শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাজীগঞ্জে তাল গাছ থেকে পড়ে আহত যুবকের মৃত্যু
  •   অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন চৌধুরী মারা গেছেন
  •   ছেলের মামলা-হামলায় বাড়িছাড়া বৃদ্ধা মা
  •   মতলব উত্তরে ইকবাল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
  •   মতলবে ১০ কেজি গাঁজাসহ আটক ৩

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৮:২৮

ঘুড়ি উড়াবেন, সুতো যেন না ছিঁড়ে যায়

সন্তোষ দাস মনা
ঘুড়ি উড়াবেন, সুতো যেন না ছিঁড়ে যায়

যিনি শিল্পী তিনি তো তার শিল্প কর্মের জন্যে সম্মানিত হবেন এটাই স্বাভাবিক, যদি শিল্পের প্রতি তার নিখুঁত ভালোবাসা থাকে। নিখুঁত শিল্পচর্চা গভীর ভালোবাসা থেকে উৎপত্তি, শিল্পচর্চার বহুমাত্রিক শ্রেণীবিভাগ আছে। আসলে শিল্পচর্চা, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা, এটা প্রথমে নেশা থেকে মনের মাঝে বাসা তৈরি করে।

রন্ধন একটা শিল্প, কার্টুন একটা শিল্প, তেমনি মাটির তৈজসপত্র গড়া, এটাও একটা শিল্প। যাকে মৃৎশিল্পী বলা হয়। আরও আছে, যেমন : সুতা দিয়ে তৈরি তাঁতশিল্প, বেত বা বাঁশ বা কাঠ দিয়ে তৈরি কুটিরশিল্প।

আমি এখানে ধাতব জাতীয় ইন্ডাস্ট্রির কথা বলছি না, ওটাও একটা শিল্প। শিল্পী তৈরি করে যে ইন্ডাস্ট্রি, সেটা হলো, শিল্প-সংস্কৃতি ইন্ডাস্ট্রি বা ইন্সটিটিউট।

আপনার ইচ্ছাটাকে জাগ্রত করা, বা বাসনাটাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার নামই হচ্ছে শিল্প। মানে, আপনি একজন শিল্পী। যে মানুষ কোনো কিছু সৃষ্টি করতে ভালোবাসেন , তার মাথায় একটা পরিকল্পনা থাকে, তার সাথে থাকে তার মেধা আর সবটুকু শ্রম। এটা প্রথমে নেশাতেই হয়, পরে কেউ কেউ পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।

এখানে আমার আলোচ্য বিষয়, সন্তানের জীবনে বাবা-মায়ের ভূমিকা।

আমাদের বয়সী বা আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মের দিকে তাকালে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, তখনকার সময়ে ভাই-বোনদের সংখ্যা ছিলো অনেক বেশি, তারপরও বাবা- মায়েরা চেষ্টা করেছেন, সন্তান যেন মানুষ হয়। তার মানে এখনও যে মানুষ হচ্ছে না, তা বলবো না। আবার তখনও যে অমানুষ হয়নি, তাও বলা যাবে না। এ প্রসঙ্গটা টানলাম, কারণ তখনকার সময়ে ভাই-বোনের সংখ্যা ছিলো বেশি, কেয়ার করার সুযোগ ছিলো কম।

আজকের পরিবর্তিত বিশ্বে সন্তান নেবার মানসিকতা সর্বোচ্চ তিন থেকে দুইয়ে নেমে এসেছে। এটার নানাবিধ বাস্তবিক কারণ অবশ্যই আছে।

এখানে প্রাসঙ্গিক হলো, এখনকার সময়ে বাস্তবতার সাথে মিল রেখে আমাদের সমাজে দুটো সন্তানকে মানুষ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে-

উচ্চবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, অ্যাবারেজ সবাইকে।

সন্তান মানুষ করা সহজ কাজ নয়। শুধু টাকা হলেই পারবেন না। তবে হ্যাঁ, এখানে টাকাটা ভাইটাল বিষয়। গরিবের সন্তানও মানুষ হয়, এর প্রমাণ ভুরি ভুরি আছে। একটা শিশু কাদামাটি'র মতো, আপনি যে আকৃতি দিবেন, সে আকৃতিতেই সে গড়ে উঠবে।

আপনি কোন্ বয়সে সন্তানকে কতোটুকু আদর দিবেন, কতোটুকু তার চাহিদা পূরণ করবেন, কখন রেশ টেনে ধরবেন, এটা আপনাকেই বুঝতে হবে।

কোনো কোনো সময় অতিরিক্ত অন্ধ আদর, স্নেহ, ভালোবাসা সুন্দর জীবন গঠনে বাধার সৃষ্টি করে। মোদ্দা কথা, নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতেই রাখতে হবে।

একজন সন্তান মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের ভূমিকা সবচাইতে বেশি।

পিতামাতার অহেতুক নিত্য অশান্তি, সন্তানের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে, এটা কিন্তু প্রধান কারণে র মধ্যেও পড়ে।

সাধ্যের মধ্যে যা চাইলো, তাই এনে দিলেন, সব সময় এটা ঠিক নয়, তাকে কিছুটা অভাব বুঝতে দিন। অভাব মানুষের জীবনে অতি প্রাসঙ্গিক, অভাব মানুষকে সচ্ছলতার শিক্ষা দান করে, বাস্তবতা শিখায়।

সন্তান যখন একটু একটু করে বড় হবে, তখন আপনার অনুভূতিটাও অন্য রকম হবে, যা কিনা বাবা-মা ছাড়া অন্য কারো বোঝার সুযোগ নেই।

পিতামাতাকে গর্বিত করে সন্তান, সেই পিতামাতার মুখে যে কালিমা লেপন করে, সেও সন্তান। 'আমার সন্তান যেন থাকে দুধেভাতে'--এটা একটা প্রবাদ, আশীর্বাদও বলা যায়।

আপনার সন্তান সুশিক্ষায় বড়ো হবে, এর প্রধান কারিগর হবেন আপনি, আপনার মোটিভেশন ছাড়া সন্তানের মানুষ হওয়া সম্ভব নয়।

কৈশোর এবং যৌবন এই দুই অধ্যায় বড়ো সেনসিটিভ। সময় গেলে সাধন হবে না। পরিবেশ মানুষকে সুশিক্ষা দেয় আবার কুশিক্ষা দেয়, সেটা ঘর-বাইর দুটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

সম্মান, শ্রদ্ধা, বিনয় একটা মানুষকে উচ্চ মার্গে নিয়ে যায়। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেট অর্জন করে সুশিক্ষিত হওয়া সম্ভব নয়। এখন আধুনিক যুগ, আধুনিক টেকনোলজি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পরিপাধ্যও সনাতনী নয়। উচ্চতর ডিগ্রির জন্যে বাইরের দেশে পড়াশোনা করা, আগের চেয়ে সহজতর এবং যথেষ্ট সুযোগ সমৃদ্ধ।

ঘুড়ি উড়িয়ে নাটাই ছেড়ে দিবেন না, বিশেষ করে কৈশোরে, যৌবনের শিক্ষাটা নিবে, সে পূর্ববর্তী পথ থেকে, যা আপনি তাকে শিখিয়েছেন, কোন্ পথে পা রাখবে সে।

আজ যা পারবেন কাল তা পারবেন না, কারণ সেটা গত হয়ে গেছে, আই মিন মিসিং! পৃথিবীতে ভাগ্য বলতে উন্নতির সোপান নয়, উন্নতি, হলো সেটাই, যা কর্মকে বুঝায়।

এখন শৈশবকে বড়ো মিস্ করি, যদি আবার ফিরে পেতাম!

আহা! শৈশব, তুমি কতোই না সুন্দর! কুসুম কলির মতো কুয়াশাস্নাত ছিলে।

একজন মানুষ হিসেবে আপনি নিজেকে কতো পারসেন্ট মার্কস দিবেন, সেটার প্রতিফলন ঘটবে আপনার সন্তানের ওপর। সব বিষয়েই কিছু না কিছু ব্যতিক্রম থাকে, ভালোর ঘরেও খারাপ হয়, খারাপের ঘরেও ভালো হয়।

মানসিকতাই মানুষ হবার পূর্ব শর্ত।

ট্রাডিশনের স্রোতে গা ভাসাতে নেই, তাতে মন্দ আহরণ হয় বেশি। যা ভালো মনে করবেন, তাই করবেন।

মানুষের সৌন্দর্য তার অন্তরে বিরাজ করে। উপদেশ দেওয়ার মতো জ্ঞান বা শিক্ষা কোনোটাই আমার নেই, তবে মনের কথা প্রকাশ করার ইচ্ছা আমার সবসময় থাকে। আমি চাই, ঘরে ঘরে প্রতিটি বাবা-মায়ের কোলে, তাদের সন্তান যেন হয় আলোর দিশারী।

সুউচ্চ শিখরে সবাই পৌঁছাতে পারে না, তবে একজন ভালো মানুষ হতে তো দোষ নেই। তার জন্যে আপনাকেই হতে হবে একজন শিল্পী, মানুষ গড়ার কারিগর, যে স্বীকৃতি আপনাকে করবে সম্মানিত।

ঘুড়ি উড়াবেন, সুতো যেন না ছিঁড়ে যায়,

এই বঙ্গদেশে এমন হৃদয়বিদারক গান শুনি, --

চোখটাই ভিজে যায়!

"ছেলে আমার মস্ত বড় মস্ত অফিসার...... "

সবাই ভালো থাকবেন, নমস্কার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়