প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০১:১১
এক ভাই দুনিয়া ছাড়লো আরেক দুনিয়ায় আসলো
ঘড়ির কাটায় ভোর রাত পৌনে ৫ টা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করছে ৭ বছরে শিশু আল নোমান। কাকতালীয়ভাবে একই সময় তারই গর্ভধারিনী মা মর্জিনা বেগম প্রসব বেদনায় ছটফট করছেন হাজীগঞ্জ বাজারের একটি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে। ঘড়ির কাটায় ভোর রাত ৫ টা ছুঁইছঁই। ঢাকা মেডিকল কলেজ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে দুনিয়া ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমান নোমান। একই সময় মা মর্জিনা বেগম হাজীগঞ্জের সেই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। দূর্ভাগ্য এক মা আর এক সন্তানের। আল নোমান যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বাভাবিকভাবে তার মা তার পাশে হাসপাতালে থাকার কথা কিংবা সিজারের জন্য যখন নোমানের মা হাসপাতালে ভর্তি হন তখন মায়ের পাশে নোমানকে থাকার কথা । মা ছেলের সম্পর্ককে চিরতরে দুরে ঠেলে দিয়েছে একটি সড়ক দুর্ঘটনা।
|আরো খবর
আল নোমান মাদ্রাসা ছাত্র। গত মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে নোমান নানার বাড়ি থেকে খালা হীরার সাথে আরেক খালা পান্নার বাড়ি যাচ্ছিলো। নানা বাড়ি থেকে দুই মিনিটের দুরত্বে চাঁদপুর কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের বাকিলা বাজার। খালার সাথে সড়কের পাশে এসে দ্বাড়াতেই চাঁদপুর থেকে চাউল বহনকারী এক ঘাতক ট্রাক নোমাকে চাপা দেয়। ট্রাকটি নোমানের কোমর থেকে রান পর্যন্ত পিষে ফেলে সড়কের উপর। সাথে সাথে স্থানীয়রা নোমানকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। রক্তক্ষরন বন্ধ না হওয়ায় ঢামেকে নোমানের প্রথম অপারেশন, বুধবার দ্বিতীয় অপারেশন ও বৃহস্পতিবার রাতে ৩ য় অপারেশন করা হয় নোমানকে। কিন্তু সকল চিকিৎসা ব্যবস্থাকে আঙ্গুল দেখিয়ে মা বাবাসহ দুনিয়ার মায়া ছেড়ে রাব্বুল আলামিনের ডাকে সাড়া দিয়ে ইহকাল ছাড়েন নোমান।
এদিকে নোমানের বাবা প্রবাসী হওয়ার কারনে নোমান মৃত্যু কালে বাবা- মা কাউকে দেখতে পারেনি। এ দিকে সিজারে ২য় সন্তানের মা হলে ও বড় সন্তান মারা যাওয়ার বিষয়টি মা মর্জিনা বেগমকে জানানো হয়নি পরিবার থেকে। এ দিকে সন্তানের মৃত্যুর খরব পেয়ে শুক্রবার সকালে কুয়েত থেকে ঢাকা পোঁছেন বাবা শহীদুল শহীদুল ইসলাম। ঢাকা এসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে একমাত্র সন্তানের লাশ বুঝে লাশবাহী এ্যাম্বুলেন্স যোগে ঢাকা ছাড়েন শহীদুল। এক দিকে বড় সন্তানের লাশ কাঁধে আরেক দিকে স্ত্রী সিজার অপারেশনের ক্ষত নিয়ে হাসপাতালে। এ এক অগ্নি পরীক্ষা শহীদুলের জন্য। লাশ নিয়ে প্রথম শ্বশুড় বাড়ি বাকিলায় আসেন। নোমানের লাশ নানার বাড়িতে পৌঁছার আগেই শতশত নারী পুরুষ নোমানের লাশ দেখতে ভিড় জমায়। কাকতালীয়ভাবে শুক্রবার বিকেল প্রায় ৫ টায় নোমানকে নিয়ে এ্যাম্বলেন্স নানার বাড়ির সামনে পৌঁছলে এক হৃদয় বিদারক ঘটনা। এ সময় আত্বীয়-স্বজনসহ শত শত নারী পুরুষকে কাঁদতে দেখা গেছে নোমানের জন্য। সব কিছুর জন্য সেই সড়ক দুর্ঘটনাটি দায়ী বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আল নোমান হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের বেলঘর গাজি বাড়ির প্রবাসী শহীদুল ইসলাম ও একই উপজেলার বাকিলা ইউনিয়নের বাকিলা পাটোয়ারী বাড়ি ওরফে লোধ বাড়ির সন্তান। শুক্রবার বাদ মাগরিব জানাজা শেষে বেলঘর পৈত্রিক বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে নোমানকে দাফন করা হয়েছে।