রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
অনলাইন ডেস্ক

লাইলাতুল কদর আরবি-এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনী’। ফার্সি ভাষায় ‘শাব’ ও আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী, অন্যদিকে ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। এ ছাড়া এর অন্য অর্থ হল ভাগ্য, পরিমাণ ও তাকদির নির্ধারণ করা। এ রাতে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ)-এর উম্মতদের সম্মান বৃদ্ধি করা হয় এবং মানবজাতির ভাগ্য পুনঃনির্ধারণ করা হয়। তাই মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত পুণ্যময় ও মহাসম্মানিত হিসেবে পরিগণিত। কুরআনের বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহ এই রাত্রিকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন এবং এই একটি মাত্র রজনীর ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও অধিক সওয়াব অর্জিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছর মাহে রমজানে এই মহিমান্বিত রজনী লাইলাতুল কদর মুসলিমদের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে।

কদরের এক অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। কেউ কেউ এ-স্থলে এ অর্থই নিয়েছেন। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে ‘লাইলাতুল-কদর’ তথা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। কদরের আরেক অর্থ তাকদীর এবং আদেশও হয়ে থাকে। এ রাত্রিতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত ও বিধিলিপি ব্যবস্থাপক ও প্রয়োগকারী ফেরেশতাগণের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এতে প্রত্যেক মানুষের বয়স, মৃত্যু, রিফিক, বৃষ্টি ইত্যাদির পরিমাণ নির্দিষ্ট ফেরেশতাগণকে লিখে দেয়া হয়। [সা‘দী] পবিত্র কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছে, ফিহা ইউফরকু কুল্লু আমরিন হাকিম [সূরা আদণ্ডদোখান: ৪] এ আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে যে, পবিত্র রাত্রি তাকদীর সংক্রান্ত সব ফয়সালা লিপিবদ্ধ করা হয়। এই রাত্রিতে তাকদীর সংক্রান্ত বিষয়াদি নিম্পন্ন হওয়ার অর্থ এ বছর যেসব বিষয় প্রয়োগ করা হবে, সেগুলো লওহে মাহফুয থেকে নকল করে ফেরেশতাগণের কাছে সোপর্দ করা। নতুবা আসল বিধি-লিপি আদিকালেই লিপিবদ্ধ হয়ে গেছে। [ইমাম নববী: শারহু সহীহ মুসলিম, ৮/৫৭]

৬১০ সালে শবে কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর নিকট সর্বপ্রথম কুরআন নাজিল হয়। সর্বপ্রথম তার নিকট প্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয়। এ রাতে ফেরেশতা জীবরাইল (আঃ)-এর নিকট সম্পূর্ণ কোরআন অবতীর্ণ হয়, যা পরবর্তীতে ২৩ বছর ধরে নবীজি মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নিকট তার বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তা এবং ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট আয়াত আকারে নাজিল করা হয়।

মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পূর্ববর্তী নবী এবং তাদের উম্মতগণ দীর্ঘায়ু লাভ করার কারণে বহু বছর আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ পেতেন। কোরআন ও হাদীসের বর্ণনায় জানা যায়, ইসলামের চার জন নবী যথা আইয়ুব, জাকারিয়া, হিযকীল ও ইউশা ইবনে নূন প্রত্যেকেই আশি বছর আল্লাহর ইবাদত করেন এবং তারা তাদের জীবনে কোনো প্রকার পাপ কাজ করেননি। কিন্তু মুহাম্মদ (সাঃ)থেকে শুরু করে তার পরবর্তী অনুসারীগণের আয়ু অনেক কম হওয়ায় তাদের পক্ষে আল্লাহর ইবাদত করে পূর্ববর্তীতের সমকক্ষ হওয়া কিছুতেই সম্ভপর নয় বলে তাদের মাঝে আক্ষেপের সৃষ্টি হয়। তাদের এই আক্ষেপের প্রেক্ষিতে তাদের চিন্তা দুর করার জন্য সুরা কদর নাজিল করা হয় বলে হাদিসের বর্ণনায় জানা যায়।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা কদর নামে একটি সূরা নাযিল করা হয়েছে।

সূরাটির শানে নূযুল হলো -

ইবনে আবী হাতেম -এর রেওয়ায়েতে আছে, রসূলুল্লাহ (সঃ) একবার বনী-ইসরাঈলের জনৈক মুজাহিদ সম্পর্কে আলোচনা করলেন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত অবিরাম জিহাদে মশগুল থাকে এবং কখনও অস্ত্র সংবরণ করেনি। মুসলমানগণ এ কথা শুনে বিস্মিত হলে এ সূরা কদর অবতীর্ণ হয়। এতে এ উম্মতের জন্যে শুধু এক রাত্রির ইবাদতই সে মুজাহিদের এক হাজার মাসের এবাদত অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ প্রতিপন্ন করা হয়েছে। ইবনে জরীর অপর একটি ঘটনা এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, বনী-ইসরাঈলের জনৈক ইবাদতকারী ব্যক্তি সমস্ত রাত্রি ইবাদতের মশগুল থাকত ও সকাল হতেই জিহাদের জন্যে বের হয়ে যেত এবং সারাদিন জিহাদে লিপ্ত থাকত। সে এক হাজার মাস এভাবে কাটিয়ে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আল্লাহ তায়ালা সূরা-কদর নাযিল করে এ উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছেন। এ থেকে আরও প্রতীয়মান হয় যে, শবে-কদর উম্মতে মুহাম্মদীরই বৈশিষ্ট্য।

সূরা ক্বদরে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন -

১. আমি কুরআনকে কাদরের রাতে নাযিল করেছি।

২. তুমি কি জান ক্বাদরের রাত কী?

৩. ক্বাদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম,

৪. এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ তাদের রব-এর অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়।

৫. (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি- ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।

নিম্নে উক্ত সূরার আয়াতের আলোকে কিছু আলোকপাত করা হলো-

১. এখানে বলা হয়েছে, আমি কদরের রাতে কুরআন নাযিল করেছি। আবার অন্যত্র বলা হয়েছে, ‘রমযান মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে।” (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫)

এ থেকে জানা যায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে হেরা গুহায় যে রাতে আল্লাহর ফেরেস্তা অহী নিয়ে এসেছিলেন সেটি ছিল রামাদান মাসের একটি রাত। এই রাতকে এখানে কদরের রাত বলা হয়েছে। সূরা দেখানে এটাকে মুবারক রাত বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘অবশ্যি আমরা একে একটি বরকতপূর্ণ রাতে নাযিল করেছি।” (সূরা আদণ্ডদোখান: ৩)এ আয়াত থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, কুরআন পাক লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ হয়েছে। এর এক অর্থ এই যে, সমগ্র কুরআন লওহে মাহফুয থেকে লাইলাতুল-কদরে অবতীর্ণ করা হয়েছে, অতঃপর জিবরাঈল একে ধীরে ধীরে তেইশ বছর ধরে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে পৌঁছাতে থাকেন। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, এ রাতে কয়েকটি আয়াত অবতরণের মাধ্যমে কুরআন অবতরণের ধারাবাহিকতা সূচনা হয়ে যায়। এরপর অবশিষ্ট কুরআন পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে পূর্ণ তেইশ বছরে নাযিল করা হয়। (আদ্ওয়াউল বায়ান)

২. কুরআন পাকের সুস্পষ্ট বর্ণনা দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসে। কিন্তু সঠিক তারিখ সম্পর্কে আলেমগণের বিভিন্ন উক্তি রয়েছে যা সংখ্যায় চল্লিশ পর্যন্ত পৌঁছে। এ-সব উক্তির নির্ভুল তথ্য এই যে, লাইলাতুল-কদর রামাদান মাসের শেষ দশ দিনের মধ্যে আসে; কিন্তু এরও কোন তারিখ নির্দিষ্ট নেই; বরং যে কোন রাত্রিতে হতে পারে। আবার প্রত্যেক রামাদানে তা পরিবর্তিতও হতে পারে। সহীহ হাদীসদৃষ্টে এই দশ দিনের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল-কদর হওয়ার সম্ভাবনা অধিক। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রামাদানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর অন্বেষণ কর।” (বুখারী: ২০২১)

অন্য বর্ণনায় আছে-“তোমরা তা শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে তালাশ কর।” (বুখারী: ২০২০, মুসলিম: ১১৬৯, তিরমিয়ী: ৭৯২)

সুতরাং যদি লাইলাতুল-কদরকে রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে ঘূর্ণায়মান এবং প্রতি রামাদানে পরিবর্তনশীল মেনে নেয়া যায়, তবে লাইলাতুল-কদরের দিন-তারিখ সম্পর্কিত হাদীসসমূহের মধ্যে কোন বিরোধ অবশিষ্ট থাকে না। এটিই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। (ইবন হাজার: ফাতহুল বারী, ৪/২৬২-২৬৬)

৩. মুফাসসিরগণ এর অর্থ করেছেন, এ রাতের সৎকাজ কদরের রাত নেই এমন হাজার মাসের সৎকাজের চেয়ে ভালো। [মুয়াসসার] এ শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে বিভিন্ন হাদীসেও বিস্তারিত বলা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রামাদান আগমন কালে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের নিকট রামাদান আসন্ন। মুবারক মাস। আল্লাহ্ এর সাওম ফরয করেছেন। এতে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয়ে থাকে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানগুলোকে বেঁধে রাখা হয়। এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাত্রির কল্যান থেকে বঞ্চিত হয়েছে সে তো যাবতীয় কল্যান থেকে বঞ্চিত হলো।” (নাসায়ী: ৪/১২৯, মুসনাদে আহমাদ: ২/২৩০, ৪২৫)

অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ ঈমান ও সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর রাত্রিতে সালাত আদায় করতে দাঁড়াবে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (বুখারী: ১০৯১, মুসলিম: ৭৬০, আবুদাউদ: ১৩৭২, নাসায়ী: ৮/১১২, তিরমিয়ী: ৮০৮, মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫২৯)

৪. (ক) ‘আর রুহ’ বলে কি বুঝানো হয়েছে মতপার্থক্য থাকলেও প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো এর দ্বারা জিবরাঈলকে বোঝানো হয়েছে। জিবরাঈল আলাইহিস সালামের শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার কারণে সমস্ত ফেরেশতা থেকে আলাদা করে তাঁর উল্লেখ করা হয়েছে। জিবরাঈলের সাথে ফেরেশতারাও সে রাৎৰিতে অবতরণ করে। (ফাতহুল কাদীর)

হাদীসে আছে, ‘লাইলাতুল-কদরের রাত্রিতে পৃথিবীতে ফেরেশতারা এত বেশী অবতরণ করে যে, তাদের সংখ্যা পাথর কুচির চেয়েও বেশী।” (মুসনাদে আহমাদঃ ২/৫:১৯, মুসনাদে তায়ালাসী: ২৫৪৫)

(খ) সকল সিদ্ধান্ত বা প্রত্যেক হুকুম বলতে অন্যত্র বর্ণিত ‘আমরে হাকীম” (বিজ্ঞতাপূর্ণ কাজ) [সূরা আদণ্ডদোখান: ৪] বলতে যা বুঝানো হয়েছে তার কথাই এখানে বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফেরেশতাগণ শবে-কদরে সারা বছরের অবধারিত ঘটনাবলী নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে। কোন কোন তাফসীরবিদ একে ‘ছালাম’ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত করে এ অর্থ করেছেন যে, এ রাত্রিটি যাবতীয় অনিষ্ট ও বিপদাপদ থেকে শান্তিস্বরূপ। (ইবন কাসীর)

৫. অর্থাৎ সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত সারাটা রাত শুধু শান্তিই শান্তি, মঙ্গলই মঙ্গল তথা কল্যাণে পরিপূর্ণ। সে রাত্র সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে মুক্ত। (তাবারী)

অর্থাৎ লাইলাতুল-কদরের এই বরকত রাত্রির শুরু অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর হতে ফজরের উদয় পর্যন্ত বিস্তৃত। (সা‘দী)

উল্লেখ্য যে, কুরআন নাযিলের এ মাসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত জিবরীল (আঃ)-এর কাছে কুরআন পড়ে শুনাতেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : জিবরীল (আঃ) রমাযানের প্রতি রাতে আগমন করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর কাছে কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাতেন। এ সময় নাবী (সাঃ) দানের হাত বায়ু প্রবাহের মত প্রসারিত করতেন। (সহীহ বুখারী হা. ৩২২০, সহীহ মুসলিম হা. ২৩০৮)

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর ওপর কুরআন প্রতি বছর একবার করে পেশ করা হত। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর বছরে দুবার পেশ করা হয়। তিনি প্রতি বছর ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু মৃত্যুর বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফ করেন। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৯৮)

সুতরাং রমাযান মাস ইবাদতের অন্যতম একটি মওসুম। বিশেষ করে শেষ দশকের রাত গুলো প্রতিটি মু’মিন ব্যক্তিকে জেগে ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করা উচিত।

নিম্নে লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কতিপয় হাদিস তুলে ধরা হলো -

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪)

হাদিসটি : সহীহ

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে। (১১৫৮, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৫, আহমাদ ৪৫৪৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৭২, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৫)হাদিসের মান : সহিহ

আবূ সা‘ঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে রমাযানের মধ্যম দশকে ই‘তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল কদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সঙ্গে ই‘তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরি মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই। (৬৬৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৭৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৬) হাদিসের মান : সহিহ

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর। (২০১৯, ২০২০, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৯, আহমাদ ২৪৩৪৬) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৮৭৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৭) হাদিসের মান : সহিহ

পরিশেষে, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিতে বিশেষ করে ২৭ শে রমজানে ইবাদত করে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে হবে।

লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর, মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়