রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৪

পৃথিবীতে কি আসলেই ৮০০ কোটি মানুষ আছে?

অনলাইন ডেস্ক
পৃথিবীতে কি আসলেই ৮০০ কোটি মানুষ আছে?

জাতিসংঘের নতুন এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের জনসংখ্যা ৮২০ কোটি থেকে বেড়ে ১ হাজার ৩০ কোটিতে দাঁড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস বা বিশ্বের সম্ভাব্য জনসংখ্যার হিসাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে যে পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ‘২০৮০-এর দশকের মাঝামাঝি শীর্ষে পৌঁছাবে, তারপর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে’। প্রতিবেদনে আরও পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, আজকে যে শিশুরা জন্মগ্রহণ করেছে তারা গড়ে ৭৩ দশমিক তিন বছর বাঁচবে, যা ১৯৯৫ সাল থেকে আট দশমিক চার বছর বেড়েছে।

অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে, জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় আদমশুমারির তথ্য, জন্ম ও মৃত্যুর হার এবং অন্যান্য জনসংখ্যাগত সমীক্ষার সমন্বয় করে নিয়মিত বিশ্ব জনসংখ্যার অনুমানিক হিসাব তৈরি করা হয়। জনমিতি হলো পরিসংখ্যানের এমন একটি অংশ যা মানুষের জনসংখ্যার নানা পরিবর্তনের বিষয়গুলো তুলে ধরে। কিন্তু আমরা কি এই সংখ্যা বিশ্বাস করতে পারি? ‘এক অযৌক্তিক বিজ্ঞান’ জনমিতি বিশেষজ্ঞ ইয়াকুব বিয়াক বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই গ্রহে মানুষের সংখ্যা গণনা করা একটি অযৌক্তিক বিজ্ঞান।’

জনমিতি বিষয়ে প্রশিক্ষিত অর্থনীতিবিদ, সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিয়াক বলেছেন, জনসংখ্যা অনুমান করার ক্ষেত্রে আপনি একটি বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন আর তা হলো এটি নিয়ে অনিশ্চয়তা। ওয়াশিংটন ডিসির গবেষণা সংস্থা পপুলেশন রেফারেন্স ব্যুরোর জনমিতি পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞ ড. টোশিকো কানেডা বলেন, ‘আমাদের কাছে কোনো ক্রিস্টাল বল (রূপকথার ভবিষ্যতের প্রতিবিম্ব দেখানো বল) নেই।’ কিন্তু তার মানে এই নয় যে, জনমিতি বিশেষজ্ঞরা জনসংখ্যার অনুমান বা তাদের ভবিষ্যৎ রূপরেখা বিষয়ক সংখ্যাগুলো শূন্য থেকে তৈরি করছে।

‘জনসংখ্যার এই হিসাব মূলত আমাদের অভিজ্ঞতা, জ্ঞান এবং আমাদের দ্বারা সংগ্রহ করা সম্ভব এমন প্রতিটি তথ্যের উপর ভিত্তি করে বের করা হয়েছে। এটা বেশ কঠিন কাজ,’ বলেছেন ডা. কানেডা। জনমিতি বিশেষজ্ঞরা ক্রমাগত তাদের অনুমান আপডেট করছেন। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘ এক দশক আগে বিশ্বের জনসংখ্যা ২১০০ সাল নাগাদ যতো হবে বলে ধারণা করেছিল। চলতি বছর সংস্থাটির অনুমান ওই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা ছয় শতাংশ কম হবে।

এই ঘন ঘন সমন্বয় সত্ত্বেও, জনসংখ্যার তথ্য সরকার এবং অন্যান্য নীতিনির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তারা ভবিষ্যতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এই আনুমানিক সংখ্যা ব্যবহার করে। সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রবণতা ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী চারজনের মধ্যে একজন এমন একটি দেশে বাস করে যার জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই সংখ্যার হিসেবে শীর্ষে পৌঁছেছে। যাই হোক, ১২৬টি দেশ এবং এলাকার জনসংখ্যা আরও তিন দশক ধরে বাড়তে থাকবে, এবং এই দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিশ্বের জনবহুল কিছু দেশ।

এই নতুন প্রতিবেদনের আরেকটি বড় আবিষ্কার হলো কোভিড-১৯ মহামারির সময় সামান্য হ্রাস পেলেও পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু আবার বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী, আজকে জন্মগ্রহণকারী মানুষ গড়ে ৭৩ দশমিক তিন বছর বাঁচবে, যা ১৯৯৫ সাল থেকে আট দশমিক চার বছর বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘মৃত্যুর হার আরো কমে যাওয়ার ফলে ২০৫৪ সালে বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু প্রায় ৭৭ দশমিক চার বছর হতে পারে।’

অভিবাসনের কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির চিত্র বেশ আলাদা। অ্যাঙ্গোলা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, নাইজার এবং সোমালিয়ার মতো কিছু দেশে পরবর্তী ৩০ বছরে জন্মের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কিন্তু জাতিসংঘের নতুন প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের কিছু অংশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় কারণ অভিবাসন।

জার্মানি, জাপান, ইতালি, রাশিয়া, থাইল্যান্ডসহ যে ১৯টি দেশের জনসংখ্যা ইতোমধ্যেই বেড়ে গিয়ে চূড়ায় পৌঁছেছে – তাদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, অভিবাসন ছাড়া দেশগুলোর জনসংখ্যার আগেই চূড়ায় উঠে এতদিনে নিচের দিকে নেমে যেত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, অভিবাসনের কারণে বেশ কয়েকটি দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি টেকসই হবে এবং ২০৫৪ সালের পরে দেশগুলোর জনসংখ্যা বৃদ্ধি চূড়ায় উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, কাতার, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশ।

অধ্যাপক বিয়াক বলেছেন, "পৃথিবী জুড়ে মানুষকে পুনর্বণ্টন করার ক্ষেত্রে অভিবাসন ক্রমেই আকর্ষণীয় প্রক্রিয়ায় পরিণত হয়েছে।"

কিন্তু ‘বেশিরভাগ দেশ অভিবাসীদের গণনা করে না, করলেও প্রতি দশ বছর পর পর আদমশুমারির সময় মাত্র একবার করে, তাও খুব সীমিত সুযোগের মধ্যে,’ যোগ করেন তিনি।

অধ্যাপক বিয়াক বলেছেন যে, কিছু দেশ জরিপ বা জনসংখ্যার নিবন্ধন ব্যবহার করে, ‘কিন্তু এই দেশগুলোর সংখ্যা হাতে গোনা- বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন উন্নত দেশে এই নিয়মে গণনা হয়ে থাকে।’

তিনি আরও বলেন, কিছু দেশ বিকল্প তথ্য ব্যবহার করে গণনার চেষ্টা করছে, ‘যেমন মোবাইল ফোন লোকেটর দিয়ে হিসাব করা। তবে এই পদ্ধতিটি নির্ভরযোগ্য হওয়ার আগে আরো পরিপক্ব হওয়া প্রয়োজন: আমাদের এই ডেটাগুলি আরও ভালোভাবে বুঝতে হবে।’

ডা. কানেডা বলেছেন যে অভিবাসনের প্যাটার্নগুলো শনাক্ত করা বেশ ভালো কাজে দিতে পারে। কেননা প্রজনন হারের চেয়ে অভিবাসন অনেক দ্রুত পরিবর্তন হয়।

‘এমনকি এখনও যেসব দেশের প্রজনন হার সবচেয়ে কম সেসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার রাতারাতি শূন্যের কোঠায় নেমে আসতে পারে এমনটাও ভাবা যায় না।’

‘কারণ এটি এতো দ্রুত পরিবর্তন হয় না। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যুদ্ধের কারণে অভিবাসন রাতারাতি পরিবর্তন হতে পারে।’

জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের জনমিতি বিশ্লেষণ বিভাগের প্রধান ক্লেয়ার মেনোজি বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসনকে তাৎক্ষণিক সমাধান হিসাবে দেখা উচিত নয়। দীর্ঘমেয়াদে জনসংখ্যা হ্রাস বা বয়স্ক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে শুধু অভিবাসন কোনো ভারসাম্য আনতে পারবে না।’

‘জনসংখ্যার ক্ষেত্রে সর্বজনীন এবং অপরিবর্তনীয় যে প্রক্রিয়া তার পরিবর্তে অভিবাসনকে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের একটি সমাধান হিসেবে দেখাও উচিত নয়।’

কেন আদমশুমারির তথ্য গুরুত্বপূর্ণ আদমশুমারিতে গণনা বা জরিপ করার নিয়মটি প্রচলিত হওয়ার পেছনে বড় কারণ মানুষকে জনসংখ্যা সম্পর্কে জানানো এবং নীতি নির্ধারণ করা এর পেছনে এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

জনমিতি বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আজ থেকে চার হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক) সভ্যতার সময়কালে ব্যাবিলনীয় সাম্রাজ্য প্রথম আদমশুমারি করেছিল।

তখন থেকে আদমশুমারি প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়েছে, কিন্তু জনমিতি বিশেষজ্ঞদের কাজ সহজ হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

ডা. কানেডা বলেছেন, ‘একটি দেশের পক্ষে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার ক্ষমতা, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের মতো খুব উন্নত দেশগুলোর জন্যও, বেশ চ্যালেঞ্জিং।’

‘এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে রয়েছে সরকারের প্রতি মানুষের ক্রমবর্ধমান অবিশ্বাস এবং গোপনীয়তা রক্ষা নিয়ে উদ্বেগ।’

‘ডেটাতে ব্যয় করলে ৩২ গুণ লাভ’ ডা. কানেডা বলেছেন যে, উন্নত বিশ্বে যে সংস্থা জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ করে তাদের বাজেট কমানো হয়েছে।

অন্যদিকে স্বল্প উন্নত এবং দরিদ্র দেশগুলোয় আগে থেকেই জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বরাদ্দ অনেক কম, সেই সাথে আছে নানা জটিলতা। যার ফলে ওইসব দেশে জনসংখ্যার তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া আরও বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে থাকে।

তবুও, জাতিসংঘ বলেছে যে ‘ডেটা সিস্টেম শক্তিশালী করার জন্য যদি এক ডলারও বেশি বিনিয়োগ করা হয় তাহলে প্রতিটি ডলারের বিপরীতে ৩২ ডলার অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যেতে পারে।’

জাতিসংঘ বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়গুলোর তথ্য সংগ্রহকে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

‘উদাহরণস্বরূপ, কিছু কিছু স্থানে কিশোরী মায়েদের (১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী) সম্পর্কে খুবই কম তথ্য পাওয়া যায়। ওইসব অঞ্চলে বয়ঃসন্ধিকালে সন্তান জন্মদান খুবই সাধারণ ব্যাপার।’

সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্টস প্রতিবেদনে, জাতিসংঘের সরকারি জনসংখ্যা অনুমান এবং এ নিয়ে ২৮তম সংস্করণ তুলে ধরা হয়।

এই মূল্যায়নটি মূলত এক হাজার ৭০০টিরও বেশি জাতীয় জনসংখ্যা শুমারির ভিত্তিতে করা হয়েছে যেগুলো পরিচালিত হয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে। পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধন ব্যবস্থা এবং দুই হাজার ৮৯০টি জাতীয়ভাবে প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা সমীক্ষা থেকেও তথ্য নেয়া হয়েছে।

এর বাইরে, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অফ হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই) এবং ভিয়েনার আইআইএএসএ-উইটজেনস্টাইন সেন্টার হলো এমন দুটি সংস্থা যারা বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা অনুমানে কাজ করে। সূত্র : বিবিসি

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়