শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২১

পাকিস্তানের নৌকা গ্রাম যেখানে তাদের বসতি

অনলাইন ডেস্ক
পাকিস্তানের নৌকা গ্রাম যেখানে তাদের বসতি

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাকিস্তানের এক জেলে সম্প্রদায়ের প্রাচীন সংস্কৃতি আজ বিপন্ন৷ মাছের অভাবে হ্রদের উপর ভাসমান গ্রামের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে৷ পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে মানচার হ্রদের উপর শুধু হাউসবোট নিয়ে মোহানা জেলে সম্প্রদায়ের ভাসমান গ্রাম৷ অনেক প্রজন্ম ধরে মোহানারা নৌকার উপর বাসা বেঁধে থাকেন৷ কিন্তু মানচার হ্রদের ইকোসিস্টেমের অবনতির ফলে জেলেদের অর্থনৈতিক ক্ষতির মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ ভাসমান গ্রামের বাসিন্দা হুসনা মাই বলেন. ‘এখানেই আমার জন্ম, এখানেই বিয়ে হয়েছে৷ আমার সন্তানরাও এখানে বড় হয়েছে৷ আমার আট সন্তান৷ আমার স্বামী বধির, তাই আমি তাঁর সঙ্গে মাছ ধরতে যাই৷ এক কিলো মাছ পেলে বিক্রি করে সন্তানদের জন্য রুটি কিনি৷'

নৌকার এই গ্রামে মৌলিক পরিষেবারও অভাব রয়েছে৷ এক ঘরের বোট হাউসে রান্নার জন্য ছোট এক চুলা রয়েছে৷ হ্রদের আশেপাশের ঝোপঝাড় থেকে চুলার জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে হয়৷ চরম আবহাওয়ার কারণে কাঠের নৌকায় থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠছে৷ ভাসমান গ্রামের বাসিন্দা খেরি মাই বলেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টি হলে আমাদের শিশুরা ও জিনিসপত্র ভিজে যায়৷ সে সময় রান্নাও করতে পারি না৷ তখন খালি পেটে তাদের শুতে যেতে হয়৷''

হুসনা মাই বলেন, যে হ্রদের পানি পান করার যোগ্য নয়৷ পরিষ্কার পানীয় জল কেনার সামর্থ্যও তাদের নেই৷ তিনি বলেন, ‘শিশুদের ক্ষুধা কে সইতে পারে! কেউ নয়৷ পানি কিনলে শিশুদের জন্য খাবার কেনার টাকা আর থাকবে না৷ ফলে বাধ্য হয়ে শিশুদের দূষিত পানি খেতে দিতে হয়৷ কাছাকাছি কোনো হাসপাতাল নেই, স্কুলও নেই৷ পানির কোনো ফিল্টারও নেই৷'

এককালে মানচার হ্রদ জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত ছিল৷ মানুষ, মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও পাখি মিলেমিশে সেখানে বাস করতো৷ কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে কৃষিকাজে ব্যবহৃত রাসায়নিক ও শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য হ্রদের পানি দূষিত করে তোলে৷

এমন দূষণের পরিণতি হিসেবে মাছের সংখ্যাও কমে গেলো৷ ফলে বাধ্য হয়ে মোহানাদের ভিটেমাটি ছেড়ে চলে যেতে হলো৷ মাছ ব্যবসায়ী গুলাম আকবর বলেন, ‘পানি দূষিত হবার আগে প্রতিদিন ২০টি মাছ ভরা ডাটসান ট্রাক পাঠানো হতো৷ অর্থাৎ দিনে প্রায় ৩৭,০০০ কিলো মাছ ধরা হতো৷ এখন সেই পরিমাণ কমে ১,১০০ থেকে ১,৮০০ কিলো ছুঁয়েছে৷'

সিন্ধু নদীর পশ্চিমে প্রায় ২০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের মানচার লেক অবস্থিত৷ সম্ভবত মোহেঞ্জোদারো সভ্যতার সময় থেকেই সেই হ্রদে বোট হাউসে বসবাসের ঐতিহ্য চলে আসছে৷ মাছের অভাবে যে গ্রামের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

মিরবক্স মাল্লাহ মানচার হ্রদ সংরক্ষণের উদ্যোগে জড়িত৷ তাঁর মতে, মানচার হ্রদের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা আগে যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল৷ কিন্তু মানচার হ্রদের দূষণের কারণে হাউসবোটে বসতির সংস্কৃতি ধারাবাহিকভাবে কমে চলেছে৷ মিরবক্স বলেন, ‘‘সত্তরটি রিভার্স অসমোসিস প্লান্টের জন্য বাজেট থাকা সত্ত্বেও আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো, সেগুলি তৈরি হচ্ছে না৷ বেকারত্ব হলো দ্বিতীয় সমস্যা৷ এখানকার পানি আবার নির্মল হয়ে উঠলে আমাদের কৃষিকাজ, বন্যপ্রাণী ও গবাদি পশু স্থায়ীভাবে এখানে থাকতে পারবে৷''

মানুষের হস্তক্ষেপের কারণে প্রাকৃতিক মিষ্টি পানির হ্রদের মারাত্মক ক্ষতি করেছে৷ হ্রদের ইকোসিস্টেম সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে৷ তা না করলে এই ভাসমান গ্রামগুলি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শুধু কাহিনি হিসেবেই বেঁচে থাকবে৷

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়