বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:৫৫

ফেসবুকে অযথা গুরুত্বহীন খেঁাচাখুঁচি ও গুজব

মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল
ফেসবুকে অযথা গুরুত্বহীন খেঁাচাখুঁচি ও গুজব

একটি স্মার্ট ফোন এখন প্রায় প্রতিটি মানুষের হাতে হাতে রয়েছে। একসময় মোবাইল ফোন হাতে থাকা সম্মানের বিষয় হয়ে দঁাড়িয়েছিল। একটি ফোন পাওয়ার অর্থই ছিলো সোনার হরিণের মতো। কালের বিবর্তনে জীবনমান পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে এখন মোবাইল ফোন হাতে থাকা কোনো বিশেষ বিবেচনার কেন্দ্রবিন্দু নয়।  মানুষের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে একসময় মূল্যায়ন করা হতো কার কয়টি বাড়ি, গাড়ি ও ব্যাংক ব্যালেন্স রয়েছে । যুবক শ্রেণীর কাছে চাহিদা ছিলো ফ্যাশন অথবা কে কতোটা স্মার্টনেসসম্পন্ন ব্যক্তি। একটি সময় মানুষ ঝুঁকে পড়েছিলো পোশাকের দিকে, ভদ্রতা-নম্রতার বালাই ভুলে ছেঁড়া-ফুটো পোশাক পরেও নিজের ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে মনে করতেন অনেকেই। এর সাথে শুধু পুরুষরাই নয়, সমান তালে নারীরাও এ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। বর্তমান সময়ে নিজেদেরকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, জ্ঞানী, বুদ্ধিজীবী হিসেবে প্রমাণ করতে এক শ্রেণীর লোকের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে। তারা এ ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের ওপর ভর করেছেন। যেমন ইচ্ছে যেভাবে ইচ্ছে নীতি বাক্য ও উপদেশ দিয়ে নিজেদেরকে ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অনেকেরই প্রোফাইলে দেখা মিলে প্রতিদিন কয়েকটা উপদেশ ভিত্তিক পোস্ট। মাঝে মাঝে মনে হয়, মানুষদের জ্ঞান না দিলে মনে হয় তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাবে। এমনও দেখা যায়, রাত দুটায় অনেকেই 'শুভ রাত্রি' লিখে পোস্ট করেন। আমরা যারা তাদের সাথে যুক্ত রয়েছি, সেই সুবাদে বুঝতে পারি সেই মহান ব্যক্তিটি এখন ঘুমাতে গিয়েছেন, অন্য ভাবে বলতে হয় তার যন্ত্রণার হাত থেকে আমরা আপাতত মুক্তি পেয়েছি!

নিজেকে মেলে ধরতে জ্ঞানী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে যতোটা না ফেসবুক উপকারে আসে, তারচে' বেশি ব্যক্তিত্ব নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে। এর পাশাপাশি ফেসবুকে কৃতিত্ব নিতে প্রতিযোগিতার হার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যে। অনেকেই মাঠ পর্যায়ে সোচ্চার না থাকলেও ফেসবুকের কল্যাণে নেতাদের ছবি ব্যবহার করে সান্নিধ্য লাভের সকল চেষ্টা অব্যাহত রাখেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী অনেকেই এটিকে চাটুকারিতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। বাস্তব জীবনে এসব মানুষ  সমাজের কোনো কাজে না আসলেও ফেসবুকে তাদের সরব উপস্থিতিতে অনেকেই বিরক্ত বোধ করছেন। সমাজে প্রতিষ্ঠিত কিছু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক কিছু মন্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে উঠে। এতে দীর্ঘ জীবনের সফলতাগুলো বিতর্কিত হয়ে যায়। তাই অযথা ফেসবুকে খেঁাচাখুঁচি মাঝে মধ্যে বিপদ ডেকে আনতে পারে।

সম্প্রতি চঁাদপুরের কয়েকটি ঘটনায় জনগণের মাঝে দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ বাজারে দু গ্রামবাসীর দুপক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন, ১২ জন, ৬ জন, ২ জন নিহত হয়েছে বলে ফেসবুকে তোলপাড় ভাইরাল হতে থাকে। কেউ কেউ রাজনৈতিক ভাবে কৃতিত্ব নিতে অতি উৎসাহী হয়ে শেয়ার করতে থাকেন। যদিও বাস্তবতার সাথে এর কোনো মিল পাওয়া যায়নি। এছাড়াও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে দিয়েছে কিছু মহান। এছাড়াও ২৬ সেপ্টেম্বর নিয়ে ফেসবুকে ভাইরাল করা হয়, যদিও দিন শেষে কোনো কিছুই দেখা যায়নি। কিছু দিন পূর্বে ফেসবুক দখল করে নেয় রাসেল ভাইপার। চারদিকে শুধু রাসেল ভাইপারের ছড়াছড়ি। বাস্তবে দেখা না গেলেও ফেসবুকের মাধ্যমে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। এসব অযথা বিরক্তিকর পোস্ট উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে করা হলেও সচেতন মহলের কেউ কেউ শেয়ার, লাইক, কমেন্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে গণমাধ্যমকর্মী দাবি করা কিছু কথিত সাংবাদিক তথ্য যাচাই না করেই পোস্ট করতে থাকেন। এমন কয়েকজনের দেখা মিলে, যারা পত্রিকার প্রতিনিধি না হয়েও ফেসবুকের কল্যাণে নিজেদেরকে সাংবাদিক বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। শুধু মাত্র একটি লাইক কমেন্টের আশায় কোনো কিছু কানে আসার সাথে সাথেই পোস্ট করে বসেন। এতে করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথে প্রকৃত সাংবাদিকগণ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। ফেসবুকের কল্যাণে এখন অনেকেই সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, জ্ঞানী হিসেবে নিজেদেরকে উপস্থাপন করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সঠিক তথ্য যাচাই না করেই পোস্ট করে বিতর্কিত হয়ে যাচ্ছেন। এতে করে মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও সুশীল সমাজের অনেকেই অস্তিত্ব সংকটে পড়তে দেখা যায়। তাই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে অযথা ফেসবুকে খেঁাচাখুঁচি বন্ধ করা প্রয়োজন। ফেসবুক যেমন পরিচিতি লাভ করার সহজতম মাধ্যম, তেমনি অযথা ফেসবুকে বিরক্তিকর পোস্ট ও খেঁাচাখুঁচি এক নিমেষেই সকল অর্জন হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই ফেসবুকে অযথা গুরুত্বহীন খেঁাচাখুঁচি বন্ধ করা ও গুজব রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

লেখক : সভাপতি, শাহরাস্তি প্রেসক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়