রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

দ্রব্যমূল্য : সবই বাড়ছে, কমছে কী?

এস এম নাজের হোসাইন

দ্রব্যমূল্য : সবই বাড়ছে, কমছে কী?
অনলাইন ডেস্ক

করোনা লকডডাউন পরবর্তী সময় থেকে আমাদের ব্যবসায়ীরা পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, বিশেষ করে জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে দাম বাড়ানো শুরু করেন। এরপর আসলো ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক বাজারে যুদ্ধের কারণে সবগুলো নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির অজুহাত। এই অজুহাতে আরেক দফা দাম বাড়ানো শুরু হয়। সর্বশেষ পর্যায়ে ডলারের দামবৃদ্ধি এবং দেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে দাম আরেক দফা বাড়ানো শুরু করেন।

দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার প্রধান উপকরণ চালের বাজার দীর্ঘসময় ধরেই অস্থির। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আমদানির অনুমতি প্রদান, শুল্ক কমানো, ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকিসহ নানা উদ্যোগ নিলেও চালের বাজারের অস্থিরতা কমাতে পারেননি।

দরিদ্র ও সাধারণ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তায় বহুল ব্যবহৃত আরেক খাদ্যপণ্য আটার একই অবস্থা। অধিকন্তুও দুটি খাদ্যেপণ্যের দাম কোনোভাবেই কমছে না। বরং উল্টো বেড়েই চলেছে। ফলে প্রান্তিক ও সাধারণ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা ও জীবনজীবিকা নির্বাহ করা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। খাদ্য পণ্যের অস্থির মূল্য ঠেকাতে মানুষ কম খাচ্ছে। অনেকে একবেলা খেয়ে চলছে। যা পুষ্টিহীনতাসহ কর্মক্ষমতা হ্রাসের দীর্ঘমেয়াদি ফল হতে পারে।

আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেশকিছু দিন ধরেই নিম্নমুখী। ক্যাব থেকে দীর্ঘদিন ধরেই সয়াবিন তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি উত্থাপন করা হলেও নীতিনির্ধারকেরা আমলে নিতে কালবিলম্ব করছেন। পরে আমদানিকারক, রিফাইনারি ও মিলমালিকেরা এগিয়ে আসলেন, তারা নিজেরা দাম কমানোর ঘোষণা দেন। কিন্তু ঘোষিত দামে বাজারে ভোজ্যতেল সরবরাহ না করে তারা ভোক্তাদের সাথে নতুন প্রতারণার আশ্রয় নেন।

দাম ঘোষণার ৪ দিনের মাথায়ও সেই দামে বাজারে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার ঘোষণা আসার সঙ্গে সঙ্গে দেশের খুচরা ও পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যায়। তখন আবার বেশি দামের চালান বাংলাদেশের মাটিতে আসুক না আসুক। দাম কমাতে হলেই কমদামের চালান আসা দরকার হয়ে পড়ে।

সরকার নিত্যপণ্যের দায়ভার সবটুকু ব্যবসায়ীদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণে তারা তাদের ইচ্ছেমতো বাজারে পণ্য সরবরাহ ও নিয়ন্ত্রণ করছে। ভোজ্যতেলের দাম নিয়ে এই কারসাজির জন্য মিলমালিক ও আমদানিকারকেরা দায়ী। তাদের এই কারসাজি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তদন্তে বারবার ধরা পড়লেও তাদের আইনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে চাল নিয়েও একই কারবার।

সরকার শুল্ক কমালো, নিজেরা আমদানি করলো, বেসরকারিভাবে আমদানি হলো, কিন্তু বাজারে দাম কমানো যাচ্ছে না। চাল মিল মালিকদের উল্টো সুর বড় কর্পোরেট গ্রুপগুলো চাল মজুত করছে।

ক্যাব থেকে বারবার মিল পর্যায়ে ও আমদানির পর্যায়ের বাজার তদারকির দাবি করা হলেও নীতি নির্ধারকেরা কোনো উদ্যোগ নেননি। ফলস্বরূপ ভোক্তাদের হা-হুতাশ ছাড়া অন্যকোনো কাজ হয়নি।

ভোক্তা ও বাজার বিশ্লেষকদের মতে, চাল, আটা, সয়াবিন তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র এককভাবে আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য বৃদ্ধি দায়ী নয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী পরিস্থিতি পুঁজি করে অতি মুনাফা লাভের মনোবৃত্তির কারণে নিজেরা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে বাজার অস্থির করছেন।

সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে অতি মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ অজানা কারণে সম্ভব না হওয়ার কারণে নিত্যপণ্য নিয়ে এই অস্থিরতা প্রলম্বিত হচ্ছে মাসের পর মাস। আর চক্রাকারে সব খাদ্যপণ্যে এই অশুভ চর্চার সামাজিক সংক্রমণ ঘটেছে। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতাদের মাঝে হাপিত্যেশ থাকলেও সমাধানের পথে কেউ হাঁটছে না।

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে প্রতিবছর ভরা মৌসুমেও চালের দাম কমে যায়। কিন্তু এবার তার উল্টো অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এই পরিস্থিতি আগে দেখা যায়নি। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি শুল্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনেন।

জিটুজি ভিত্তিতেও চাল ও গম আমদানির উদ্যোগ নেয়। যার কারণে সরকারের খাদ্যশস্য মজুত যথেষ্ট। খোলা বাজারে খাদ্য বিভাগের ওএমএস চালু করা হয়। টিসিবির অধীনে ফ্যামিলি খাদ্য-পণ্য বিক্রিও জোরদার করা হয়।

বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন সংস্থার তদারকি জোরদার করা হয়। তারপরও এসব উদ্যোগের প্রভাব বাজারে খুব বেশি পড়েনি। চাল ও আটা-ময়দার দাম এখনো চড়া। এদিকে সরকার বেসরকারিভাবে চাল মিল মালিকদের ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বেসরকারিভাবে মাত্র চলতি অর্থবছরের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবেও বাজারে নিত্যপণ্যের অস্থিরতার প্রমাণ পাওয়া যায়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। তবে এই দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে।

ভোজ্যতেল নিয়েও ক্রেতার ভোগান্তির অন্ত নেই। ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে তিনদিন পার হলেও কম দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে মিলেনি। আগের বাড়তি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আমদানি, উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভোজ্যতেলের ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আরও তিন মাস বাড়িয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলে ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

তবে সরকার খাদ্য বিভাগের আওতায় খোলা বাজারে চাল বিক্রি বাড়িয়েছেন। ভোক্তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন ক্যাব থেকে এই কার্যক্রম বাড়ানোর দাবি করা হয়েছিল।

খাদ্য বিভাগের ওএমএস-এর চালের লাইনে মধ্যবিত্তসহ সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কোন্ পর্যায়ে আছে। তবে টিসিবির মাধ্যমে বর্তমান চলমান ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় চাল, আলু ও দেশি পেঁয়াজ বিক্রির ব্যবস্থা করা গেলে কৃষক ও ভোক্তারা অনেক বেশি উপকৃত হতেন।

একই সাথে টিসিবির আওতায় বিক্রি হওয়া খাদ্য পণ্য সংগ্রহে স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করার নীতির পরিবর্তে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে সরকার টু সরকার পর্যায়ে সংগ্রহ করার নীতি চালু করা দরকার।

একই সাথে সরকার জেলা প্রশাসন, খাদ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদার, উৎস স্থল, মিল মালিক ও উৎপাদক পর্যায়ে বাজার তদারকি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাজারসংক্রান্ত নীতিনির্ধারণে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভোক্তাদের সমঅংশগ্রহণ ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই ভোক্তাদের এই দুশ্চিন্তার ভাঁজ কিছুটা হলেও কমবে।

এস এম নাজের হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

সূত্র : ঢাকা পোস্ট।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়