প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’
আব্দুল মান্নান আকন্দ
১.
|আরো খবর
শহরটি আয়তনে বেশ বড়। তবে মূল শহরটি ত্রিভুজ আকৃতির। এই শহরের দক্ষিণাংশের তিন রাস্তার মোড় থেকে মহাসড়ক ধরে আরেকটু দক্ষিণ দিকে এগিয়ে গেলে, হাতের বাম পাশে রয়েছে সরকারি প্লেণ্ডগ্রাউন্ড। স্বল্প আয়তনের এই প্লেণ্ডগ্রাউন্ডে সরকারি অফিসারদের সাধারণত ব্যাডমিন্টন ছাড়া আর কিছু খেলতে দেখা যায় না। ব্যাডমিন্টনের মৌসুম ছাড়া, বছরের বাকিটা সময় খালিই পড়ে থাকে। উল্টোদিকে কিছু দোকানপাট, তার মধ্যে একটা চায়ের দোকানও রয়েছে। পিন্টু দাসের চায়ের দোকান। পেছনে বড় আয়তনের একটা পুকুর। পুকুরের পাড় ঘেষে ক্রেতাদের বসার জায়গা করা হয়েছে। জায়গাটা খুব সুন্দর, বিশেষ করে পুকুর পাড়ের সবুজ প্রকৃতি আর মফস্বল শহরের এমন স্বচ্ছ পানির উৎস মন কেড়ে নেয়।
উন্নয়ন সংস্থার কর্মকর্তা হাসান মাসুদ এই পুকুর পাড়ের জায়গাটির নাম দিয়েছে দার্জিলিং। দার্জিলিং পাহাড়ি জনপদ কিন্তু সমতল ভূমিকে দার্জিলিং আখ্যা দেয়া তার খেয়ালী মনের প্রকাশ। বছর দু/এক হলো, সে এখানে এসেছে, ইতোমধ্যে জায়গাটি তার কাছে খুব প্রিয় হয়ে উঠেছে। শহরের তরুণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়েই তার কাজকর্ম। কিছু তরুণের কাছেও দার্জিলিং নামটি খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
হাসান মাসুদ বেশ অনুসন্ধিৎসু প্রকৃতির। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করার সুবাদে, আঞ্চলিক ভাষা, সংস্কৃতি, মানুষের আচারণ্ডআচরণ সম্পর্কে মোটামুটি জানা হয়েছে তার। অনুসন্ধিৎসা থেকেই এটা হয়েছে বোধকরি। স্বভাবজাতভাবে এ অঞ্চলের ভাষা, সংস্কৃতি, আচরণও জেনেছে সে ইতোমধ্যে। এসব নিয়ে তার বিশেষ রকমের এলার্জিও আছে। বিশেষ করে মানুষের মধ্যে ধর্মান্ধতা এবং আচরণের বৈপরীত্যে সে প্রায়শই উচ্চকিত হয়ে ওঠে। তাই পরিচিতরা ঝগড়াটে বলতেও ছাড়ে না। নিত্যদিনের যানবাহনে চড়া, বাজার হাট করা, হোটেলে খাওয়াদাওয়া, ফার্মেসি, স্যালুন, লন্ড্রি, জুতা কালী করার মুচি থেকে শুরু করে সামাজিক সংগঠনগুলোর খেয়ালী মেজাজণ্ডমর্জি কিংবা কখনও বিপরীতমুখী আচরণ তাকে আহত করে সবসময়। আর অমনি প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। পাঁচ টাকায় কেনো আধা কাপ চা দেয়া হবে, আবৃত্তির মঞ্চে কেনো হিজাব পরে উঠতে হবে, বিরিয়ানির হোটেলে সালাদ নেই কেনো, জামা ইস্ত্রি করতে কেনো ঢাকার চেয়ে বেশি টাকা দিতে হবে, পাঁচ টাকার মাস্কের দাম বিশ টাকা কেনো নেয়া হবে, কেনো বড় বড় রেস্টুরেন্টে পাবলিক টয়লেট থাকবে না, পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেলেই খাবার হোটেলে কেনো পেঁয়াজ দেয়া হবেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। স্থানীয় শুভাকাক্সক্ষীদের সাথে এ নিয়ে মুখরোচক আলোচনাও হয় মাঝে মাঝে, তবে তার আরও কিছু ভালো গুণাগুণ থাকার কারণেই এ নিয়ে রেগে যাওয়ার স্পর্ধা দেখায় না কেউ। এ শহরের জায়গার নামগুলোও বেশ বিদঘুটে লাগে তার কাছে। অবশ্য কিছু জায়গার নাম শ্রুতিমধুরও মনে হয়, আবির নগর, রাখালিয়া, কমল নগর, রায়পুর, চন্দ্রগঞ্জ ইত্যাদি। শহরের দুটি দর্শনীয় স্থান তাকে নস্টালজিক করে তোলে মাঝে মাঝে, স্টেডিয়ামের পশ্চিম গেইট আর বেড়িবাঁধের বকুলতলা। কী জানি কী ঘটেছে এখানে কিংবা পূর্বের কোনো স্মৃতি আছে হয়তো একই রকমের। দোষগুণ যাই হোক, মানুষটি এমনই।
দোকানে বসে চা খেতে খেতেই বেশ কয়েকদিন ধরে চোখে পড়ে, প্লেণ্ডগ্রাউন্ডের গেইটের কাছে ঝাঁকড়া বরই গাছটার নিচে, নাম না জানা পাগলী মেয়েটির অস্থায়ী ডেরা। এর আগে এই পাগলীর ডেরা সে দেখেনি। বুঝাই যায় ডেরাটি অস্থায়ী, রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় স্থায়ী নিবাস গড়া পাগলীর পক্ষে সম্ভব নয়। এ কেবল সরকারি দলের নেতাদের পক্ষেই সম্ভব। এই শহরেও এমন চর্চা আছে কিন্তু টু শব্দটি নেই কেবল সাধারণের মুখে। গায়ে ময়লা মাখা পাগলীটিকে কেউ দেখে, কেউ এড়িয়ে যায়। সারাদিন চোখ বুঁজে শুয়ে থাকতেই দেখে হাসান মাসুদ। বড় গাড়ির হুইসেলে মাঝেমাঝে চোখ পিটপিট করে তাকায়। আপন মনে হাসে। কী খায়, কখন খায়, বুঝা যায় না। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। অবশ্য হাসান মাসুদ তাকে অফিসে যাওয়া আসার ফাঁকেই দুণ্ডএকবার দেখে, দিনপঞ্জি জানার সুযোগ হয় না। দার্জিলিংণ্ডএর চা’র দোকানে বসলে অপর দিকে চোখ যায়, তখনই দেখে কেবল। মাঝেমধ্যে খানিকটা কৌতূহল হয় জানতে।
দেশের চায়ের দোকানগুলো সাধারণত গবেষণা কেন্দ্র হিসেবেই চিহ্নিত। পিন্টু দাসের চা’র দোকানও এর ব্যতিক্রম নয়। চা বিড়ি খেতে খেতে সমসাময়িক বিষয়ে গবেষণা করা, ফলাফল বের করা, ভবিষ্যদ্ববাণী করা এখানে জনসাধারণের স্বভাবজাত। আইপিএল থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, মোদি থেকে ট্রাম্প, তাহেরি থেকে আজহারি, সানিলিওন থেকে এঞ্জেলিনা জোলি, করোনা থেকে এইচআইভি, দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, ধর্ম সকল বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয় এখানে। বাদ যায় না বরইতলার পাগিলীটিও।
হাসান মাসুদও মাঝেমাঝে এই গবেষণাদলে সম্পৃক্ত হয়, জানার আগ্রহ থেকে কিংবা স্রোতে গা ভাসাতে। পাগলীটি একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা, ছদ্মবেশে এখানে এসেছে, এমনটিই বিশ্বাস করে অধিকাংশ গবেষক, বিশ্বাস করে পিন্টু দাসও। কেউ একজন বলে, এই পাগলী একসময় আবীরনগর কলেজের শিক্ষক ছিলো, কিন্তু অন্যরা তা মানতে নারাজ। এটা হতেই পারে না। সেই ম্যাডামতো কতো আগেই তার নিজের দেশে চলে গেছে। নানা মুনির নানা মত। হাসান মাসুদ এই আলোচনার ক্ষেত্রে চুপ থাকে, জানে না বলেই চুপ থাকে হয়তো। তাছাড়া একজন নারী সম্পর্কে মন্দভালো টিপ্পনী শুনতে ভালো লাগে না তার। অন্য শহরের পাগলীরা মা হয়, বাবা হয় না কেউ, পত্রিকায় এমন খবর হয় সচরাচর। অথচ এই পাগলী প্রায় সপ্তাহ দুণ্ডএক ধরে বরই তলায় ঘুমালেও মা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়নি এখনও, বলেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে একদল অরুচিকর মানুষ। গবেষকদের এমন অশালীন খিস্তিখেউড় শুনতে গা ঘিনঘিন করে ওঠে তার। চলে যায় সে, কৌতূহল বাড়ে পাগলীর সম্পর্কে।
পরেরদিন অফিস শেষে দার্জিলিংণ্ডএর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় চা খেতে বসে হাসান মাসুদ। পিন্টু দাসের সাথে কুশল বিনিময় শেষে পাগলী সম্পর্কে জানতে চায়। পাগলীর নাম জানেন না সে, এইতো কিছুদিন হলো, বরই তলার ভাঙ্গা ঘরটার মধ্যে থাকতে শুরু করেছে। তবে খুব সকালে বিভিন্ন বাড়ির সামনে ঘুরতে দেখা যায় তাকে। বিশেষ করে অফিসগামী কাউকে বের হতে দেখলে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। অনতিদূরে ‘সড়ক ও জনপথ’ অফিসের সামনেও দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। কেউ খাবার দিলে নিতে চায়না, টাকাও নেয়না কারও কাছ থেকে, পিন্টু দাস জানায়।
তাই নাকি? কৌতূহল বাড়ে হাসান মাসুদের।
বিকেলবেলা যায় উত্তরদিকে, সেখানেও দুণ্ডএকটি বাড়ির সামনে নাকি দাঁড়িয়ে থাকে সে। কাকে যেনো খুঁজে বেড়ায় সারাক্ষণ। কেউ কেউ বলে, এই পাগলীটা অনেক শিক্ষিত। অনেক বছর আগে এখানেরই একটা কলেজের শিক্ষক ছিলো। কিন্তু কলেজ শিক্ষক আবার পাগল হবে কেনো? কেউ নিশ্চিত করে চিনতে পারেনি এখনো, বলে পিন্টু দাস।
হাসান মাসুদের কৌতূহলের ব্যারোমিটার ঊর্ধ্বগামী হয়। ইচ্ছে হয় পাগলীর সাথে কথা বলতে। ততোক্ষণে সন্ধ্যা নেমেছে মফস্বলের আকাশে। সে কাছে এগিয়ে যায়। চল্লিশোর্ধ মেয়েটির চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। শরীরে বাহুল্যপূর্ণ গ্লামার নেই কিন্তু সৌন্দর্যেরও ঘাটতি নেই কোথাও। এমন একজন মেয়েমানুষ মফস্বল শহরের এই রাস্তার পাশে কেনো পড়ে আছে, কেনো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসছে না, কেনো সাধারণ মানুষ তাকে পাগলী হিসেবেই চিহ্নিত করছে, ইত্যাকার প্রশ্নে মাথা ভনভন করতে থাকে হাসান মাসুদের। মেয়েটির ডেরার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে অবাক বিস্ময়ে তাকায়।
কি নাম আপনার? মেয়েটি নিরুত্তর।
বাড়ি কোথায়?
জানি না, মাথা নেড়ে জানায় মেয়েটি।
এখানে কী করে এলেন?
জানি না, বলেই চোখ পাকিয়ে মৃদু শব্দে হেসে ওঠে। মেয়েটি মুখ খুলে এই প্রথমবার।
আবারও নাম জিজ্ঞেস করে হাসান মাসুদ।
নাম নেই, সে কোথায় গেলো? বলেই হকচকিয়ে ওঠে, এদিক সেদিক তাকায় কিছুক্ষণ, তারপর স্থির হয়, চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে তাকায়, শান্ত হয়ে বলে, ‘নামহীন হাজার তারার খোঁজে আমি উড়ি আকাশনীলে’, কাব্য ছন্দে বিড়বিড় করে আরও কীসব বলে। বলেই খিলখিল করে হেসে ওঠে। হঠাৎ উৎসুক হয়ে কিছু একটা খুঁজতে থাকে সে।
হাসান মাসুদ প্রথমবার আবিষ্কার করে, মেয়েটি পরিষ্কার শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলছে। তার চেহারার আভিজাত্যের সাথে, শুদ্ধ করে বাংলা বলার একটা যোগসূত্র খুঁজে পায় সে। সে নিশ্চিত হয়, মেয়েটি স্থানীয় নয়।
তবে কোত্থেকে এলো, কেনোইবা এলো? আপন মনে ভাবেতে থাকে সে।
আজ দুপুরে কী খাবেন বলুন, ঘরে সবকিছু আছে, চটপট রান্না করে ফেলবো। অভিজাত গৃহিণীর মতো, মেয়েটি খুব সাবলীলভাবে বলে হাসান মাসুদকে। এরপর উঠে দাঁড়িয়ে বরই পাতা ছিঁড়তে থাকে আপন মনে। প্লেণ্ডগ্রাউন্ডের দিকে হেঁটে যায় খানিকটা, আবার আলুথালু চুলে হাত বুলাতে বুলাতে ডেরার কাছে ফিরে আসে।
আপনিতো এখনও আপনার নামটাই বলেন নি। মেয়েটির সব অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ উপেক্ষা করেই বলে হাসান মাসুদ। বিছানায় বসে পড়ে মেয়েটি, কিছুটা উত্তেজিত দেখায় তাকে। তেল চিটচিটে বালিশটায় মুখ গুঁজে দিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। লোকজন দূর থেকে দেখছে এসব, হাসান মাসুদ খানিকটা বিব্রত হয়। সে ফিরে যেতে উদ্ধত হয়। মেয়েটি উঠে বসে। তারপর বলেণ্ড
পোলাও খাবেন? সাথে সর্ষেণ্ডইলিশ করে দেবো। বলেই একটা কাঠি হাতে নেয়। তারপর ডেরার পাশে একটি খালি যায়গায় কাঠি দিয়ে স্বচ্ছ করে লিখে, শায়লা। হাসান মাসুদ নিশ্চিত হয়, মেয়েটির নাম শায়লা।
দার্জিলিংণ্ডএর চা’র দোকানে বসা গবেষকেরা নির্লিপ্তভাবে তাকিয়ে আছে পাগলীর ডেরার দিকে। হাসান মাসুদ লজ্জিত বোধ করে। দ্রুত চলে যায় সেখান থেকে।
মেয়েটি পিছু ডাকে, এই যে, শুনছেন? রাতে হাঁসের মাংস ভুনা করবো। সময়মতো চলে আসবেন কিন্তু।
২
সেদিন লাঞ্চের পর অফিস থেকে বেরিয়েছেন হাসান মাসুদ। গন্তব্য ডিসি অফিস। জরুরি মিটিং। দার্জিলিংণ্ডএর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় শায়লার ডেরার দিকে চোখ যায় তার। দূর থেকে লক্ষ্য করে, শায়লা বই পড়ছে। খানিকটা আশ্চর্য হয় সে। কী বই পড়ে সে, আদৌ কি পড়ে, নাকি এমনিতেই নাড়াচাড়া করে, কৌতূহলী চোখ চকচক করে ওঠে। রিক্সা ছেড়ে দেয়। এককাপ চা নিজের জন্য এবং আরেক কাপ শায়লার জন্য নিয়ে কাছে যায়। ডেরার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। শায়লা ভ্রুক্ষেপ করে না। হাসান মাসুদ লক্ষ্য করে, মাথার কাছে কিছু গল্পের বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। হাতে একটি বই নিয়ে সে উচ্চস্বরে পড়ছেণ্ড "They all broke the rules. They all crossed into forbidden territory. They all tampered with the laws that lay down who should be loved, and how. And how much"
প্রথমে অতিমাত্রায় বিস্মিত হয়। তারপর নিজেকে সামলে নেয় হাসান মাসুদ। এমনও হয়, হতে পারে? এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। ভাবনার আকাশ জুড়ে নক্ষত্র খেলা করে তার। উন্নয়ন সেক্টরে বিশ বছর চাকুরি করে জীবনের বৈচিত্র্য দেখেছে অনেক, দেখতে হয়েছে তাকে বারবার, সাক্ষী হয়েছে অনেক বিচিত্র ঘটনার। দেখেছে রাতের আঁধার কতোটা কালো হয়, অমাবস্যাকেও ছাপিয়ে যায় যে কালোর বীভৎস রূপ, দেখেছে পূর্ণিমা রাতে পৃথিবী কতোটা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়। শ্রাবণের জলরাশি ধুয়ে দেয় মনের গালিচা, শুদ্ধ হয়, পুণ্য হয় মানুষ। আবার কালবৈশাখী উড়িয়ে নেয় কারও শেষ ঠিকানা। ভালোবাসার দাবানলে পোড়ে কতো শত মানবতা, জ্ঞানী পণ্ডিত চামার মুচিও বাদ যায় না মোহের গ্রাস থেকে। হাজার দেখার ভীড়ে এক নতুনের সন্ধান মিলে আজ, দেখে পাগলীর হাতে ‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’, তাও ইংরেজি ভার্সনে লেখা। বরই তলার পাগলী পড়ছে উচ্চ মার্গীয় ইংরেজি বই, অনর্গল শুদ্ধ উচ্চারণে।
মানবতাবাদী লেখক অরুন্ধুতী রায়ের ‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’ ঊনিশ শ সাতানব্বই সালে ‘বুকার’ পুরস্কারে ভূষিত। জানতো সে। এরপর বইটি নিয়ে বিশ্ব সাহিত্যাঙ্গনে বয়ে যায় আলোচনার ঝড়। রাস্তায় যার জীবন জীবিকা, সেই পাগলী বা শায়লা পড়ছে এই বইটি। এ এক নতুন থেকে নতুনতর অভিজ্ঞতা তার জীবনে। মহাশ্মশানে যেনো আলোর মিছিল!
উন্নয়নকর্মী হিসেবে হাসান মাসুদ যতোটা সৃজনশীল তারচেয়ে ঢের বেশি সাহিত্যণ্ডসংস্কৃতির সেবক হিসেবে। নিজেকে নাট্য প্রেমী, সিনেমা প্রেমী হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে আজন্ম। গল্প উপন্যাসে বুঁদ হয়ে থাকে আজও। ‘শিল্পকলা আমাকে শিক্ষিত করেছে’ এই বাক্য বলেই বক্তৃতা শুরু করে পেশাদারী মঞ্চে। তার জীবনের একটিমাত্র বই, যেটির বাংলা ভার্সন পড়তে গিয়ে বারবার ইস্তফা দিয়েছে, বুঝতে পারেনি বলে। আজ সেই বইটির ইংরেজি ভার্সন পড়তে দেখলো বরই তলার পাগলীকে। নবম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় শেষের কবিতা বুঝেছে, আরেকটু পরে বুঝেছে বিষবৃক্ষ, দুর্গেশনন্দিনী। আজও বুঝা হয়নি তার ‘দ্য গড অফ স্মল থিংস’। মনস্থির করে, এবার তাহলে বুঝতেই হবে এই বিরল পাঠককে। মিটিংয়ে যাওয়ার তাড়া আছে। চলে যায় সে।
৩
পরেরদিন সকাল সাড়ে দশটা। উত্তর স্টেশন থেকে কালি বাজার রোডের একটু ভেতরে যেতেই, একটা একতলা বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় শায়লাকে। অফিসের কাজে এলাকা পরিদর্শনে বেরিয়েছে হাসান মাসুদ। হঠাৎ শায়লাকে নির্লিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা অবাক হয় সে। শায়লার ডেরা থেকে এই জায়গাটি বেশ খানিকটা দূরে। প্রায় পঞ্চাশ টাকা রিক্সাভাড়ার দূরত্বে কী করছে মেয়েটি? আগু পিছু না ভেবেই সিএনজি থেকে নেমে পড়ে সে। মানুষের এমনতর কৌতূহল না থাকলেও জীবন চলে যায় জীবনের মতো, কিন্তু কিছু মানুষের কৌতূহল নিবৃত্ত না হওয়া পর্যন্ত তা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকে। কৌতূহল কোনো আরোপিত বিষয় নয়, মনের গহীনেই তার জন্ম হয়, এর প্রকাশ ঘটে আপন গতিতে। হাসান মাসুদের এ ধরনের কৌতূহলী রোগ আছে আগে থেকেই, সাম্প্রতিক ভর করেছে শায়লাকে নিয়ে। শায়লার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সে।
কী করছেন এখানে?
কে যেনো আপনি? খুব মোলায়েম করে বলে শায়লা। অন্য কেউ হলে হয়তো খেপে যেতো। অবচেতন মস্তিষ্কেই ইতোমধ্যে হাসান মাসুদের প্রতি খানিকটা সদয় হয়ে উঠেছে শায়লা।
ঐযে গতকাল হাঁসের মাংস খাওয়াবেন বলেছিলেন। হেসে উত্তর দেয় হাসান মাসুদ।
ওহ আপনি হা হা হা। অট্ট হাসিতে ফেটে পড়ে শায়লা। বেশ গা দুলিয়ে হাসে। পড়ন্ত যৌবনের মেয়েটি, ময়লা মাখা শরীরে দীর্ঘসময় ধরে হাসতে থাকে। এই শহরের সকল মেয়েই হিজাব পরে অভ্যস্ত। প্রয়োজনে, জেনে বুঝে হোক বা অপ্রয়োজনে হোক, এটাই এখানকার সংস্কৃতি। এমন একটি অঞ্চলে, অচেনা একজন মেয়েমানুষকে খোলা শরীরে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে উচ্চ শব্দ করে হাসতে দেখে বিস্ময়ে তাকায় দোকানের লোকজন। হাসান মাসুদ আজ আর বিব্রতবোধ করে না। জায়গাটি তার অফিসের এলাকা থেকে বেশ খানিকটা দূরে বলেই হয়তো। এখানে কেউ তাকে চিনে না। রাস্তার পাশের অন্য একটি বাড়ির জানালা থেকেও কৌতূহলী নারীপুরুষকে উঁকিঝুঁকি মারতে দেখা যায়। শায়লার হাসি থামে। সে খুব ক্লান্ত, কাশতে থাকে, নিশ্বাস টেনে উঠাতে পারে না। শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, বুঝা যায়। তবু থেমে থেমে হাসান মাসুদের সাথে কথা বলে। অজান্তেই খানিকটা নির্ভরশীলতা তৈরি হয় হাসান মাসুদের প্রতি।
হাঁসের মাংসতো সব কুকুরে খেয়ে ফেলেছে। পোলাও, সর্ষে ইলিশ সব খেয়ে ফেলেছে। আবারও হাসে সে। এবার আর হাসির শব্দ হয় না। দু’চোখ ভিজে ওঠে। দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।
সে যাক গে, আপনি এখানে কী করছেন? চলুন আপনার ডেরায় পৌঁছে দেই। সপ্রতিভ হয়ে বলে হাসান মাসুদ।
না না সব কুকুরে খেয়ে ফেলেছে, আপনি কী খাবেন বলুনতো? কতো যত্ন করে রান্না করলাম, সব কুকুরে খেয়ে গেলো। বলতে বলতে হাহাকার করে কেঁদে ওঠে শায়লা।
আমাকে খাওয়াতে হবে না, আপনি চলুন আমার সাথে।
না না আমি যাবো না, ও তো বাড়ি থেকে বের হবে, এক্ষুণি বের হবে, বলতে বলতে খুব উৎসুক হয়ে ওঠে সে। ভেজা চোখে গেইট খোলা বাড়িটির ভেতরে তাকিয়ে থাকে নির্লিপ্তভাবে।
ও আসলে কে? আপনার কোনো আপনজন? জিজ্ঞেস করে হাসান মাসুদ।
হুম! মাথা নেড়ে সায় দেয়। এই স্বীকারোক্তির মাঝে এক ভিন্নতর অভিব্যক্তি ফুটে ওঠে তার চোখেমুখে। এ কি প্রেম, রাগ, ক্ষোভ নাকি অন্য কিছু! হাসান মাসুদের বিস্ময়কে আরেকটু নাড়িয়ে দেয় শায়লার জলভরা চোখ।
তাহলে ভেতরে চলুন। আমিও যাচ্ছি আপনার সাথে।
না না তা হবে না, ও আমাকে মেরে ফেলবে, বলেই দু’হাতে মুখ চেপে ধরে বসে পড়ে। ভয়, হতাশার জলছবি খেলা করে চোখেমুখে। হাসান মাসুদের বিস্ময় বাড়ে না এবার, ভীতি বাড়ে, শংকা বাড়ে। শায়লা আবার বলেণ্ড
আমিতো খুব খারাপ মানুষ! ওকে খুব বিরক্ত করি। ও বলেছে, আমি ওর ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছি। আবারও আগের মতো হেসে ওঠে। এ এক অদ্ভুত হাসি। হাসির শব্দে আকাশ পাতাল কেঁপে ওঠে যেনো, দু চোখ জ্বল জ্বল করে অজানা শংকায়। তারপর বুক ভাসিয়ে কাঁদে, সে কান্না শব্দহীন।
তাহলে চলুন আমার সাথে। হাসান মাসুদ বলে।
ওকে যে একবার দেখতেই হবে আমার! কতোদিন দেখিনি। একটু দাঁড়ান, একনজর দেখেই চলে যাবো।
বাড়ি থেকে একজন ভদ্রলোক বেরিয়ে আসে। সাথে তার হিজাব পরিহিত স্ত্রী আর মেয়ে। মেয়েটি সম্ভবত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। সে একটি রিক্সায় উঠে চলে যায়। বাবা মা হাত নেড়ে সম্ভাষণ জানায়। ভদ্রলোক একটি মোটরবাইকে স্টার্ট দিতে থাকলে অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা শায়লাকে দেখতে পায় তার স্ত্রী।
এই দেখো, দেখো, সেই পাগলীটা আজ আবার এসেছে। বলতেই ভদ্রলোক শায়লার দিকে তাকায়। শায়লা দৌড়ে কাছে আসে। সামনে দাঁড়িয়ে চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করেণ্ড
কেমন আছো?
ভদ্রলোকের স্ত্রী প্রচণ্ড রেগে যায়। শায়লাকে সরে যেতে বলে। সে ভ্রুক্ষেপ করে না। ভদ্রলোকের আরও কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে।
ভালো আছোতো? আজ দুপুরে সর্ষে ইলিশ রান্না করবো। আসবেতো? ভদ্রলোক এবার বিব্রতবোধ করে। ভদ্রলোকের স্ত্রী শায়লাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। হাসান মাসুদ দৌড়ে এসে ধরে ফেলে। মোটরবাইকের স্টার্ট বন্ধ করে ভদ্রলোক নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে।
উনি কি আপনার কোনো আত্মীয়? হাসান মাসুদ ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করে।
না না ওতো একটা পাগলী, আমরা ওকে চিনি না। স্ত্রী লোকটি উত্তর দেয়।
আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করেছি জনাব। হাসান মাসুদ ভদ্রলোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে।
আপনি কে? এতোক্ষণে ভদ্রলোক বিরক্ত হয়ে মুখ খুলে। আমি বিশেষ কেউ না। এ শহরে চাকুরি করি। উনি বলছিলেন, আপনাকে দেখার জন্যই এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।
ভদ্রলোক নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। মুখ খোলে তার স্ত্রী।
তা কেনো হবে? ওকে আমরা চিনি না। পাগলতো কতো কথাই বলে।
কিন্তু আপনার কথায় মনে হলো, উনি আরও একাধিকবার এখানে এসেছে।
তা এসেছে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমরা ওকে চিনি না।
আপনি চিনেন? আবারও ভদ্রলোকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করে হাসান মাসুদ। এরই মধ্যে আশেপাশের দুণ্ডএকজন লোক এসে জড়ো হয়েছে। বাকরুদ্ধ শায়লা, এলোমেলো শাড়ির আঁচল মাটিতে ছড়িয়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। ভদ্রলোক এবার বিব্রতবোধ করতে থাকে। পৌষ মাসের দ্বিপ্রহরেও কপালের ঘাম কপোল ছুঁয়ে যায় তার। স্ত্রী এবার রেগে গিয়ে বলেণ্ড
আচ্ছা তুমি বলে দিচ্ছো না কেনো, তুমি এই পাগলীকে চিনো না, যত্তসব।
আমিতো চিনিই না। সেটা এতো জোর দিয়ে বলার কী আছে? ভদ্রলোকের কণ্ঠ কাঁপে না, বিব্রতবোধও করে না এবার। তবে না বোধক শব্দগুলোর জোর খুব ক্ষীণ মনে হয়। সেই কমজোর, ক্ষীণ শব্দের অর্থ ভদ্রলোকের স্ত্রী না বুঝলেও হাসান মাসুদ বুঝে। দ্রুত মোটরবাইক স্টার্ট দিয়ে স্বামী স্ত্রী চলে যায়। শায়লা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে অনেক দূর পর্যন্ত। হাসান মাসুদ শায়লাকে নিয়ে একটা রিক্সায় চড়ে বসে।
কী নাম এই ভদ্রলাকের? হাসান মাসুদ জিজ্ঞেস করে।
আমার ছেলের নাম অভিক মাহমুদ।
আমি আপনার ছেলের নাম জিজ্ঞেস করিনি।
সেতো মরে গেছে, বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে শায়লা। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে হাসতে থাকে। রিক্সাটি নড়েচড়ে ওঠে, গতি থেমে যেতে চায়। রিক্সাওয়ালা নিজেই একটি নিরিবিলি জায়গায় থামিয়ে দেয়। হাউমাউ করে কাঁদে শায়লা।
আমি তাকে মেরে ফেলেছি, নিজের হাতে মেরে ফেলেছি। বলতে বলতে বুক চাপড়ে কাঁদতে থাকে। মফস্বলের এই নির্জনতায় এবার কিছুটা বিব্রত হয় হাসান মাসুদ। রিক্সাওয়ালাকে যেতে বলে। যেতে শুরু করে। শায়লা চিৎকার করে ওঠে।
না আমি যাবো না। আমার টাকা না নিয়ে আমি কোথাও যাবো না। ও আমার সব টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে।
কে নিয়ে গেছে? জিজ্ঞেস করে হাসান মাসুদ।
জানিনা তো। এবার খুব শান্ত হয়ে বলে শায়লা। তারপর একটু সাবলীল হয়ে রিক্সায় বসে।
আচ্ছা, ঐ ভদ্রলোকের নামটাতো বললেন না। খুব বিনয়ের সাথে বলে হাসান মাসুদ।
মাহাতাবকে আমি ভালোবাসি। রাস্তার একদিকে তাকিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে বলতে থাকে শায়লা। রিক্সা চলতে থাকে।
এখনও বাসেন? বুঝার চেষ্টা করে হাসান মাসুদ।
হুম, ভালোবাসার কি সময়কাল থাকে? যাকে ভালোবাসি তাকেতো চিরদিনের জন্যই আপন করে নিতে হয়, তাই না? এই প্রথমবার শায়লাকে খানিকটা স্বাভাবিক মনে হতে থাকে হাসান মাসুদের কাছে। এভাবেই জানা হয়, ঐ ভদ্রলোকের নাম মাহাতাব।
পনেরো বছর আগে আমি এ শহরেই চাকুরি করতাম। কলেজ শিক্ষক ছিলাম। ইকোনোমিকস পড়াতাম। অভিকের বয়স তখন তিন। অভিকের বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছিলো। সিঙ্গেল মাদারদের যেসকল এক্সক্লুসিভ বিষয় মেইনটেইন করতে হয়, আমি তাই করতাম। শায়লার কথা, আচরণ এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। অনেকটা ভাবগাম্ভীর্যের সাথে কথা বলছে সে।
তারপর? জিজ্ঞেস করে হাসান মাসুদ।
ঠিকাদারি ব্যবসা করতো মাহাতাব। কলেজের বিভিন্ন কাজের জন্য টেন্ডার কমিটির দায়িত্বে ছিলাম আমি। সে প্রায়শই কলেজে আসতো। তখনও সে বিয়ে করেনি।
তারপর আমার সব টাকা নিয়ে পালিয়ে গেলো, বলেই আবার অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। হারিয়ে যায় কলেজ শিক্ষকের ভাবগাম্ভীর্য।
কতো টাকা? হাসান মাসুদ প্রশ্ন করে।
লক্ষ লক্ষ টাকা, আমার ব্যাংকের সব টাকা। শায়লার হাসিকান্না চলতেই থাকে। আমার একাধিক ক্রেডিট কার্ডের টাকা তুলে দেই তার ব্যবসার জন্য।
এতো টাকা দিলেন কেনো তাকে?
দেইনিতো, চুরি করেছে। ঠাণ্ডা মাথায় ভালোবাসার অভিনয় করে চুরি করেছে। আচ্ছা আপনি কে? এতো কথা জিজ্ঞেস করছেন কেনো? খানিকটা এলোমেলোভাবে প্রশ্ন করে শায়লা। আবার অস্বাভাবিক হয়ে পড়ে সে।
আমি আপনার বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষী। আমাকে আপন ভাবতে পারেন।
না, আমার কোনো বন্ধু নেই, ঈশ্বরের মতো আপন করে ভালোবেসেছিলাম যাকে, সেইতো টাকা চুরি করেছে, প্রতারণা করেছে আমার সাথে। আপনারা সবাই চোর, সবাই চোর, বলতে বলতে কাঁদতে থাকে শায়লা। দুপুর হয়ে গেছে। হাসান মাসুদ শহরের একটা হোটেলের সামনে রিক্সা থামায়, ভাড়া মিটিয়ে হোটেলে ঢুকতে গেলে, অসংলগ্ন কথা বলে শায়লা।
ওতো চাইনিজ খেতে পছন্দ করে। আমি এ ধরনের হোটেলে ওকে খাওয়াতে পারবো না।
উনিতো নেই, আপনি আর আমি খাবো। আপনি চাইনিজ খাবেন? তাহলে চলুন, অন্য হোটেলে যাই।
না না আমি না। আমার কোনোদিনই ওগুলো খেতে ভালো লাগে না। ও পছন্দ করে বলেই আমি কষ্ট হলেও খাই। এরপর আর দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয় না। হোটেল থেকে বেরিয়ে শায়লাকে ডেরায় পৌঁছে দেয় হাসান মাসুদ। (চলবে)