শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮:৫২

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার জন্মদিন

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার জন্মদিন
অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠা কন্যা শেখ রেহানা ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একমাত্র বোন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। একজন প্রচারবিমুখ মানুষ তিনি, যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় ভরসার জায়গা, তার প্রেরণার উৎস আর সংকটে সাহসের ভান্ডার হিসেবে পাশে থাকেন। সরাসরি রাজনীতিতে দেখা যায় না শেখ রেহানাকে তবে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কাছে ‘ছোট আপা’ হিসেবে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধু যেমন সারাজীবন শুধু মানুষের কথা চিন্তা করেছেন, তাদের মুক্তির গান গেয়েছেন, তেমনি এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধুর সেই অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে এদেশের মানুষের জন্য কাজ করছেন তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা। একজন কাজ করছেন জীবন বাজি রেখে পর্দার সামনে, অপরজন পর্দার অন্তরালে বোনকে সাহস যুগিয়ে, উৎসাহ দিয়ে চলেছেন।

বাবা রাষ্ট্রপ্রধান কিন্তু তাঁর ছোট মেয়েকে দেখে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। বাবার পতাকাবাহী গাড়িতে কখনো স্কুলে আসেনি। মেয়ের মেট্রিক পরীক্ষা। পরীক্ষা কেন্দ্র ধানমন্ডির বয়েজ স্কুলে। বাবা বললেন আমার অফিসে যাওয়ার পথেই পরীক্ষা কেন্দ্র, তোকে আমি নামিয়ে দেবো। মেয়ে নারাজ। সে বাবার গাড়িতে করে পরীক্ষা দিতে গেলো না। সে বছর মেট্রিক পরীক্ষায় অষ্টম হলো মেয়েটি। এভাবেই ছোটকাল থেকেই ঠিক যেনো মা ফজিলাতুন্নেছা রেনু’র আদলে গড়ে উঠতে থাকেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা। যার প্রভাব আজও বিদ্যমান তাঁর জীবনে।

শেখ রেহানার আশা ছিল ইন্টারমিডিয়েটে ভালো করার। ভাগ্য যেনো সইলো না। ১৫ আগস্টের কালরাতে রাজনীতির ইতিহাসের জঘন্যতম নৃশংসতার শিকার হয়ে হারালেন বাবা-মাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে। বড় বোন শেখ হাসিনার সাথে বিদেশে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। পরবর্তীতে আর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার।

১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার বিশ্বাসঘাতক নরপশু একদল উচ্ছৃঙ্খল সেনাসদস্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার-পরিজন. নিকটাত্মীয় সকলকে হারিয়ে বাংলার জনগণ অভিভাবকহীন, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর মোস্তাক-জিয়ার অত্যাচারী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে জেল-জুলুম, হত্যা-নির্যাতনের শিকার হতে থাকে তারা। ভাগ্যক্রমে মহান আল্লাহর রহমতে সেই সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা আজকের বাংলাদেশের জনগণের নয়নমণি, জীবন-মান রক্ষার একনিষ্ঠ সেবক জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা প্রবাসে ছিলেন বলে বাঙালি জাতি আজ তাঁদের সেবায় ধন্য।

তখন তিনি বড় বোন শেখ হাসিনাকে সাথে নিয়ে জার্মানি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এই ঘটনার পর তিনি যুক্তরাজ্যে 'রাজনৈতিক আশ্রয়' প্রার্থনা করেন। ব্রিটিশ সরকার তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন ও সেখানেই অদ্যাবধি অবস্থান করছেন শেখ রেহানা। মাঝে মাঝে বাংলাদেশে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করেন।

২০০১ সালে তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকার কর্তৃক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাকে ঢাকার ধানমন্ডির ৬ নম্বর রোডের ২১ নম্বর বাড়িটি সরকারীভাবে বরাদ্দ দেয়া হয় এবং তিনি তা নগদ মূল্যে ক্রয় করেন। পরবর্তীতে ২০০৫ সালে খালেদা জিয়া'র নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তার বাড়ীর অধিকার কেড়ে নিয়ে সেখানে ধানমন্ডি থানা হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করেন। ফলে বাড়ির অধিকার ফিরে পাবার জন্যে ২০০৬ সালের ২৪ জানুয়ারি তিনি আইনি লড়াইয়ে নামেন। কিন্তু উৎসর্গ করার মানসিকতা থেকে তিনি আর রীট পরিচালনা করতে চান না বা বাড়িটি ফেরত পেতে চান না বলে ৮ আগস্ট, ২০১১ তারিখের আবেদনে উল্লেখ করেন।

২০০৭-২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমদের জরুরী অবস্থা চলাকালীন সময়ে শেখ হাসিনা গৃহবন্দী হন। ঐ সময় শেখ রেহানা তার সহোদরা বড় বোন শেখ হাসিনা'র পক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হাল ধরেন। ২০০৮ সালের বাংলাদেশের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। তারপর শেখ রেহানা বাংলাদেশ ত্যাগ করেন এবং তার বোনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে গুরুত্বপূর্ণ কাজে পরামর্শ প্রদান ও সহযোগিতা করতে থাকেন।

শেখ রেহানা এতোটাই অভাগা যে অল্প বয়সেই মা-বাবাকে হারিয়েছেন তিনি। বড় বোনের সঙ্গে বিদেশে থাকায় সেদিন বেঁচে যান শেখ রেহানা। ৭৫’এর কালো অধ্যায়ের পর জীবন সংগ্রাম কাকে বলে তা উপলব্ধি করেছেন। জয়ীও হয়েছেন নিজের জীবন সংগ্রামে। দুই বোনই সংগ্রাম করেছেন জীবনের সঙ্গে। এতোটাই সংগ্রামী ছিলো তাদের জীবন, যে ছোট বোন শেখ রেহানার বিয়েতে দিল্লী থেকে লন্ডন যেতে পারেননি শেখ হাসিনা শুধু টাকার অভাবে। বিমানের টিকিট কেনার অর্থ তার ছিল না।

শেখ রেহানা ব্যক্তিগত জীবনে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মজীবী হিসেবে জীবন কাটান । শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। তিনি তিনজন গর্বিত সন্তানের জননী । ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। দুই কন্যা টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক। তন্মধ্যে, টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনের ক্যামডেন কাউন্সিলের লেবার পার্টির পক্ষ নিয়ে কাউন্সিলর ও পরবর্তীতে এমপি নির্বাচিত হন। টিউলিপ সিদ্দিক ইতোমধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে একজন গুরুত্বপূর্ণ এমপি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি একজন গবেষক এবং চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রুপন্তী মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে এর মধ্যেই পাশ্চাত্যে সাড়া ফেলেছেন।

শেখ রেহানা এই অভিধায় আজ দেশবাসী ও বিশ্ব বাঙালির কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যার স্থানে আসীন আছেন। আমি তাঁর শতায়ু কামনা করি । দেশবাসীর জন্য তাঁর দোয়া প্রার্থনা করি। কায়মানোবাক্যে আশা করি তিনি সুস্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের ও জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে থাকবেন ।

তিনি বাঙালি নারীদের আদর্শ। কিভাবে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া যায়, ক্ষমতার লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়, কোন পদে না থেকেও দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করা যায়, সেটা তিনি দেখিয়েছেন। তাঁর এই নির্মোহ চরিত্রই বাংলাদেশের ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে। সেই প্রচারবিমুখ মহিয়সী নারী শেখ রেহানার ( আমাদের প্রাণপ্রিয় ছোটো আপা) ৬৮তম শুভ জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও আন্তরিক ভালোবাসা জানাই।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন । জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় শেখ হাসিনা, জয় শেখ রেহানা।

লেখক পরিচিতি :

মোঃ নূর ইসলাম খান অসি

পরিচালক- ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ।

সভাপতি- বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়