প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০
অশুভ ঝাড়ু
মোহাম্মদ তাইয়্যেব হোসাইন
সপ্তম শ্রেণিতে পড়া ছাত্র আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাইফসহ আমরা একসঙ্গে মেছে থাকি। একদম গ্রামগঞ্জে বেড়ে উঠেছে পড়াশুনা করার উদ্দেশ্যে শহরে আসছে মাত্র কয়েক দিন হলো। তার বিশ্বাসের মাত্রা অনেক উপরে। তার একটা বিশ্বাসের কথা বলি। সেদিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা করে স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হলো রুম থেকে। পাঁচ তলা বিল্ডিংয়ের চার তলায় আমরা থাকি দুই তলায় বাড়িওয়ালা থাকেন। সিড়ি দিয়ে নামার সময় দুই তলা বাড়িওয়ালা দরজার সামনে ঝাড়ু দেখে সে আতঙ্কিত হয়ে উঠে। কথাও যাওয়ার সময় ঝাড়ু দেখলে অশুভ অমঙ্গল হয় এটা তার দাদুর মুখ থেকে অনেক বার শুনছে এবং মনে প্রাণে বিশ্বাস করে। বাড়িওয়ালা বাসার কাজের লোক সিড়ি ঝাড়ু দিয়ে প্রায় সময় দরজার সামনে ঝাড়ু রেখে যান। আর ওদিন কাইয়ুম ঝাড়ু দেখে কোনো না কোনো বিপদের সম্মুখীন হতে হয় । আজকের দিন তার অনেক খারাপ যাবে সে নিশ্চিত হয়ে গেল আজকে স্কুলে বা রাস্তায় যেকোন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। মানসিকভাবে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পরলো। অনেক চিন্তা ভাবনা করে স্কুলের দিকে রওনা দিল সতর্কতার সাথে রাস্তা পার হলো। ক্লাসে উপস্থিত হলো মনজোগ দিয়ে ক্লাস করতেছে। স্যার পড়ার মাঝেমধ্যে মোটিভেশনাল কথাও বলেন শুনতে ভালো লাগে, চোখে ঘুম ঘুম ভাব এক পর্যায় বেঞ্চে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পরল সাইফ। স্যারের দৃষ্টি সাইফের দিকে গেল স্যার ক্ষিপ্ত গলায় সাইফ বলে ডাক দিলেন চমকে দাড়িয়ে গেল সাইফ। স্যার সাইফকে কানে ধরিয়ে দাড়িয়ে থাকতে বললেন। স্যার প্রায় পাঁচ সাত মিনিট পরে বসতে বলেন, লজ্জায় চোখ থেকে এতক্ষণে ঘুম চলে গেছে। স্কুল ছুটি হলো মন ভীষণ খারাপ স্যার এমন শাস্তি না দিলেও পারতেন বকা দিলেই হয়ে যেতো এসব ভেবে বাসায় চলে আসল। খাওয়া দাওয়া সেরে নিশ্চুপ বসে আছে এই ঝাড়ুর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে চিন্তা করতে লাগল। বাড়িওয়ালার কাছে গিয়ে এটা বলার সাহস নাই বাড়িওয়ালা অনেক বড় অফিসার সাথে সবসময় দুই তিনজন থাকে। সম্পূর্ণ বাসা সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে।
|আরো খবর
এদিকে সাত-সকাল ঝাড়ু দেখে বিপদে পরে একদম অতিষ্ঠ হয়ে গেল সাইফ । আজকে কিছু একটা করতেই হবে। যা ভাবনা তাই কাজ অনেকক্ষণ মাথা খাটিয়ে বুদ্ধি বের করলো বিদ্যুৎ চলে গেলে ঝাড়ু নিয়ে আসবে। অপেক্ষা সন্ধ্যার পরে বিদ্যুৎ চলে গেল মহা আনন্দ আজকে বিপদের অবসান ঘটবে। বিদ্যুৎ না থাকলে সিসি ক্যামেরা বন্ধ থাকবে। বীর পুরুষের মতো রুম থেকে বের হয়ে বাড়িওয়ালার দরজার সামনে থেকে ঝাড়ু নিয়ে তৃতীয় তলায় আসা মাত্রই বিদ্যুৎ চলে আসছে। চতুর্থ এবং দ্বিতীয় তলায় সিসি ক্যমেরা আছে ভাগ্য ভালো তৃতীয় তলা সিসি ক্যমেরা নাই । এতো এক মহা বিপদ, উপরে যাওয়া যাবে না নিচেও নামা যাবে না। এখন কি হবে বাসার অন্যান্যরা দেখলে তো মনে করবে ঝাড়ু চুরি করেছি। একটু চোখ বন্ধ করে চিন্তাভাবনা করার পর একটা বুদ্ধি মাথায় আসল। সিড়ি ঝাড়ু দিতে হবে বাড়িওয়ালা বাসার কাজের লোক যে কাজ করতো সে কাজ এখন সাইফের করতে হবে। এই সুযোগে ঝাড়ু রেখে আসা সম্ভব এবং কেউ দেখলে অন্য কিছু মনে করবে না বরং প্রশংসাও করবে। মন দিয়ে সিড়ি ঝাড়ু দিতে শুরু করল। নিচ থেকে উপরে উঠে আসেন বাড়িওয়ালা সাইফের ঝাড়ু দেওয়া দেখে উনি অবাক হয়ে যান মৃদু কন্ঠে বাবা তুমি কেন সিড়ি ঝাড়ু দেও। সাইফ জবাবে বলে আঙ্কেল সিড়িতে বেশ বালু জমে গেছে কাজের লোক তো প্রতিনিয়ত সকালে একদম সম্পূর্ণ সিড়ি ঝাড়ু দেয় উনার তো অনেক কষ্ট হয় তাই আগামীকাল যাতে উনার ঝাড়ু দিতে না হয় তাই আমি একটু সিড়ি ঝাড়ু দিলাম। কাজের লোকের প্রতি সাইফের সহানুভূতি দেখে বাড়িওয়ালা আবেগ আপ্লুত হয়ে গেল।