প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯
শহর থেকে বেশি দূরে নয়, তবুও--
'অনুমোদনহীন কারখানায় বিএসটিআইর লোগো ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে যেসব পণ্য--'শিরোনামে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, চাঁদপুর সদর উপজেলার ইসলামপুর গাছতলা গ্রামে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই অনুমোদনহীন মিনি কারখানায় তৈরি হচ্ছে সাবানের গুঁড়া, সাবান ও লিকুইডসহ বিভিন্ন পণ্য। এমনকি সার্ফ এক্সেলের মতো লোগো নকল করে বিএসটিআই'র লেভেল ব্যবহার করে সেগুলো চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার নিজ গাছতলা, বাগাদী চৌরাস্তা, নানুপুর, বাগড়া বাজার সহ বিভিন্ন মুদি দোকানে খবর নিয়ে জানা গেছে, 'নিয়ামা টয়লেট্রিস বাংলাদেশ' নামের কারখানার বিভিন্ন পণ্য তাদের দোকানে রাখছেন তারা। গ্রামের সাধারণ মানুষজন ভালো করে না জেনে, না বুঝেই নামিদামি কোম্পানী এবং বিএসটিআই'র লোগো দেখে তা ক্রয় করছেন সানন্দে। কিন্তু এসব সাবানের গুঁড়া, সাবান ও লিকুইড কতোটা মানসম্পন্ন, কী দিয়ে তৈরি এবং কতোটা কার্যকর তা কেউ যাচাই না করেই কিছুটা মূল্য কম পেয়ে নিজেদের প্রয়োজনে তা ক্রয় করছেন।
|আরো খবর
জানা যায়, চাঁদপুর সেতুর দক্ষিণ এবং পশ্চিম পাশে চাঁদপুর সদর উপজেলার ৮নং বাগাদী ইউনিয়নের ইসলামপুর গাছতলা দারুসসালাম গ্রামের গাজী বাড়ির মাসুদ গাজী নামের এক ব্যক্তি গত কয়েক বছর ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে 'নিয়ামা টয়লেট্রিস বাংলাদেশ' নামের একটি কারখানা পরিচালনা করে আসছেন। কারখানাটি পরিচালনা করতে হলে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের যে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং অনুমোদনের প্রয়োজন, তার কাছে তেমন কিছুই নেই। তবুও সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছেন তার এমন অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাছতলা দারুসসালাম গ্রামের নিজ গাজী বাড়ির সামনেই দুটি কক্ষের একটি টিনশেড পাকা বিল্ডিংয়ে সোডা দিয়ে নিজেই তৈরি করছেন নানা পণ্য। নেই কোনো সহকারী কর্মচারীও। তার ওই মিনি কারখানায় তৈরি হচ্ছে সাবানের গুঁড়া, সাবান, ডিশওয়াশ, লিকুইড, হ্যান্ড ওয়াশ, টয়লেট ক্লিনার, ডিসওয়াশ বার, মাজুনিসহ বিভিন্ন পণ্য। আর সেগুলো তিনি বাজারের নামকরা কোম্পানীর লোগো নকল করে প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআই'র লোগো ব্যবহার করে বাজারজাত করছেন নিয়মিত। আর এতে রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে বছরের পর বছর এমন মিনি কারখানা পরিচালনা করে আসলেও বিষয়টি প্রশাসন কিংবা ভোক্তা অধিকারের নজরে না পড়ায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তাই এমন নকল কারখানার বিরুদ্ধে অচিরেই অভিযান পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি সচেতন মহলের। এ বিষয়ে কারখানার পরিচালক মাসুদ গাজী বলেন, বিএসটিআইতে আমার কাগজপত্র প্রক্রিয়াধীন আছে। তাই আমি বিএসটিআইর লোগো ব্যবহার করছি।
মাসুদ গাজী যেভাবে বক্তব্য দিলেন, তাতে মনে হচ্ছে, তার কারখানাটি নূতন মোটরসাইকেলের মতো, কেউ একজন বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটিতে রেজিস্ট্রেশনের জন্যে আবেদন করেই রাস্তায় চালাতে থাকে। মাসুদ গাজীর 'নিয়ামা টয়লেট্রিসে'র এই কারখানাটি চাঁদপুর জেলা সদর থেকে দু কিলোমিটারের অধিক দূরত্বে অবস্থিত। অথচ বছরের পর বছর চলতে থাকা এ কারখানাটির সন্ধান সরকারের কোনো সংস্থা নয়, গণমাধ্যম কর্মীরাই করে দিলো। আশা করি, এই কারখানাটির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের আলোকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। বিএসটিআইতে আবেদন করেই যে কেউ সেটির লোগো ব্যবহার করতে পারেন না এবং এই লোগো ব্যবহার যে প্রতারণার শামিল ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সেটা মাসুদ গাজী ও তার অনুমোদনবিহীন কারখানার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ্যে জানান দিতে হবে বলে আমরা মনে করি।