প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯
লন্ডনে বিসিএ’র ১৭তম অ্যাওয়ার্ড উদযাপিত
বাংলাদেশী কারি শিল্পের সাফল্য : ৪ ক্যাটাগরিতে দেয়া ২৫টি সম্মাননা পুরস্কার
ব্রিটেনে বর্ণাঢ্য আয়োজনে সেরা শেফ, রেস্টুরেন্ট, টেকওয়ে মালিকদের সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশী কারি ইন্ডাস্ট্রির বৃহত্তম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ)। ২৮ অক্টোবর সোমবার লন্ডনের বিখ্যাত ওটু ইন্টারকন্টিনাল হোটেলে ব্রিটেনের মূলধারার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, কারি ইন্ডাস্ট্রির নানা শাখার বিশিষ্টজন ও সেলিব্রেটি পারসোনালিটিদের উপস্থিতিতে ১৭তম বিসিএ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এ বছর ১০টি রেস্টুরেন্ট অব দ্যা ইয়ার, ৩টি ওনার অফ দ্যা ইয়ার, ১০টি শেফ অফ দ্যা ইয়ার ও ২টি টেকওয়ে অব দ্যা ইয়ার--এই চারটি ক্যাটাগরিতে মোট ২৫টি বিসিএ সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হয়।
|আরো খবর
এবারের বিসিএ অ্যাওয়ার্ডের শ্লোগান হচ্ছে ‘টহরঃরহম ঐবৎরঃধমব রিঃয ঋৎবংয চবৎংঢ়বপঃরাব’।
সিবিবিসি জনপ্রিয় উপস্থাপক অ্যাঞ্জেলিকা বেল এবং টক রেডিও-এর ইয়ান কলিন্স-এর প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন অফিস মন্ত্রী হ্যামিশ ফ্যালকনার এমপি, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্টিফেন মরগান এবং কর্মসংস্থান ও পেনশন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্টিফেন টিমস এমপি, লর্ড করোন বিলিমরিয়া সিবিএ, ডিএলসহ ৩০ জন এমপি, লর্ডস ও মেয়র উপস্থিত ছিলেন। বিসিএ’র ‘কিংস অব স্পাইস’ শিরোনামের বাংলাদেশী কারির অর্জন উদ্যাপনকালে নেতৃবৃন্দ আগামী মার্চে সরকারের স্মল বিজনেস রিলিফ বাতিলের পরিকল্পনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অতিথিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, ব্রিটেনের জাতীয় প্রবৃদ্ধি ও খাবার সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশী কারি শিল্প। দক্ষ ও অদক্ষ স্টাফ সংকটে থাকা এই ইন্ডাস্ট্রি বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সমস্যায় নানাভাবে নিমজ্জিত।
বিসিএ ধারাবাহিকভাবে কারি শিল্পের সমস্যা ও উত্তরণের সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে আসছে। এগুলো বাস্তবায়নে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত বিসিএ-এর ধারাবাহিক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে বক্তারা বলেন, ব্রিটেনে জাতীয় দুর্যোগসহ লোকাল কমিউনিটির সামাজিক ও মানবিক কাজে বিসিএ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রাখছে। সরকারের অসহযোগিতায় বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট দিন দিন বন্ধ হচ্ছে। ব্রিটেনের কারী লাভার্স বাংলাদেশী কারির অমৃত স্বাদ উপভোগ থেকে বঞ্চিত হতে চায় না।
বিসিএ’র সভাপতি ওলী খান এমবিই বলেন, সরকার প্রবর্তিত ব্যবস্থা অনুযায়ী রিটেইল, হসপিটালিটি ও লেজার প্রোপার্টিজ ৭৫ শতাংশ কর রেহাই পাবে, যার সর্বোচ্চ সীমা প্রতি ব্যবসায় এক লক্ষ দশ হাজার পাউন্ড। এটি আগামী ছয় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে শেষ হবে। আমাদের নায্য দাবিকে যদি সরকার উপেক্ষা করে, তাহলে বিশেষ করে হসপিটালিটি খাতের শত শত ব্যবসার মৃত্যু ঘটবে। এই সেক্টরটি অতীতে বহুবার বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে। ক্যাটারার্সরা সর্বোচ্চ ত্যাগ ও সংগ্রাম করে আসলেও এবারের বিপর্যয়কে আমাদের পক্ষে সামাল দেয়া অসম্ভব। আমাদের দরকার সকলের সাহায্য ও সহযোগিতা। আমরা দ্রুত আশ্বাস চাই যে, বিজনেস রেইটস রিলিফ আরো দীর্ঘ সময়ের জন্যে বাড়ানো হবে। অন্যথায় মন্ত্রীদের হাত ধরেই ব্রিটেনের প্রিয় খাবারটির বিদায় ঘণ্টা বাজবে। বিসিএ অ্যাওয়ার্ডের আহ্বায়ক সেলিব্রেটি শেফ আতিক রহমান বিইএম বলেন, এবারের বিসিএ সম্মাননায় মূলত কারি শিল্পের সাথে জড়িত সেরাদের সাফল্য ও অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মিলিতভাবে উদ্যাপন করা হলো।
কারি ইন্ডাস্ট্রিকে সমর্থন ও বিবদমান সমস্যা উত্তরণে সরকারের কাছে জোরালো দাবি জানাতে ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই শিল্পের সাথে জড়িত বিশিষ্টজনরা এসেছেন। আমরা চাই, বাংলাদেশী কারি শিল্পের প্রভূত সম্ভাবনার দিকগুলোকে সামনে রেখেই আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হোক।
বিসিএ’র সেক্রেটারি জেনারেল মিঠু চৌধুরী বলেন, আমরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি থেকে শুরু করে কঠোর অভিবাসন আইন ইত্যাদিতে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছি। আমাদের সকল সদস্যের পক্ষ থেকে আমরা নিশ্চিত করতে চাই, ব্রিটেনের প্রতিটি রেস্টুরেন্টের কণ্ঠস্বর যেন ক্ষমতাসীনদের কাছে পৌঁছে।
লেবার পার্টির প্রতি আমাদের আহ্বান, কারি ইন্ডাস্ট্রির এই দুঃসময়ে আমাদের দাবিগুলোকে সমর্থন করে আমাদের পাশে দাঁড়ান।
চীফ ট্রেজারার টিপু রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে রেস্টুরেন্ট পরিচালনায় আমরা যেভাবে নানাবিধ কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছি, এর আগে আমরা কখনও এমন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হইনি। বাংলাদেশী কারি ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন সকলের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন ও সহযোগিতা। আমরা দেখছি, ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থানে প্রতি সপ্তাহেই রেস্টুরেন্ট বন্ধ হচ্ছে। আমরা এভাবে গ্রেট ব্রিটেনে কারি হারানোর মতো পরিস্থিতি মেনে নিতে পারি না। সংশ্লিষ্টদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া আশু প্রয়োজন।
প্রেস ও পাবলিকেশনস সেক্রেটারি নাজ ইসলাম বলেন, বাংলাদেশি কারি আধুনিক ব্রিটিশ জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই সম্মাননা পুরস্কারগুলো আমাদের কারি শিল্পের মধ্যে থাকা আলোকিত ও অনন্য প্রতিভার একটি সম্মিলিত উদ্যাপন। আমাদের শেফ ও রেস্টুরেন্টগুলো সবসময়ই নতুন কিছু উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। যাতে ভোজন রসিকরা সর্বোত্তম স্বাদ ও অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে পারেন। অর্গানাইজিং সেক্রেটারী ফরহাদ হোসেন টিপু বোর্ড অব থ্যাংকস বক্তব্যে বিলেতের বাংলাভাষি সাংবাদিক, স্পন্সর ও অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ প্রকাশ করে বলেন, বিসিএ বিশ্বাস করে, সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় একটি সফল অনুষ্ঠান সস্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। তিনি বিসিএর সকল সদস্যের সহযোগিতার জন্যে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান।
জমকালো আয়োজনে ছিল নানা বৈচিত্র্য ও সৃজনশীলতার ছাপ। ১২শ’ আমন্ত্রিত অতিথি নিয়ে সন্ধ্যা ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠানে ছিল ব্রিটেনের সেলিব্রেটিদের অংশগ্রহণে মুগ্ধকর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাথে অতিথির আতিথেয়তায় উপভোগ করেছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী কারি ইন্ডাস্ট্রির নানা স্বাদ ও পদের মৌলিক খাবার।
উল্লেখ্য, বিসিএ অ্যাওয়ার্ড-২০২৪ অনুষ্ঠানের স্পন্সর হচ্ছে--কোবরা বিয়ার, কিংফিশার বিয়ার, সুপার পলো, মাইগোয়াভা বিজনেস, ইকবো, পজিটিভ এনার্জি, ডাবলিউপিসি, দুবাইথ, ইউরো ফুডস, স্কয়ার মাইল ইন্সুরেন্স, রাঁধুনী, ন্যানো সফট, এমআর প্রিন্টার্স, স্পাইস ভিলেজ, গ্যোফ, পেটাপ, এনসিএল ট্যাভেলস, বিসিএ ফাউন্ডেশন।