প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৩৯
কবে শেষ হবে উটতলী সেতু?
বাংলাদেশে যে ক'টি নদীর ওপর অধিক সংখ্যক সেতু নির্মাণের ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে চাঁদপুরের ডাকাতিয়া নদী উল্লেখযোগ্য। এই নদীর ওপর ১০টি সেতু নির্মাণে এলজিইডি এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) সরকারের পক্ষে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কাজ করেছে ও করছে। বড়ো বাজেটে সওজ কাজ করে বলে অনেকে মনে করেন, ঠিকাদার উল্লেখযোগ্য দুর্নীতি করে না। কিন্তু চাঁদপুর সদর উপজেলার ইসলামপুর গাছতলা এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর ওপর চাঁদপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কে 'চাঁদপুর সেতু' নির্মাণে ঠিকাদার অনিয়ম করে নিজেই মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছিলেন। এই সেতুর গার্ডার ধসে পড়ার স্মৃতি এখনো অনেকের মনে আছে। সওজ-এর আওতায় একই নদীর ওপর হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে 'হাজীগঞ্জ সেতু' ও চাঁদপুর শহরে নূতনবাজার-পুরাণবাজার সংযোগ সেতু কম ঝামেলায় নির্মিত হয়ে সাধারণ্যে স্বস্তি উপহার দিয়েছে। শাহরাস্তিতে এলজিইডির আওতায় 'সূচীপাড়া সেতু' নীরবে নিভৃতে নির্মিত হয়ে যতোটা সুনাম কামিয়েছে ও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, অন্যত্র সেটা সেভাবে করতে পারেনি। চাঁদপুর সদর উপজেলার ছোট সুন্দর ও ফরিদগঞ্জের ইসলামপুরের মধ্যে নির্মিত সেতুটি দশ বছর পর মোটামুটি খুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে গত জুনে। মূল সেতুটি নির্মাণে এলজিইডি ভালো ঠিকাদার পেলেও অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে পেয়েছে সবচে' বাজে ঠিকাদার। সেজন্যে অপেক্ষার কঠিন যন্ত্রণায় ভুগতে হয়েছে সংশ্লিষ্ট সকলকে। এলজিইডিকে বিব্রত করেছে আরেকটি সেতুর ঠিকাদার। সেই সেতুটি হচ্ছে 'উটতলী সেতু'। এই সেতুটি আইনি জটিলতায় অনিশ্চয়তার অন্ধকারে নিপতিত হলেও অবশেষে আলোর সন্ধান পেয়েছে। সেটা নিয়েই গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে সরেজমিন প্রতিবেদন।
|আরো খবর
'আইনি জটিলতা কেটেছে ॥ আলোর মুখ দেখছে উটতলী সেতু' শিরোনামের প্রতিবেদনটিতে প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, ২০২৪ সালের জুন মাসে মূল সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আইনি জটিলতার বেড়াজালে পড়ে বন্ধ হয়ে যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ উটতলী সেতু। অবশেষে সকল আইনি জটিলতা পেরিয়ে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে সেতুটি। সেতুর জন্যে অধিগ্রহণকৃত জমির মূল্য গত ২২ অক্টোবর মঙ্গলবার পরিশোধের মধ্য দিয়ে পুনরায় কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া দ্রুত লয়ে সেতুর রি-এস্টিমেট করে দ্রুত টেন্ডার পক্রিয়ায় যাওয়া হবে বলে উপজেলা প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, ৫৫০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের জন্যে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত স্বপ্নের 'উটতলী সেতু' ২০২০ সালের জুলাই মাসে একনেক সভায় অনুমোদন হয়। পরে ২০২২ সালের ১৬ অক্টোবর সেই সময়ের সাবেক সংসদ সদস্য মুহম্মদ শফিকুর রহমান ও সাবেক সিনিয়র সচিব নূরুল আমিনের উপস্থিতিতে হাজার হাজার লোকজনের সমাগমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার দোহার উপজেলার মোঃ আইয়ুব আলীর মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সুরমা এন্টারপ্রাইজ। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কয়েকমাস পরে চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুটির হাজীগঞ্জের অলিপুর অংশে প্রতিষ্ঠানের সাইট নির্মাণ কাজ শুরু করার পর মাত্র ২০টি পিলারের পাইলিং কাজ সম্পন্ন করে। বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতির কারণে ২০২৩ সালের ৩০ আগস্ট চুক্তিপত্র বাতিল করে এলজিইডি। কাজের চুক্তি বাতিলের সূত্র ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হাইকোর্ট ডিভিশনে রিট করলে আদালত থেকে সেতুর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণ কাজ। অন্যদিকে জমি অধিগ্রহণের সকল কাজ সম্পন্ন হলেও স্থানীয় লোকজন তাদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ বুঝে না পাওয়ায় তারাও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সম্প্রতি এলজিইডির তৎপরতার কারণে উচ্চ আদালত রিটের বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। ফলে দ্রুত লয়ে এলজিইডি পুনরায় সেতুৃর নির্মাণ কাজ শুরু করতে সক্রিয় হয়। এরই অংশ হিসেবে সেতু নির্মাণে মোট চার একর জমির অধিগ্রহণকৃত চার কোটি ৯১ লাখ আট হাজার ৬৬৩ টাকা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী আবরার আহমেদ জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুরমা এন্টারপ্রাইজের উচ্চ আদালতে দায়ের করা রিটের নিষ্পত্তি হয়েছে। আইনি জটিলতা কেটে যাওয়ায় আমরা সেতুর কাজের রি- এস্টিমেট করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করছি।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ নানা কারণে বড়ো ধরনের ধকলের সম্মুখীন হয়। সেগুলো ক্রমশ কাটছে বলে মনে হচ্ছে। তার অন্যতম প্রমাণ উটতলী সেতু। এ সেতুটি আইনি জটিলতামুক্ত হয়েছে, কিন্তু নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতা কি মুক্ত হতে পারবে--এ প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায়। রি-এস্টিমেট করে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার পর নির্দিষ্ট ঠিকাদার চলতি বছর তো নয়ই, চলতি অর্থ বছরের শেষ নাগাদ কার্যাদেশ পায় কিনা সেটাই বিবেচনার বিষয়। তারপর সিডিউল অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদার কাজ করেন কিনা সেটাও ভাবনার বিষয়। ভালো ঠিকাদার হলে কাজ ভালোয় ভালোয় শেষ হবে। আর খারাপ হলে তো ছোট সুন্দর-ইসলামপুর সেতুর মতো দশ বছরে গিয়ে আবার ঠেকে কিনা সেটাও আশঙ্কার বিষয়। আমরা নিকট অতীতে ঠিকাদার সংক্রান্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে উটতলী সেতুর ঠিকাদার নির্বাচন ও কার্যাদেশ প্রক্রিয়ায় সন্তর্পণে পা ফেলার জন্যে এলজিইডি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।