাদ পড়ে বা অন্য কোনো মাধ্যমে জেনে অনেকেই শীতার্ত মানুষের জন্যে কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নেবেন।
আমাদের দেশে শৈত্য প্রবাহে মানুষের কষ্ট দেখে টনক নড়ে কম্বল বিতরণের উদ্যোক্তাদের। তারপর তারা কম্বল সংগ্রহ করে বিতরণ শুরু করতে করতে শৈত্য প্রবাহ কমে যায়। আবার কেউ কেউ ব্যাপকভাবে তথা বড়ো আকারে কম্বল বিতরণের প্রস্তুতি নিতে নিতে এতোটা সময় ব্যয় করে ফেলে যে, ততক্ষণে শীত বিদায় নিতে শুরু করে। অনেকে কম্বল বিতরণের উদ্যোগ নেয় নিতান্তই ফটোসেশনের জন্যে। চাঁদপুর শহরে ফটোসেশনের একটি কমন জায়গা হচ্ছে চাঁদপুর কোর্ট স্টেশন প্ল্যাটফর্ম। কোনো কোনো উদ্যোক্তা কম্বল বিতরণে প্রত্যন্ত এলাকায় যাবার কষ্ট এড়াতে সহজে ও কম খরচে যাওয়া যায় এমন স্থানকেই গুরুত্ব দেয়। এতে কোনো কোনো ব্যক্তি ৪-৫টি কম্বল পেয়ে যায় এবং অতিরিক্ত কম্বল তারা বিক্রিও করে দেয়। ধরুন, চাঁদপুর শহরের ডাকাতিয়া নদীতে নৌকায় বসবাসরত বেদেরা হাতের নাগালেই থাকে। কিন্তু একটি নৌকা ভাড়া করে তাদের কাছে গিয়ে তাদের হাতে কম্বল তুলে দেয়ার কষ্টটুকু ক'জন করে? চাঁদপুর শহরের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে চরমেয়াশা চর। সেখানে গিয়েও কেউ কম্বল বিতরণ করতে চায় না। কারণ, সেখানে যেতে আয়েশ নেই, আছে কিছুটা কষ্ট। সে কারণে চরমেয়াশায় কম্বল বিতরণের কোনো প্রয়াস দেখা যায় না বললেই চলে। চাঁদপুর শহরের বড়ো স্টেশনে গিয়ে ছিন্নমূল মানুষের মাঝে অনেক উদ্যোক্তাকে কম্বল বিতরণে বেশ আগ্রহী দেখা যায়। কিন্তু কয়েকশ' গজ দূরে মেঘনার ভাঙ্গনবিপন্ন টিলাবাড়িতে গিয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী কিংবা চলৎশক্তিহীন মানুষের হাতে কেউ কম্বল তুলে দেয়ার কষ্টটুকু করতে চায় না। কম্বল বিতরণের জন্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মধ্যে সমন্বয় নেই বললেই চলে। যেটা আছে, সেটা কেবল প্রচার পাওয়ার আকাক্সক্ষা।
শীত উপলক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কম্বল বিতরণের পদক্ষেপ নেয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। তারা নিজেরা অনানুষ্ঠানিক ভাবে কিংবা জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে অনেক কম্বল বিতরণ করে। আবার কষ্ট এড়াতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের ওপর ভর করে। এতে ফটোসেশন ও প্রচার ভালোই হয়, কিন্তু প্রকৃত শীতার্ত মানুষের বিরাট একটি অংশ কম্বল প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিতই থেকে যায়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে যতোদিন পর্যন্ত কম্বল বিতরণের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ না নেয়া হবে, ততোদিন পর্যন্ত এমন বঞ্চনা ঘুচবে না।