প্রকাশ : ২২ জুন ২০২১, ০০:০৯
উত্তর সাইপ্রাসে বাংলাদেশি এক দম্পতির বিশেষ অর্জন
উত্তর সাইপ্রাস ইউরোপের ভূমধ্যসাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ। জানা গেছে, ১৯৭৪ সালে গ্রীক সাইপ্রাস থেকে তুরস্ক এ অংশটি কেড়ে নেয়। তবে এটি একটি সম্পূর্ণ আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র হলেও আন্তর্জাতিকভাবে কোন দেশের কাছে এখনও স্বীকৃতি পায়নি। ৩ হাজার ৯০০ বর্গ কিলোমিটারের দেশটিতে মাত্র ৩ লাখ মানুষের বসবাস। তুর্কী সরকার শাসিত নর্থ সাইপ্রাস এখনো বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির কাছে তেমন একটা পরিচিতি লাভ করতে পারেনি। বাংলাদেশের মানুষও এ দেশটি সম্পর্কে তেমন একটা অবগত নয়। কিন্তু কথায় আছে খুঁজলে মাটির নিচেও বাঙালী পাওয়া যাবে। বাঙালী নেই বিশ্বের এমন দেশ পাওয়া কঠিন। তেমনি উত্তর সাইপ্রাসের মত একটি ছোট্ট দেশেও প্রায় তিন হাজার বাংলাদেশির বসবাস এটা হয়তো বাংলাদেশ সরকারেরও অজানা। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি এখানে আসে। তারমধ্যে অর্ধেক আসে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায়, বাকিরা স্টুডেন্ট ভিসায়। এ দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে প্রতি বছর অসংখ্য স্টুডেন্ট আনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে। এদেশের বেশকটি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করেছে।
|আরো খবর
বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়ালেখার মান অত্যন্ত ভাল এবং আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশিরা এ দেশের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। তারা পড়ালেখার জন্য গেলেও ৬ মাস এক বছর পর কেউ আর স্টাডি কন্টিনিউ করেনা। বেশিরভাগই পাশ্ববর্তী দেশ গ্রীক সাইপ্রাসে চলে যায় আবার অনেকেই ওয়ার্ক পারমিটে চলে আসে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বাংলাদেশি স্টুডেন্টদের একটা সুনাম থাকলেও সেটা প্রায় ক্ষুন্ন হবার পথে। ব্যাচেলর শেষ করেছে এমন বাংলাদেশির সংখ্যা হাতেগোনার মতই৷ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছে মাত্র দুইজন।
ঠিক এমন সময়ে সালেহ আহমেদ এবং শাহিনুর আক্তার দম্পতি নর্থ সাইপ্রাসে এক অনন্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তারা দুজন একসাথে গিরনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে সম্মাননার সাথে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ১৮ই জুন ইউনিভার্সিটি থেকে তাদেরকে সম্মাননা জানানো হয়। নর্থ সাইপ্রাসের ইতিহাসে এই প্রথম কোন বাংলাদেশি দম্পতি একসাথে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেছেন। উত্তর সাইপ্রাসে যেখানে প্রায় সকলের কাছে পড়াশোনা চালিয়ে নেয়া ছিল অসম্ভব সালেহ আহমদ সেই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন। ২০০৯ সালে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন নর্থ সাইপ্রাসে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে ব্যাচেলর পড়াশোনা করার সময় তিনি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করে পড়াশোনার খরচ সংগ্রহ করতেন।
পাশাপাশি বাড়িতেও টাকা পাঠাতেন। পড়াশোনা চালিয়ে নেয়াটা ছিল খুবই কষ্টদায়ক। তবে তিনি থেমে যাওয়ার ব্যক্তি নন। অবশেষে সফলতার দেখা পায় তিনি ২০১৪ সালে। ব্যাচেলর শেষ করার পর তিনি সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন এবং সেখানে পড়াশোনা করা অবস্থায় এডমিশন রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এডমিশন অফিসে যুক্ত হন। তিনি ২০১৮ সালে সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যয়ন শেষ করে গিরনে আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো করার ফলে তিনি সেখানে রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। রোহিঙ্গা রিফিউজি ক্রাইসিস নিয়ে মাস্টার্স থিসিস লিখেন। থিসিসে তিনি রোহিঙ্গাদের ব্যপারে বাংলাদেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের প্রভাব তুলে ধরেন। শাহিনুর আক্তার ২০১৯ সালে নর্থ সাইপ্রাসে পাড়ি জমান। তিনি শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে ব্যাচেলর শেষ করে নর্থ সাইপ্রাসে আসেন। তিনি সর্বোচ্চ সম্মান (একাডেমিক হাই অনার) নিয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন। শাহিনুর রহমান শরীয়ত পুরের আব্দুর রহমান এবং হাসিনা বেগমের প্রথম কন্যা।