প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২১, ১১:০৩
অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ প্রসঙ্গে
আমেরিকা প্রবাসী এক ভদ্রলোক চাঁদপুর শহরে তাঁর কেনা জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণের পূর্বেই বৈধভাবে গ্যাস ও পানির সংযোগ এনে রেখেছিলেন। এমনকি বিদ্যুৎ সংযোগ যাতে সহজে পান, সেজন্যে প্রতিবেশীদের সাথে অর্থ শেয়ার করে নিজের জায়গার সামনে বিদ্যুতের খুঁটি পর্যন্ত এনে রেখেছিলেন। অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়ে তিনি ছয়তলা ফাউন্ডেশনের ওপর বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে দোতলা পর্যন্ত পুরোপুরি কাজ শেষ করেন এবং তিনতলার ছাদ করে রাখেন। নিজেরা দেশে আসলে যেহেতু দোতলায় থাকবেন বলে মনস্থ করেছেন, সেহেতু বৈধ গ্যাস সংযোগটি সেখানেই নিয়ে চুলার ব্যবস্থা করেন। সাথে সাথে গ্যাসের ঠিকাদারকে বলে রেখেছেন, আবার বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়া শুরু করলে তাঁর অতিরিক্ত সংযোগের ব্যবস্থা যেনো করে দেয়া হয়। এ বাবদ তিনি আশি সহ¯্রাধিক টাকা ঠিকাদারকে অগ্রিম দিয়ে আমেরিকা চলে যান। কিন্তু দু বছরেও পাওয়া গেলো না সেই কাক্সিক্ষত গ্যাস সংযোগ। ঠিকাদার বলেছেন, আপনি বিদ্যমান বৈধ গ্যাস সংযোগ থেকেই লাইন টেনে অতিরিক্ত চুলা ব্যবহার শুরু করুন, যেমনটি অনেকেই করে। আমি অফিসকে বলে রাখবো, আপনার কোনো অসুবিধা হবে না।
|আরো খবর
আমেরিকা প্রবাসী ওই ভদ্রলোক ঠিকাদারের এমন কথায় প্রলুব্ধ হলেন না। তিনি সাফ সাফ বলে দিলেন, আপনি সামান্য কিছু খরচ কেটে রেখে আমার অগ্রিম দেয়া টাকাটুকু ফেরৎ দিন, মিথ্যা আশ^াস ও প্রলোভনে আমাকে আর হয়রানি করবেন না। ঠিকাদার খুব সহজে সে টাকা ফেরৎ দিলেন না। এজন্যে তার ওপর অনেক চাপ প্রয়োগ করতে হয়েছে। অবশেষে ঠিকাদার পরাস্ত হলেন, আমেরিকা প্রবাসী টাকা ফেরৎ পেয়ে বিজয়ী হলেন।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে ‘চাঁদপুরে বাখরাবাদ গ্যাসের বিশেষ টিমের অভিযানের ১৫ দিন : ৩০৭টি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ॥ দেড় কোটি টাকা আদায়’। এ সংবাদে প্রতিবেদক মিজানুর রহমান লিখেছেন, চলমান সময়ে নতুন করে গ্যাস সংযোগ দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সরকার। কিন্তু গোপনে অনেকেই অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ চালাচ্ছেন। চাঁদপুর জেলা সদরসহ ৪টি উপজেলায় বাখরাবাদ গ্যাসের ২৩ হাজার ৮৫০টি আবাসিক, ২০৬টি বাণিজ্যিক, ৫টি সিএনজি, ৩টি ক্যাপটিভ, ১টি পাওয়ার ও ২টি ইন্ডাস্ট্রি সংযোগ রয়েছে। কতিপয় ঠিকাদার ও বাখরাবাদ গ্যাসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে অবৈধ সংযোগের কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়ে আসছিল বছরের পর বছর। জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগে শীর্ষস্থানীয় স্বল্প ক’টি জেলার মধ্যে চাঁদপুরের নামটি উঠে আসে। সেজন্যে এক মাসের অভিযানে নেমেছে ২১টি টিম এবং ৮৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
বাখরাবাদের এই অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের অভিযানের কারণে বিভিন্ন বাড়ির নিরীহ ভাড়াটিয়ারা সবচে’ ক্ষয়ক্ষতির শিকার। তারা এখন বাজার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে এনে রান্নাবান্নার কাজ করতে হচ্ছে এবং অতিরিক্ত খরচ গুণতে হচ্ছে। কিন্তু পার পেয়ে যাচ্ছে প্রতারক ঠিকাদার ও গ্যাস কোম্পানির যোগসাজশকারী অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলে সচেতন মহল মনে করছেন। আমরাও এর সাথে একাত্ম। আমাদের মতে, অসাধু ব্যক্তিগণ পার পেয়ে গেলে এই অবৈধ গ্যাস সংযোগ কার্যক্রম টেকসইভাবে বন্ধ হবে না।