প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২১, ১৯:২১
রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত
৮ আগস্ট সৌদি আরবের রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের অডিটোরিয়ামে আজ এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। শুরুতে দিবসটিতে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
|আরো খবর
অনুষ্ঠানে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম(বার) বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবের অবদান অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী হিসেবে তিনি দেশের ক্রান্তিলগ্নে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। একাধারে তিনি তাঁর সকল সন্তানদের দেশপ্রেম ও মানবতার জন্য কাজ করা শিখিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘বঙ্গমাতা সংকটে সংগ্রামে নির্ভীক সহযাত্রী’ যথার্থ হয়েছে বলে মনে করি। তিনি বলেন বঙ্গমাতা শুধু সংকটে সংগ্রামেই নয় বরং মৃত্যুতে ও বঙ্গবন্ধুর সহযাত্রী ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, তিনি শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণীই ছিলেন না, বাঙ্গালির মুক্তিসংগ্রামের ও তিনি ছিলেন অন্যতম অগ্রদূত। বঙ্গবন্ধু সারা জীবন দেশের স্বার্থে অসংখ্যবার কারাবরন করেছেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব সেই কঠিন সময়ে দৃঢ়তাঁর সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছেন, পরিবারের গুরুদায়িত্ব একা সামলেছেন সেই সাথে দলের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ, মামলা পরিচালনা সবই করেছেন। বঙ্গবন্ধুকে সবসময় সাহস ও প্রেরনা দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনে বঙ্গমাতার বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। আন্দোলনের উত্তাল সময়গুলোতে নিজ বাড়িতে পরম মমতায় নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের আপ্যায়ন করতেন, সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনে ব্যবস্থা নিতেন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থান আন্দোলনে যখন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির কথা বললেন, তখন বঙ্গমাতা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এই সময়োচিত সিদ্ধান্ত আইয়ুব খানকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছিল।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ দেয়ার আগে বঙ্গমাতা জাতির পিতাকে হৃদয়ের কথা বলার পরামর্শ প্রদান করেছিলেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে সেদিন বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন তা ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে অন্যতম বলে বিবেচিত। এই ঐতিহাসিক ভাষণের অনুপ্রেরণা দিয়েছেন বঙ্গমাতা।
১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি সীমাহীন সাহস ও ধৈর্য্যের সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। নিজের দুই সন্তানকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি ছিলেন পরোপকারী ও নির্লোভ, রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণী হয়েও খুবই সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে বিভিন্ন কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেছিলেন। নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। শহীদ পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যক্তিগতভাবে অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, পুত্র, পুত্রবধূ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শহীদ হন বঙ্গমাতা। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর ত্যাগ, আদর্শ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। রাষ্ট্রদূত দেশ ও জাতির প্রতি বঙ্গমাতার অবদানকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন।
দূতাবাসের কার্যালয় প্রধান ও মিনিস্টার ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদের সঞ্চালনায় ডিফেন্স এ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাঈদ সিদ্দিকী বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন দৃঢ় মানসিক চেতনার অধিকারী। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে ত্যাগ, সাহস ও ধৈর্য্যের প্রতীক বলে বর্ণনা করেন। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছার জীবনীর ওপর নির্মিত তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবসহ পরিবারের সকল শহীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।