শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৯

স্বপ্নবাজদের আইকন ড. মো. সবুর খান

অনলাইন ডেস্ক
স্বপ্নবাজদের আইকন ড. মো. সবুর খান

দেশে-বিদেশে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষাখাতে অসামান্য অবদান রাখা আ্ইকনিক ব্যক্তিত্ব ড. মো. সবুর খান। ব্যক্তিগত সাফল্য ছাড়িয়ে তথ্যপ্রযুক্তি ও শিক্ষায় বাংলাদেশকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া এ কারিগর ১৯৯০ সাল থেকে আজ পর্যন্ত ড্যাফোডিল পরিবারের ৫৪ টি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিইউবি)-এর চেয়ারম্যান ও দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬৫ সালের ২৩ জানুয়ারি তিনি চাঁদপুর জেলা শহরের বাবুরহাটের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোঃ ইউনূস খান ও মা রওশন আরা বেগম। তিনি বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক ও চাঁদপুর সরকারি কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা জীবন শেষে সরকারি চাকরিতে যোগ না দিয়ে মো. সবুর খান দূরদর্শী ভাবনা নিয়ে ১৯৯০ সালে তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রথমদিকের প্রতিষ্ঠান ‘ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স’ নামে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রথমে তিনি কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্রাংশসহ অন্যান্য সামগ্রী আমদানি ও কম্পিউটার বিক্রি শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে দেশের প্রথম কম্পিউটার সুপার শপ চালু করেন।

শুরুতে কম্পিউটার ব্যবসা দিয়ে শুরু হলেও বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আর্থিক খাতেও প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে, গ্রাহক সন্তুষ্টিকে পুঁজি করে সেবার মান বজায় রেখে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লি. দেশের প্রথম পাবলিক লিস্টেড তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কালিয়াকৈর হাইটেক পার্কে ম্যানুফেকচারিং ইউনিট নির্মাণ করেন।

১৯৯৬-৯৭ সালে যখন বিদেশী তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এনআইআইটি/এপটেক বাংলাদেশের বাজারে একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে, তখন তাঁর প্রতিষ্ঠিত একমাত্র দেশীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব আইটি (ডিআইআইটি) বিদেশী প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে নিজের অবস্থানকে সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয় এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে জনগণের আস্থা ও সুনাম অর্জন করে। ডিআইআইটি’তে বর্তমানে প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদিত অনার্স বিষয়ে পড়াশোনা করছে।

ডিআইআইটি’র সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করতে অনুপ্রাণিত হন। বর্তমানে ২২ হাজার দেশী-বিদেশী শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় উচ্চশিক্ষার অনন্য বিদ্যাপীঠ। বর্তমানে বাংলাদেশের বাইরে সংযুক্ত আরব আমিরাতেও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল ক্যাম্পাস স্থাপিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি অর্জন করেছে সবুজ ক্যাম্পাসের খেতাব, বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে শ্রেষ্ঠত্ব, গবেষণা ও মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের সুনাম। এ বিশ্ববিদ্যারযের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আজ বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শুরু থেকে দক্ষ ও কর্মক্ষম করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার ল্যাপটপ বিতরণ করেছে। ফলস্বরূপ পড়ালেখা শেষ করে কর্মসংস্থানের জন্যে তাদের সমস্যায় পড়তে হয় না।

ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৫% শিক্ষাথী বিভিন্ন স্কলারশিপ সুবিধার মাধ্যমে পড়াশোনা নিশ্চিত করছে।

২০০২ সালে বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তি খাতের প্রথম পাবলিক লিস্টেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড একইসাথে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত হয় এবং শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা অর্জন করে, যা বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিখাতের সবচেয়ে বড়ো মাইলফলক। ঐ বছরই ড্যাফোডিল কম্পিউটার্স লিমিটেড বাংলাদেশের বাজারে প্রথম দেশীয় ব্র্যান্ড ‘ড্যাফোডিল পিসি’ প্রবর্তন করে।

ড. মো. সবুর খান ২০০২-২০০৩ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি টাস্ক ফোর্সের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

ড. মো. সবুর খান ২০০৪-২০০৬ মেয়াদে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ও ২০১২ সালে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস ফোরাম (এইউপিএফ) সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনেও নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস এলায়েন্সস (উইটসা) পরিচালনা পর্ষদের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন ড. মো. সবুর খান। তিনি ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটিজ অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক (এইউএপি)-এর প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৪ সালের ১৬ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি (এপিউবি)-এর চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। অতি সম্প্রতি বেইজিংয়ে এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকা সহ ৫৩টি দেশের প্রায় ৭০০ প্রতিনিধির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত ‘ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস’ (আইএইউপি)-এর সাধারণ পরিষদের সভায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান, ২০২৭-২০৩০ মেয়াদকালের জন্যে ‘ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস’ (আইএইউপি)-এর কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন। ড. মো. সবুর খান প্রথম বাংলাদেশী যিনি এই মর্যাদাপূর্ণ এই বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্মে এ ধরনের নেতৃত্বের পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। বিশ্বের নামী-দামী বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধি প্রদান করে। তাছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক (এডজাঙ্কট প্রফেসর) হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বিসিএস-এর সভাপতির দায়িত্ব পালনকালে কম্পিউটার পণ্যের ওপর কর প্রত্যাহার ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করেন। ঢাকা চেম্বারের সভাপতির দায়িত্বকালীন সময়ে ২০০০ নতুন উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেন, যা দেশব্যাপী ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করে ।

তিনি তাঁর নিজ জেলা-চাঁদপুরের উন্নয়নে ও মানুষের জীবনমানের পরিবর্তনে শুরু থেকেই কাজ করে আসছেন। চাঁদপুরের শিক্ষার্থীদের কল্যাণের কথা ভেবেই তিনি চাঁদপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল কলেজ, ড্যাফোডিল পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালে ড. মো. সবুর খান ড্যাফোডিল ফ্যামিলির এক তৃতীয়াংশ সম্পদ জনস্বার্থে ব্যয় করার নিমিত্তে ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনে দান করেছেন। তিনি জীবিকা প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে চাঁদপুরের ৪০ হাজার পরিবারকে স্বাবলম্বী করে তোলেন। বৃত্তি প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক শত শিক্ষার্থীকে সম্পূর্ণ খরচ বহন করে সুশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করেছেন। ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব সোস্যাল সায়েন্স (ডিআইএসএস)-এর মাধ্যমে কয়েক শত অনাথ ও পথশিশুকে ভরণ পোষণ ও শিক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করে পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া বর্তমান যুব সমাজকে দক্ষ ও কর্মক্ষম করার লক্ষ্যে অনলাইনে ১১টি প্রশিক্ষণ কোর্স প্রদান করেন, এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ প্রশিক্ষণার্থীকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

সর্বোপরি ড্যাফোডিল পরিবার ৩৫ বছরের দীর্ঘ সময়ে হাজার হাজার কর্মীর পরিশ্রমের ফলে ধীরে ধীরে আজকের বর্তমান অবস্থায় এসেছে। এ পরিবারে বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৩৫ হাজার লোক জড়িত। দীর্ঘ ৩৫ বছর পথচলা সব সময় মসৃণ ছিলো না। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই ড. মো. সবুর খানকে এ পর্যায়ে আসতে হয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবনে তাঁর সহধর্মিণী সাহানা খান ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। তাঁদের রয়েছে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান। তাঁদের বড়ো মেয়ে সামিহা খান, ছোট মেয়ে ফারিহা খান। আর একমাত্র পুত্র অকিব খান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়