প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫৩
কিছু কথা না বললেই নয়
পর্ব-১
অনেক দিন পর আবার হাজির হলাম কিছু কথা না বললেই নয় নিয়ে। আগের পর্ব নিয়ে বইটি ২০২৪ সালের বাংলা একাডেমির বই মেলায় প্রকাশ হয়েছিল এবং পাঠকের অনুরোধ আবারও লিখতে শুরু করলাম।
আজ আমি যার কথা নিয়ে প্রথম পর্বটি শুরু করতে যাচ্ছি, তিনি সবার পরিচিত মুখ। আমার উত্তপ্ত দুপুরের নায়িকা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম নক্ষত্র
আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী। বর্তমানে তিনি মৌসুমী নামে পরিচিত। মৌসুমীর 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' মুভিটি কতবার দেখেছি মনে নেই। আর মুভিটির সেই বিখ্যাত এই গানটি
'ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার,
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার
এক সাথে রয়েছি দুজন
এক ডোরে বঁাধা দুটি প্রাণ
ছিঁড়বেনা কভু এই বঁাধন
আসলে আসুক তুফান
তুমি আমারই বলবো শতবার
হাত দুটি ধরেছি তোমার
মানবো না কোনো বাধা আর
শুনবো না কারো কথা যে আর
মন্দ বলুক সমাজ
তুমি আমারই, হায়, বলবো শতবার
ও আমার বন্ধু গো
চির সাথী পথ চলার,
তোমারই জন্য গড়েছি আমি
মঞ্জিল ভালোবাসার।।
আজও শুনি। কোনোদিন ভাবতেই পারিনি আমার সেই নায়িকার সাথে একান্তে কথা বলবো এবং ছবি তুলতে পারবো। আমার মনে হয় আমার নায়িকা একটুও পরিবর্তন হয়নি। আজ তাই হয়ে গেলো। ওয়াশিংটন ডিসির একাত্তর ফাউন্ডেশন ফল ফেস্টিভলে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসেছিলেন। সেখানেই কিছু কথা ও ছবি নিলাম। আমার দেখা মতে তাকে অতি সাধারণ একজন মানুষ মনে হয়েছে। আমার সাথে না, এখানে সবার সাথে সুন্দর কথা সাথে মিষ্টি হাসি দিয়ে পুরোটা সন্ধ্যা কাটিয়েছেন। আমি জানতাম তিনি শুধু নায়িকা। কিন্তু আজ তিনি চমকে দিলেন আমার মতো হল ভর্তি দর্শককে। তিনি সুরেলা কণ্ঠে গান গেয়ে শোনালেন। তারপর উনার মুখ থেকে জানতে পারলাম অনেক না জানা কথা।
আরিফা পারভিন জামান মৌসুমী। ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর খুলনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন । ছোটবেলা থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক মনা ছিলেন। আর সেই ধারাবাহিকতাতেই তিনি 'আনন্দ বিচিত্রা ফটো বিউটি কনটেস্ট' প্রতিযোগিতায় বিজয়ী করেন এবং বিজয়ী হন। তারপর ১৯৯২ সাল থেকে টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠান নিয়ে হাজির হতেন। তারপর মৌসুমী ১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছায়াছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে পদার্পণ করেন। প্রথম চলচ্চিত্রে তঁার বিপরীতে ছিলেন অকাল প্রয়াত অভিনেতা সালমান শাহ। দুজনেরই এটি ছিল প্রথম চলচ্চিত্র। সিনেমাটি তখনকার সময়ে তেরো কোটি টাকা ইনকাম করে। যা ইতিহাসে রেকর্ড ব্যবসা করার নজির স্থাপন করে। মৌসুমী বনে যান সুপারস্টার। ছিনিয়ে নেন শীর্ষ নায়িকার আসন।আসনটি ধরে রেখেছিলেন ১৯৯৯ পর্যন্ত । সাত বছর মৌসুমী ছিলেন চলচ্চিত্রের শীর্ষ নায়িকা। তিনি এই পর্যন্ত প্রায় ১৪০ টি মুভিতে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, মৌসুমী ১৯৯৬ সালে 'গরীবের রাণী' ছায়াছবি দিয়ে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান। চলচ্চিত্র প্রযোজনার লক্ষ্যে তিনি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কপোতাক্ষ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ২০০৩ সালে 'কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি' দিয়ে মৌসুমী চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০১৬ সালে 'শূন্য হৃদয়' নামে একটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করেন।
মৌসুমী নায়িকা, প্রযোজক ও পরিচালকের সাথে সাথে নিজের সুরেলা কণ্ঠে ২০০৪ সালে জাহিদ হোসেন পরিচালিত 'মাত্রিহব' ছায়াছবিতে একটি গানে কণ্ঠ দেন। ২০০৭ সালে ইথুন বাবুর সুরে ২০১৪ সালে মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত তারকাটা ছায়াছবিতে 'কী যে শূন্য লাগে তুমিহীনা' গানে কণ্ঠ দেন। এছাড়া মুহাম্মদ মোস্তফা কামাল রাজের ছায়াছবি চলচ্চিত্রে 'মন যা বলে বলুক' গানের গীত রচনা করেছেন মৌসুমী।
মৌসুমীর অর্জনের অগণিত পুরস্কারের মাঝে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী তিন বার, বাচসাস পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ছয় বার, মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী ছয় বার, লাক্স চ্যানেল আই পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী তিন বার এবং প্রযোজক সমিতি পুরস্কার চার বার। এছাড়াও বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি তিনি ও বাংলাদেশের প্রথিতযশা জাদুকর জুয়েল আইচ ইউনিসেফ অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পান। ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে মৌসুমীকে আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয় । এ সম্মাননার মাধ্যমে তিনি এ সংগঠনের সদস্য মনোনীত হন।
সারাদিন লিখেও শেষ করা যাবে না আমার এই গুণী নায়িকা, প্রযোজেক, পরিচালক ও গায়িকা মৌসুমীর কথা। মৌসুমী ১৯৯৬ সালের চিত্রনায়ক ওমর সানীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। বাংলাদেশের সবচেয়ে সুখী ও স্টাইলিশ তারকা দম্পতি বলা হয় তঁাদের। দাম্পত্য জীবনে তঁাদের ফারদিন এহসান স্বাধীন (ছেলে) এবং ফাইজা (মেয়ে) নামের দুটি সন্তান রয়েছে। মৌসুমী নিজের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান 'মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন' দেখাশুনা করে থাকেন। এছাড়াও তিনি একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে কাজ করে থাকেন। তিনি ঢাকার বসুন্ধরা সিটি মার্কেটের একটি পোশাক স্টল 'লেডিস'-এর মালিকানার দায়িত্বে রয়েছেন। বর্তমানে তিনি স্বামী সন্তান নিয়ে আমেরিকা বসবাস করছেন। আপনি ভালো ও সুস্থ থাকুন। বিধাতা আপনার সহায় হোক।
লেখক : ড. আব্দুস সাত্তার, ওয়াশিংটন ডিসি, যুক্তরাষ্ট্র।