প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দুনিয়ার জীবনের হাকিকত
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) দুনিয়ার মহব্বত মানুষকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকির থেকে বিরত রাখে আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, ‘দুনিয়ার মহব্বত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকির ও তার ভালোবাসা থেকে মানুষকে বিরত রাখে। আর যার ধন-সম্পদ তাকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকির থেকে বিরত রাখে, সে অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। মানবাত্মা যখন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের যিকির হতে গাফেল হয়, তখন শয়তান তাতে স্থান করে নেয় এবং সে যেদিক ইচ্ছা করে তাকে সেদিক নিয়ে যায়’। (উদ্দাতুস সাবেরীন ১৮৬)।
আল্লামা ইবনুল জাওজী রহ. বলেন, ‘আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, যদি দুনিয়া প্রত্যেক তৃষ্ণার্তের জন্য নিরেট পরিচ্ছন্ন হয়, প্রতিটি অনুসন্ধানকারীর জন্য সহজলভ্য এবং দুনিয়া আমাদের জন্য স্থায়ী হয়; কোনো ছিনতাইকারী চিনিয়ে না নেয়, তাহলেও দুনিয়া থেকে বিমুখ হওয়া ফরয ও ওয়াজিব। কারণ, দুনিয়া মানুষকে আল্লাহ হতে বিরত রাখে এবং মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের স্মরণকে ভুলিয়ে দেয়। আর যে নি‘আমত নি‘আমতদাতা থেকে বিরত রাখে তাকে অবশ্যই পরিহার করতে হবে। অন্যথায় বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। (তাজকিরাতুল ওয়াজ ৭১)।
একজন দুনিয়াদারের জন্য দুনিয়াই হলো, তার শেষ গন্তব্য আল্লামা ইবনুল কাইয়্যেম রহ. বলেন, ‘যখন কোনো বান্দা দুনিয়াকে মহব্বত করে, তখন দুনিয়াই তার লক্ষ্য হয়ে থাকে; সে দুনিয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই বুঝতে রাজি হয় না। তার কাছে আর কোনো কিছুই ভালো লাগে না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেসব আমলকে আখিরাত লাভ ও দুনিয়ার কল্যাণের জন্য নির্ধারণ করছে, সেসব আমলগুলোকে সে দুনিয়া উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে বিষয়টি পাল্টে যায় আর অর্ন্তনিহিত হিকমত উলটপালট হয়ে যায়। মোটকথা, এখানে দু’টি বিষয় আছে, এক- মাধ্যমকে লক্ষ্য বানিয়ে নেওয়া, দুই- আখিরাতের আমল দ্বারা দুনিয়া উপার্জন করা। আর এ হলো সর্বনিকৃষ্ট উলটপালট এবং মানবাত্মার জন্য সবচেয়ে জঘন্য ও মারাত্মক পরিণতি। এ ধরনের লোকের ক্ষেত্রে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী হুবহু প্রযোজ্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনে কারীমে বলেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দিই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেওয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল’। [সূরা হুদ, আয়াত: ১৫, ১৬] আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘যে আখিরাতের ফসল কামনা করে, আমরা তার জন্য তার ফসলে প্রবৃদ্ধি দান করি, আর যে দুনিয়ার ফসল কামনা করে আমরা তাকে তা থেকে কিছু দিই এবং আখিরাতে তার জন্য কোনো অংশই থাকবে না’। [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ২০]
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ‘যে দুনিয়া চায় আমি সেখানে তাকে দ্রুত দিয়ে দিই, যা আমরা চাই, যার জন্য চাই। তারপর তার জন্য নির্ধারণ করি জাহান্নাম, সেখানে সে প্রবেশ করবে নিন্দিত, বিতাড়িত অবস্থায়। আর যে আখিরাত চায় এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে মুমিন অবস্থায়, তাদের চেষ্টা হবে পুরস্কারযোগ্য’। [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৮-১৯]
এখানে তিনটি আয়াত আছে একটি আয়াত অপর আয়াতের সাথে সামঞ্জস্য এবং আয়াত তিনটির অর্থ এক ও অভিন্ন। অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার আমলের মাধ্যমে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি ও আখিরাতের কল্যাণকে বাদ দিয়ে, দুনিয়া ও দুনিয়া সৌন্দর্য কামনা করে, তার ভাগে তাই মিলবে সে যা চায়; সে আর কোনো কিছু পাবে না। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে একাধিক বর্ণনা রয়েছে, যেগুলো আয়াতের ব্যাখ্যা করে এবং আয়াতের অর্থকে সমর্থন করে’। (উদ্দাতুস সাবেরীন ১৮৬)।