শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

জাতীয় বীরের নীরব প্রস্থান!

অনলাইন ডেস্ক
জাতীয় বীরের নীরব প্রস্থান!

বর্তমান প্রজন্মের কাছে তাঁর তেমন পরিচয় নেই। জীবদ্দশায় তাঁর যথার্থ মূল্যায়ন হয় নি। কেউ তাঁকে নিয়ে করে নি প্রয়োজনীয় মাতামাতি। তিনি নিজেও ছিলেন নিভৃতচারী। মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্যে জীবদ্দশায় নিজে তো নয়ই, তাঁর এলাকাবাসীও নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। নিজের পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে দীর্ঘদিন ঢাকার জুরাইনে স্থায়ীভাবে বসবাস করার কারণে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষী ও সহযোদ্ধারা ভুলে বসেছেন তাঁকে। সেজন্যে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগলেও তাঁকে শেষদেখার তাগিদেও ভোগেনি কেউ। অনেকটা নীরবে নিভৃতে গত শনিবার বিকেল চারটায় তিনি চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তিনি হলেন জহিরুল হক পাঠান।

কে এই জহিরুল হক পাঠান? সাধারণ পরিচয় হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন অনারারী ক্যাপ্টেন। আর অসাধারণ পরিচয় হচ্ছে, তিনি অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন চাঁদপুর মহকুমা ও সন্নিহিত বিরাট অঞ্চলের কমান্ডার ছিলেন। আর অনন্যসাধারণ পরিচয় হচ্ছে, তিনি ছিলেন পাকিস্তানের জাতীয় বীর। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে লাহোরের খেমকারান সেক্টরে তিনি রিকোয়েলেস রাইফেল দিয়ে দুটি ভারতীয় ট্যাংক ধ্বংস করে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান কর্তৃক বীরত্বসূচক জাতীয় খেতাব 'তগমায়ে জুরাত' (টিজে)-এ ভূষিত হন। ১৯৬৭ সালে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দেশে প্রত্যাবর্তন করলে তাঁকে দেয়া হয় ৬টি বীরোচিত সংবর্ধনা। শুধু কি তাই, বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সরকার তাঁকে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলাধীন তাঁর জন্মস্মৃতি বিজড়িত অলিপুর গ্রামে ৭ একর খাস জমি এবং তাঁর তিন পুরুষ পর্যন্ত মাসে ৩০ টাকা হিসেবে ভাতা প্রদান করে। এছাড়া সরকার তাঁর বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে লেখা ‘রণাঙ্গনে পাকিস্তান’ পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

মুক্তিযুদ্ধে জহিরুল হক পাঠানের অসম সাহসিকতাপূর্ণ বীরত্বে সংঘটিত যুদ্ধের কারণে তিনি পরিণত হন কিংবদন্তিতে। সহযোদ্ধা ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ অনেক মানুষের মুখে মুখে আজও ফিরে তাঁর কথা। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সেনাবাহিনীতে ফিরে গিয়ে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। তিনি চাঁদপুর মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্বপালন করেন। তিনি নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন অলিপুর হাই স্কুল। তিনি ছিলেন অলিপুর দিঘিরপাড় মাদ্রাসার দাতা সদস্য ও ঢাকাস্থ চাঁদপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের উপদেষ্টা। কিন্তু তাঁর ঔদার্যে নিজের নামে কিছুই করেন নি। এরই মধ্যে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকার জুরাইনে তিনি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং গত শনিবার বিকেলে সেখানকার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তবে গতকাল রোববার তাঁর প্রতিষ্ঠিত অলিপুর হাই স্কুল মাদ্রাসা মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও জানাজাশেষে তাঁকে পারিবারিক গোরস্তানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়।

মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জহিরুল হক পাঠানের যে চির প্রস্থান হয়েছে, তাতেই যেন সব শেষ হয়ে না যায়। তিনি তাঁর কর্মকীর্তিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন নিঃসন্দেহে। কিন্তু তাঁর স্মৃতি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দিতে কাউকে না কাউকে নিতে হবে যথার্থ পদক্ষেপ। চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে অলিপুর হয়ে ওটতলী খেয়াঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কটি তাঁর নামে নামকরণ করা যায় কিনা এ বিষয়টি ভেবে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ভূমিকা রাখার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। অবশ্য এ ব্যাপারে দাবি উত্থাপন ও তাগিদ সৃষ্টিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্যে তাঁর সহযোদ্ধাদের ও এলাকাবাসীর প্রতি আবেদন রাখছি। যদি সম্ভব হয় অলিপুর হাই স্কুলটি জহিরুল হক পাঠানের নামে নামকরণের বিষয়টিও স্কুল ম্যানেজিং কমিটিকে গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখার জন্যে আমরা জোর অনুরোধ জানাচ্ছি। বলা বাহুল্য, কোনো এলাকার কৃতী বীর সন্তানকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নিলে সে এলাকাই কার্যত ধন্য হয় এবং সে এলাকায় আরো কৃতী সন্তানের জন্ম হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়